হত্যার পর শরীর থেকে গোশত খুলে নেয় খুনিরা!
০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে চারজন তার হাত-পা চেপে ধরে। একজন গলায় ছুরি চালায়। শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর শরীর থেকে গোশত আলাদা করা হয়। এরপর গোশত এবং হাড়গোড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় পাহাড়-জঙ্গলে। চট্টগ্রামের রাউজানের চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যা মিশনে সরাসরি জড়িত আরো দুইজনকে গ্রেফতারের পর গতকাল রোববার এলিট বাহিনী র্যাবের কর্মকর্তারা এমন তথ্য জানান।
কিলিং স্কোয়াডের ওই দুই সদস্য হলো- মূল হত্যাকারী উচিংথোয়াই মারমা (২৩) ও তার সহযোগি ক্যাসাই অং চৌধুরী (৩৬)। র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম চান্দগাঁও ক্যা¤েপ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খুনের শিকার কলেজ ছাত্র শিবলি সাদিক হৃদয় পড়া লেখার পাশাপাশি একটি মুরগির খামারে ম্যানেজারের চাকরি করত। অপহরণ ও হত্যায় জড়িত পাঁচ যুবক রাউজানের ওই একই মুরগির খামারে চাকরি করতেন। কর্মস্থলে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে পাঁচ সহকর্মীর পরিকল্পনায় অপহরণ করে পাহাড়ের একটি অপরাধী চক্রকে দিয়ে খুন করে। এরপর লাশ গুম করতে গোশত ও হাড়গোড় আলাদা করে পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখে।
গত ২৮ আগস্ট রাতে রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রাম থেকে অপহরণের শিকার হয় হৃদয়। কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সে। পড়ালেখার পাশাপাশি একই গ্রামের সিকদার পাড়ায় মুরগির খামারে চাকরি করত। অপহরণের ১৪ দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বালুখালী পাহাড় থেকে মাটি খনন করে শিবলীর কঙ্কাল উদ্ধার করে রাউজান থানা পুলিশ। এর আগের রাতে পুলিশ নগরীর চান্দগাঁও থেকে ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন- রাঙ্গামাটি জেলার উমং চিং মারমা (২৬), সুইংচিং মং মারমা (২৪), অংথইমং মারমা (২৫), আছুমং মারমা (২৬) এবং উক্য থোয়াইং মারমা (১৯)। তাদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে শিবলীর কঙ্কাল উদ্ধার করে গ্রামে ফেরার পর রাউজানে উত্তেজিত জনতা পুলিশের কাছ থেকে উমং চিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। গ্রেফতার সুইচিং মং মারমা ও অংথুইমং মারমা আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এরপর শনিবার রাতে র্যাবের একটি দল নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও কর্ণফুলী সেতু এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে। র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, দুই আসামির জবানবন্দিতে উচিংথোয়াই ও ক্যাসাইয়ের নাম এসেছে। দুই আসামির জবানবন্দি এবং সর্বশেষ গ্রেফতার দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হৃদয়কে অপহরণের পর হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনার পাশাপাশি নেপথ্যের রহস্যও উদঘাটন হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার উচিংথোয়াই মারমা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হৃদয়কে অপহরণের একদিন পর ২৯ আগস্ট বিকালে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে হত্যা করা হয়। উচিংথোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরেন। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল শুধুমাত্র যারা খামারে কাজ করতো। এর মধ্যে উমংচিং মারমা এবং অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে। উচিংথোয়াই মারমা এবং তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনে। তাদেরকে দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।
হৃদয়কে হত্যার পর উচিংথোয়াই মারমার মোবাইল থেকে হৃদয়ের বাবা-মাকে ২৯ আগস্ট ফোন করে মুক্তিপণের টাকা বান্দরবানে নিয়ে আসতে বলে। ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে গিয়ে হৃদয়ের পরিবার মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা দিয়ে আসে। এর মধ্যে উচিংথোয়াই মারমা নিজেই দেড় লাখ টাকা রেখে দেয়। বাকিদের ৫০ হাজার টাকা দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, হৃদয়কে হত্যার পর গোশত খেয়ে ফেলেছে এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা জানে না। তবে শরীরের গোশত আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটি সত্য। তবে গোশত খাওয়ার বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের সিকদার পাড়ায় একই মালিকের দুটি মুরগির খামারের ব্যবস্থাপক ছিলেন হৃদয়। খামারে কর্মচারী ছিলেন গণপিটুনিতে নিহত উমং চিং মারমাসহ পাঁচজন। মুরগিকে খাবার কম দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে হৃদয়ের সঙ্গে তাদের বিরোধ তৈরি হয়। কয়েকদফা ঝগড়ায়ও জড়ান তারা। খামারের মালিক তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দেন। কিন্তু পাঁচ কর্মচারী হৃদয়কে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। খামারে চাকরি না করলেও বিভিন্নসময় তাদের কাছে আসতেন উচিংথোয়াই। সে পাহাড়ে অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। কর্মচারীরা তাকে বিষয়টি জানালে উচিংথোয়াই শিবলীকে তুলে নিয়ে খুনের কথা বলেন। সে অনুযায়ী, ২৮ আগস্ট শিবলীকে পাঁচ কর্মচারী মিলে জোরপূর্বক একটি অটোরিকশায় তুলে মুখে গামছা বেঁধে পাশের উপজেলার রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ে একটি সেগুন বাগানে নিয়ে জিম্মি করে রাখে।
এরপর তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। হত্যা করার জন্য উচিংথোয়াই মারমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। উচিংথোয়াই নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে গলাকেটে হৃদয়ের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে। উচিংথোয়াই মূলত গোশত কেটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখার নৃশংস সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সে অনুযায়ী, তারা লাশের শরীর থেকে গোশত কেটে আলাদা করে ফেলে দেয় এবং হাড়গোড় আরও কয়েকটি পাহাড়ের পর আরেকটি গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে চলে আসে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম