দর্শনা কেরুর উৎপাদিত পণ্য এবার সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড
০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দর্শনা অঞ্চলের একমাত্র অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠার ৮৫ বছরের মধ্যে ২০২২/২৩ অর্থ বছরে ডিস্টিলারি সর্বোচ্চ ৪শ’৩৮ কোটি ৯১ লাখ ২৯ হাজার ৯৮ টাকার উৎপাদিত পণ্য বিক্রির রেকর্ড করেছে মিলটি। এছাড়া ৩০ বছর পর চিনিকলের কৃষিখামার বিভাগ সাড়ে তিন কোটি টাকা লোকসান পুষিয়ে ২০ লাখ এবং জৈব সার কারখানায় ২৪ লাখ টাকা লাভের মুখ দেখছে। সামগ্রিকভাবে বর্তমানে কেরু চিনিকল রয়েছে লাভের দিকে।
ডিস্টিলারি ভারপ্রাপ্ত (জিএম) রাজিবুল হাসান জানান, এখান থেকে সরকারের ১শ, ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে ১শ’ ৫২ কোটি টাকা আয় এবং চিনি কারখানার ৬৮ কোটি ১৬ লাখ টাকাসহ অন্যান্য বিভাগের যাবতীয় সব লোকসান পুষিয়ে এ বছর ৮০ কোটি টাকা নিট লাভ করেছে। কর্তৃপক্ষ জানান, এ বছর কেরুর ডিস্টিলারি থেকে ডিনেচার্ড স্পিরিট রেক্টিফাইট স্পিরিট বিলেতি ও দেশি বাংলা মদসহ অন্যান্য পণ্য মিলিয়ে মোট ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬শ’২০ লিটার পণ্য উৎপাদন হয়েছে। দর্শনা ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিক্রয় কেন্দ্রসহ দেশে মোট ১৩টি ওয়্যারহাউজের মাধ্যেমে এসব পণ্য বিক্রিতে স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। যার মধ্যে ইয়েলো মলটেড, হুইসকি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্রান্ডি, চেরি ব্রা-ি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, ওরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদগা, রোজারাম, ওল্ডরাম জাতের বিলেতি লিকার মদের বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যার জন্য বিক্রি বেশি, যা প্রতিষ্ঠার পর সব থেকে বেশি বিক্রির ফলে লাভ হয়েছে।
চিনিকলের জি এম (প্রশাসন) মো. ইউসুফ আলি ও ডিজিএম (খামার) সুমন কুমার সাহা জানান, এ বছর কেরুর কৃষি খামারের সাড়ে তিন কোটি টাকা লোকসান পুষিয়ে ৩০ বছর পর ২০ লক্ষ টাকার উপরে এবং আকন্দবাড়িয়া পরিক্ষামূলক খামারে নির্মিত জৈব সার কারখানা থেকে ২৪ লাখ টাকা লাভের মুখ দেখেছে। কর্তৃপক্ষ জানান সামগ্রিকভাবে কেরু চিনিকলে লোকসান নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮৪৭ সালে মি. রবার্ট রাসেল কেরুর সাথে অংশীদারিত্ব হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে মি. রবার্ট রাসেল তার অংশ বিক্রি করে দেন। ১৮৫৭ সালে ভারতের রোজাতে সিপাহী বিপ্লবের সময় প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অতঃপর তা পূণঃনির্মাণপূর্বক জয়েন্ট স্টক কোম্পানী গঠন করে কেরু এ্যান্ড কোম্পানী লি. হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণ করা হয়। রোজাতে ব্যবসায় উন্নতি লাভ করায় ভারতের আসানসোল ও কাটনীতে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৮ সালে চিনি কারখানার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে ইংল্যান্ডের মেসার্স ব্লেয়ার্স লি. দর্শনায় কেরু চিনিকল প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয় ১১ হাজার ৫শ’ মে. টন। অপরদিকে ডিস্টিলারী কারখানায় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে ফ্রান্সের মেসার্স পিনগ্রিসইটি মোলেট। প্রাথমিকভাবে দৈনিক ১ হাজার টন আখ মাড়াই ও ১৮ হাজার প্রুফ লিটার স্পিরিট তৈরির লক্ষে আরো একটি শাখা তদানীন্তন নদীয়া জেলার অর্ন্তগত দর্শনায় স্থাপন করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয় এবং তখন থেকে অদ্যবদি কেরু এ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লি. নামে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি আকন্দবাড়িয়া পরিক্ষামূলক খামারে উৎপাদন করা হয় জৈবসার কারখানা। জৈব সার কারখানায় এ বছর ২৪ লক্ষ টাকা লাভ করেছে বলে জানিয়েছেন। মিলটির অন্যতম উপজাত দ্রব্য আখের চিটাগুড়, ব্যাগাস ও প্রেসমাড দিয়ে তৈরি হয় জৈবসার। কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব জমিতে স্থাপন করেছে জৈব সার কারখানা। ৯টি কৃষি খামারের মধ্যে রয়েছে হিজলগাড়ি, বেগমপুর, ফুরশেদপুর, ঝাঝরি, আড়িয়া, ফুলবাড়ি, ছয়ঘরিয়া, ঘোলদাড়ী ও ডিহিকৃষ্ণপুর।
চিনিকলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, দর্শনা কেরু চিনি কমপ্লেক্স ইউনিটের মধ্যে চিনিকারখানা ছাড়া সবকটি ইউনিট এ বছর লাভ করেছে। চিনি কারখানাটি আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন হলে লোকসান অনেকাংশে কমে আসবে। ডিস্টিলারি বিভাগ আধুনিকায়ন এর কাজ প্রায় শেষের দিকে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং শিল্প ও কৃষিবান্ধব সরকার এ বছর প্রতি মন আখ মিলগেটে ১শ’ ৮০ টাকা থেকে ২শ’ ২০ টাকা এবং আগামী বছর প্রতি মন আখ ২শ’ ৪০ টাকা করায় এলাকার চাষীদের আখচাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। আসা করা যায় আখচাষ বৃদ্ধি পেলে কেরু চিনিকল কমপ্লেক্সের সব ইউনিটে লাভ করতে সক্ষম হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ