আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের
০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত শুরু হলো বাংলাদেশের। গতকাল ভারতের ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৯২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয়। আগে ব্যাট করে আফগানিস্তান ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ রানে অলআউট হয়। জবাবে ৩৪.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান তুলে বড় জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আগে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান আফগানদের। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ইনিংস শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম ওভারে বেশ আঁটসাঁট বোলিংই করেছিলেন তিনি। তবে এরপর লাইন-ল্যান্থ ঠিক রাখতে পারছিলেন না। অপর প্রান্তে শরিফুল ইসলামও নতুন বলের বাড়তি সুবিধা নিতে পারেননি। বাংলাদেশের পেসারদের ব্যর্থতায় ভালো শুরুই পেয়েছিল আফগানিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জারদান দারুণ ব্যাটিং করলে আফগানরা ৫ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ২৭ রান সংগ্রহ করে।
পেসাররা সুবিধা করতে না পারায় ইনিংসের সপ্তম ওভারেই স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। নিজের হাতে বল তুলে নেন অধিনায়ক সাকিব। তবে প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হজম করেন বাঁহাতি এই স্পিনার। অবশ্য পরের ওভারে এসে ঠিকই পাল্টা জবাব দিয়েছেন সাকিব। ৮.২ ওভারে তাকে সøগ সুইপ করতে গিয়ে এডজ হয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে তানজিদ হাসান তামিমের তালুবন্দি হন ইব্রাহিম। ফেরার আগে ২৫ বলে তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কার মারে তিনি করেন ২২ রান। ইনিংসের শুরুটা দারুণ করলেও প্রথম উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তানের রান তোলার গতি কিছুটা কমে যায়। তবে প্রথম পাওয়ার প্লে’র মধ্যেই প্রথম ফিফটির দেখা পায় তারা। প্রথম পাওয়ার প্লে শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তুলেছিল আফগানিস্তান।
ষোলতম ওভারের প্রথম বলেই সাকিবকে বড় শট খেলতে যান রহমত শাহ। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপের চেষ্টায় টপ-এজ হয়ে বল আকাশে উঠলে সিলি মিড অফে লিটন দাস ক্যাচ নিতে ভুল করেননি। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে রহমত করেন ২৫ বলে এক চারের মারে ১৮ রান। শুরুর ১০ ওভারে আফগানরা ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তুলেছিল। পরের দশ ওভারে কিছুটা হলেও রানের লাগাম টেনে ধরেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ১১ থেকে ২০ ওভারের মধ্যে আফগানিস্তান তুলেছে ৪৬ রান। বিপরীতে তারা হারায় রহমত শাহর মতো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। রহমত আউট হওয়ার পর উইকেটে এসে ধীর গতির শুরু করেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি। তার এমন ব্যাটিংয়ের প্রভাব পড়ে দলের রান রেটের ওপরও। সেটা হয়তোবা বুঝতে পেরেছিলেন আফগান অধিনায়ক। তাইতো ২৫তম ওভারে মিরাজের ওপর আক্রমণ করতে যান তিনি। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো দলের বিপদ বাড়ান নিজের উইকেট হারিয়ে। ৩৮ বলে ১৮ রান করা এই ব্যাটারকে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ।
ইনিংস উদ্বোধন করতে এসে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। শুরুতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও পরে পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট চালান তিনি। কিন্তু ২৬তম ওভারে আর শেষ রক্ষা হয়নি। মুস্তাফিজে কাটা পড়েন গুরবাজ। এই বাঁহাতি পেসারকে ডাউন দ্য উইকেটে এগিয়ে এসে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে হাঁকাতে চেয়েছিলেন গুরবাজ। ব্যাটারের মুভমেন্ট বুঝে গতি কমিয়ে দেন মুস্তাফিজ। ফলে ঠিকমতো টাইমিং হয়নি। ৪৭ রান করে গুরবাজ ফেরেন হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে থিতু হতে দেননি সাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনারের সোজা বলে লাইন মিস করেন নাজিবুল্লাহ। খানিকটা নিচু হওয়া বলে টার্নের আশায় ব্যাট চালিয়ে ছিলেন, আউটসাইড এডজে বল স্টাম্পে আঘাত হানে। ৫ রান করা নাজিবুল্লাহকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট শিকার করেন সাকিব।
আফগান টপ অর্ডার ব্যাটাররা ভালো শুরু এনে দিলেও মিডল অর্ডার ভেঙে যায় তাসের ঘরের মতোই। ১০ রানের ব্যবধানে ফিরেছেন হাশমতউল্লাহ, গুরবাজ ও নাজিবুল্লাহ। তাই মোহাম্মদ নবীর দায়িত্বটা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হলেন তিনিও। তাসকিনের ল্যান্থ বলে ইনসাইড এডজে লেগ স্টাম্প উপড়ে গেছে এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৬ রান। নবীর পর বিপদ বাড়িয়ে ফেরেন রশিদ খানও। মিরাজের নিচু হওয়া বল স্টাম্পে ডেকে এনে বোল্ড হন তিনি। করেন ১৬ বলে ৯ রান। প্রথম স্পেলে সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে উইকেটের দেখা পান বাঁহাতি পেসার শরিফুল। ৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে বোল্ড করেন তিনি। দলীয় ১৫৬ রানে ওমরজাই আউট হওয়ার পর একই রানে পরের দুই উইকেটও হারায় আফগানরা। ৩৭তম ওভারের তৃতীয় বলে মুজিবুর রহমানকে বোল্ড করে মিরাজ, আর ৩৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাভিন-উল হককে ফেরান শরিফুল। ফলে ১৫৬ তেই আটকে যায় আফগানিস্তান। সাকিব ও মিরাজ যথাক্রমে ৩০ এবং ২৫ রানে পান ৩টি করে উইকেট। ৩৪ রানে শরিফুল পান ২ উইকেট।
লক্ষ্যটা খুব বড় ছিল না। জবাব দিতে এসে শুরুটাও ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। দেখে শুনেই খেলছিলেন উদ্বোধনী জুটির দুই ব্যাটার লিটন দাস ও তানজিদ তামিম। কিন্তু ৫ম ওভারেই ঘটে বিপত্তি! ফজল হক ফারুকির করা বল কাভারে ঠেলে রান নেওয়ার জন্য সামনের পায়ে একটু ঝুঁকেছিলেন লিটন। রান নেওয়ার চেষ্টা করেননি তিনি। তবে লিটনের ডাক না শুনেই অন্য প্রান্ত থেকে তামিম ততক্ষণে দৌড়ে উইকেটের মাঝে চলে এসেছিলেন। নজিবুল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভেঙে গেলে রান আউট হন তামিম। ১৩ বলে ১ চারের মারে মাত্র ৫ রান করে ফেরেন তিনি। দলীয় ১৯ রানে তানজিদ তামিম ফেরার পর দ্রুতই বিদায় নেন লিটন দাসও। ৬.৪ ওভারে দলীয় ২৭ রানে ফারুকিকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে থেকে বল টেনে এনে বোল্ড হন লিটন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে দুই বাউন্ডারির মারে ১৩ রান। তামিম ও লিটন আউট হলে উদ্বোধনী জুটির আক্ষেপটা রয়েই গেল বাংলাদেশের। তানজিদ তামিম নবীন হলেও শেষ দুই বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন। অথচ এই ওপেনারই গত কয়েক মাস ধরে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি। অবশ্য প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের ম্যাচে এসে ফের ব্যর্থ হলেন লিটন।
দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর তিনে নেমে দলের হাল ধরেন মিরাজ। নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে জয়ের ভীত গড়ে দেন তিনি। তুলে নেন নিজের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরিও। এই মাইলফলক ছুঁতে মিরাজ খরচ করেন ৫৮ বল। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর বিশ্বকাপের ম্যাচে পেলেন ফিফটি। তবে দুই দফা জীবন পেয়ে ফিফটি হাঁকানো মিরাজ থামেন নাভিন-উল হককে মিড অফের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে। ২৮.১ ওভারে দলীয় ১২৪ রানে আউট হওয়ার আগে ৭৩ বলে ৫৭ রান করেন মিরাজ। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চারের মার। আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশের জয় এক প্রকার নিশ্চিত করেই গেছেন তিনি।
মিরাজ ফেরার পর ক্রিজে এসে দ্রুতই জয়ের দিকে এগোচ্ছিলেন সাকিব। তবে ৩৪তম ওভারে ওমরজাইকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন তিনি। যাওয়ার আগে ১৯ বলে দ্ইু বাউন্ডারিতে করেন ১৪ রান। সাকিব ফিরলেও জয়ের পথে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজটা ভালোভাবেই সেরেছেন শান্ত। এই টপ অর্ডার ব্যাটার ৮৩ বলে ৩ চার ও এক ছক্কার মারে অপরাজিত ৫৯ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। তিন বল খেলে ২ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। আফগান বোলার আজমতুল্লাহ ওমরজাই মাত্র দুই ওভার বল করে ৯ রানে পান একটি উইকেট। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন মেহেদি হাসান মিরাজ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ