পেঁয়াজের ‘সেঞ্চুরি’ সিমের ‘ডাবল’ মরিচের ‘ট্রিপল’
০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম
বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা চলছে। ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা। এ খেলায় কোনো ব্যাটসম্যান একশ রান করলে হলা হয় ‘সেঞ্চুরি’। আর কোনো বোলার পর পর তিন বলে তিনজন ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পারলে বলা হয় হ্যাট্রিক। কোনো খেলোয়ার সেঞ্চুরি করলে এবং কোনো খেলোয়ার হ্যাট্রিক করলে সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের উত্তাপ ছড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে দামে পেঁয়াজ ‘সেঞ্চুরি’, মরিচ ‘ট্রিপল’ করেছে। ডবল সেঞ্চুরি করেছে কেজিতে সিমের দাম। রসুঁই ঘরে তরকারির অতি প্রয়োজনীয় এই পণদুটি ভোক্তাদের মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে। চড়া দামে এসব নিত্যপণ্য ক্রয়ে নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের ত্রাহি অবস্থা। সংসারের নিত্যপণ্য কিনতে হাজার হাজার পরিবারের কর্তারা নিদারুণ দুর্দশায় পড়েছেন। গতকাল রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে কেজিতে পেঁয়াজের ‘সেঞ্চুরি’ মরিচের ‘হ্যাট্রিক’। প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি। অথচ গতকালও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রংপুরে বলেছেন, সবকিছু ঠিকভাবে চলছে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিন সপ্তাহ আগে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার, তবে সেটি আটকে আছে ঘোষণাতেই। কেউ মানছে না সরকারের বেঁধে দেয়া দাম।
গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে আলুর কেজি রয়ে গেছে ৫০ টাকাতেই। যদিও তিন সপ্তাহ আগে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেটি কেবল ঘোষণাতেই আটকে আছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকার কয়েকটি কাঁচাবাজারে ওই বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে পেঁয়াজ ৩৫ টাকা ও আলু ১৪ টাকা বেশিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। আর বাজারভেদে কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।
চড়া মূল্যের বাজারে একটু কমে বাজার করতে যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজারে এসেছিলেন শনির আখড়ার মিজানুর রহমান; তবে বাজার ঘুরে হতাশাই প্রকাশ করলেন তিনি। বললেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়েছে। বাড়তি দাম আরও চড়েছে। জিনিসপত্রের দাম আর কবে কমবে? পেঁয়াজ আলু কোনোটার দামই তো সরকার কমাতে পারল না। উল্টো আরো বেড়েছে। বেড়েছে মানে, বাড়তির পথেই আছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের কেজি একশ এবং মরিচের কেজি তিনশ টাকা অবাক করার ঘটনা।
মূলত নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে দিশাহারা মানুষ। কয়েক মাস ধরে বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্য উর্ধ্বমুখি। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা শুধু দাম বেঁধে দিয়ে দায় সারছেন। বাধ্য হয়ে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তের অনেকে মৌলিক খাবারও কাটছাঁট করছেন। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে গত মাসে আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম বেঁধে দেয় সরকার। এরপর তিন সপ্তাহ পার হলেও বাজারে তার কার্যকারিতা মেলেনি। বরং দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া বাজারে ফের বেড়েছে মুরগির দাম। এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা অধিদপ্তর অভিযানের নামে কিছু জরিমানা করছে। এই পর্যন্তই।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা প্রতি পিস।
সরকার আলুর দাম বেঁধে দিলেও তা মানছেন না বিক্রেতারা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তবে বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে আলু। বাজারে শালগম ৮০ টাকা কেজি, গাজর ১২০ টাকা, বেগুন ৯০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা ও শসা ৭০ টাকা এবং পেঁপে কেজি প্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করলা ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কচুছড়া ১০০ টাকা কেজি, কাকরোল ৮০ টাকা কেজি, পটল ৭০ টাকা কেজি, লতি ৮০ টাকা কেজি, ঢেড়স ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শনিরআখড়ার কাঁচা বাজারের এক সবজি বিক্রেতারা বলেন, গত সপ্তাহে ফুলকপি বিক্রি ছিল ৫০ টাকা, আজ ৬০ টাকা। মূলা আর শালগম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি গত সপ্তাহে ছিল, বর্তমানে ৮০, একই দাম। এখন শীতকালীন সবজি মৌসুম শুরু হয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টি-বাদল। বৃষ্টির কারণে সবজি বাজারে পর্যাপ্ত আসছে না। তাই শীতকালীন সবজির দাম একটু বেশি।
এদিকে বাজারে মুরগির দাম আরো বেড়েছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজির দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। বাজারে এই মুরগি গত বুধবার বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়।
পেঁয়াজের বাজারেরও একই অবস্থা। বিক্রি হচ্ছে না সরকারের বেঁধে দেয়া দামে। যাত্রাবাড়ি, দয়াগঞ্জ, ক্যাপ্তান বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। দয়াগঞ্জের এক বিক্রেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না। তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন, আমরা কী করবো ? আমরা আনি আড়ত থেকে। সেখানেও জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো উত্তর দিতে পারে না। ফলে আমরা যে দামে আনি তার থেকে ৫-৬ টাকা বেশি দরে বেচি। এতে ক্রেতাদের সাথে আমার তর্ক-বিতর্ক হয়। লসেতো আর বেচা যায় না।
এদিকে কিছু ক্রেতা অভিযোগ করেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে তাদের কিনতে হচ্ছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই দাম কি কখনই কমবে না? এভাবে রোজ দাম বাড়লে চলাটাই মুশকিল। একেকদিন একেক পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে আমাদের।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান