ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

ভিসানীতির সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ শেখ হাসিনার মুখে : মির্জা ফখরুল

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

ভিসানীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে দেখতে পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছে, ওরা মানুষ খুন করতো, কথায় কথায় গুলি করে মেরে দিতো, গুম করে দিতো। আর ভিসানীতি করেছে, ভিসানীতিতে এখন সবাই আতঙ্কিত। ওদের যারা দুর্নীতি করেছে, যারা অন্যায় করেছে, যারা বিচারবর্হিভূত হত্যাকা- করেছে, যারা বিচারক হয়ে দলীয়ভাবে বিচার করছে, যে ব্যবসায়ী চুরি করছে, দুর্নীতি করছে সবাই এখন আতঙ্কিত হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ আমরা দেখতে পারছি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে।

এমনভাবে কথাবার্তা বলছেন যে মনে হয়, ক‘দিন আগে চিফ জাসিস্ট হয়েছিলেন বিচারপতি এটিএম আফজাল তিনি রায়ের মধ্যে বলেছেন রং হেডড পারসন। সেই রং হেডেড পারসন আরো রং হেডেড হয়ে গেছেন। রং হেডড পারসন যদি আরো রং হেডেড হয় তাকে কি বলে? উন্মাদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে চাকরির জাতীয়করণের দাবিতে ও শিক্ষক-কর্মচারির হয়রানি-নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত মহাসম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সারা দেশ থেকে সহাস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারি নেতা অংশগ্রহন করেন।

রাজনৈতিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় শেষ হয়ে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ডিগবাজিতে কোনো লাভ হবে না। ডিগবাজি করে একবার বাইরে যাচ্ছে, ওদিকে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় নেই, এতো কান্না কাটি করার দরকার কি বলেছেন। আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সময় হয়ে গেছে। দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা না হলে জনগণ আপনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে। সরকার পতনে যা কিছু করা দরকার তাই করতে সকলকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন আমরা যে শাসনের মধ্যে পড়েছি, যে দুঃশাসনের মধ্যে পড়েছি, যারা আমাদের এই বুকের ওপরে চেপে বসে আমাদের উপরে ছড়ি ঘুরাচ্ছে, মারছে, খুন করছে, হত্যা করছে, লুন্ঠন করছে, এটাকে সরানোর দায়িত্ব কার? এই স্যাংশনের ওপর, ভিসানীতি ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে? অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে? না। আমাদেরকেই করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বার বার বলছি যে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি, পদযাত্রা করছি, রোড মার্চ করছি, সমাবেশ করছি। কিন্তু তারা (সরকার) শান্তির কথা শুনছে না।চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। শোনে না। ওই জন্য এখন শোনাতে হবে এবং শোনানোর জন্য যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে। সেজন্য আজকে সমগ্র জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য, সকল মানুষকে এই সরকারকে সরাতে রাজপথে সোচ্চার হতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি এখনো বলি, এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, অনেক কষ্ট দিয়েছেন মানুষকে, অনেক হত্যা করেছেন আমাদের ভাইকে, অনেক স্বামীকে, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, অনেক মাকে পুত্রহারা করেছেন, অনেক সন্তানকে পিতা হারা করেছেন, অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন। এখনো সময় আছে এখন আপনি মানে মানে দয়া করে বিদায় হোন, বিদায় হোন।

তিনি বলেন, আপনারা যে অপকর্ম করেছেন, এই অপকর্মের জবাবদিহি আপনাদেরকে একসময় করতে হবে। তার আগে স্বসম্মানে যদি বিদায় হতে চান তাহলে এখনই সময়ে আপনি বিদায় হন। আমরা বলেছি, পদত্যাগ করুন, এই সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং স্পষ্ট করে বলেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।
বিদেশীরা কেউ বলেনি কেয়ারটেকার সরকারের কথা -গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা বলতে হয় না, ওটা বুঝা যায় যে এখানে (বাংলাদেশে) নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তার প্রমাণ দিয়েছো ’১৪ সালে, ’১৮ সালে। আর এখনো প্রমাণ দিচ্ছে। আর বলে কিনা নির্বাচন তো সুষ্ঠু করা আমাদের কর্তব্য, সুষ্ঠ করছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে এতো কথা কেন আমি বুঝতে পারি না। নির্বাচন তো আমরা করছি সুন্দর নির্বাচন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করছি’। এখন এই কথাগুলো শুনলে আমি আগেও বলেছি, ঘোড়াও হাসে। উনার সুষ্ঠু নির্বাচন করেন এটা বিস্ময় ব্যাপার। যাই হোক অবৈধভাবে হোক আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো। ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী আছেন। উনি কি একবারও চিন্তা করেন না যে, আমরা এই কথাটা শুনে মানুষ হাসবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত কয়েক বছরে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৫ লাখ মিথ্যা মামল দায়েরসহ গত এক বছরে রাজপথে ২২ জন নেতাকে গুলি করে হত্যা, ৮ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, লক্ষাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থককে আসামী করা, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় দিয়ে সাজা প্রদান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষনেতা বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বেগম খালেদা জিয়ার অঙ্গীকার শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করাসহ তাদের ওপরে নিপীড়ন-নির্যাতন ও কারগারে প্রেরণের ঘটনার সমালোচনা করেন তিনি।

শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল ম্ইন খান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিস উদ্দিন মাহমুদসগ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ