পিকে হালদারের ২২ বছর কারাদন্ড
০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৩ এএম
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)-কে ২২ বছর সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় তাকে এ কারাদন্ড দেয়া হয়।
গতকাল রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত আসামি অবন্তিকা বড়াল, শঙ্খ, সুকুমার ও অনিন্দিতার উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণাকালে বিচারক বলেন, কংক্রিট জাস্টিস একমাত্র মহান রাব্বুল আলামিন করতে পারেন। একজন বিচারক শুধু রেকর্ড ও নথি দেখে রায় ঘোষণা করতে পারেন। এতে একপক্ষ খুশি হবে অপরপক্ষ অখুশি হয়। দুই পক্ষকে কখনো খুশি করা যায় না। আর এটা বিচারকের কাজও না।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, যারা অবৈধভাবে বিদেশে দ্বিতীয় বাড়ি বানায় তারা দেশকে ভালোবাসে না। পারতপক্ষে আমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং অর্থ পাচারকারীদের রুখতে হবে। পি কে হালদারের মতো অর্থ পাচারকারীদের কোনো আদর্শ নেই। তারা কোনো আদর্শ ধারণ করে না। তারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। দেশের স্বার্থে তাদের সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করতে হবে। দেশের বৃহৎ স্বার্থে পি কে হালদারের মতো লোকেরা কোনো ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়।
পর্যবেক্ষণে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনেও পাচারের অর্থ কানাডা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। তাদের মতো উন্নত রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া রাষ্ট্রের একার পক্ষে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। অর্থ পাচারের মতো অপরাধ আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর সহযোগিতা ও জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
পর্যবেক্ষণে আদালত আরও উল্লেখ করেন, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার দিঘিরজান গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার। তার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার পরিবর্তে সম্পদ গড়ার নেশায় মত্ত হন। আসামি পি কে হালদার তার মা, আপন ভাইসহ ঘনিষ্ঠজনের সহযোগিতায় অসংখ্য নামী-বেনামী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে পাহাড়সম অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, একজন মেধাবী নাগরিক তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন, অপরদিকে অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তখন তিনি জাতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ান। আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষ ব্যক্তি স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের কাছে দেশের স্বার্থের চেয়েও নিজের স্বার্থ অনেক বড় ছিল। আমরা যেন নিজের সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের জন্য মানিলন্ডারদের সহযোগী না হই।
আদালতের রায়ে পি কে হালদারকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় ১০ বছর এবং অর্থপাচারের দায়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় ১২ বছরের সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। তিন ধারার সাজা একটার পর একটা চলবে বিধায় পি কে হালদারকে ২২ বছর কারাভোগ করতে হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর একই আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষে রায়ের জন্য ৮ অক্টোবর রায়ের তারিখ ধার্য রাখেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এ সম্পদের বাজার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমানে এর বাজার মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজের নামে জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এ সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডিতে পি কে হালদারের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন। যার দাম ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রীন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন। এর বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকা। নিজের কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে ২ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন ৮ তলা হোটেল (র্যাডিসন নামে পরিচিত)। যার আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি, এর বর্তমান দাম ১৬৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮০ কোটি টাকারও বেশি। এসব অনিয়মের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন। এরপর তদন্ত করে দুদক পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শপথ নিলেন অতিশী, মমতার পর দ্বিতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেল ভারত
মালয়েশিয়ায় নাইট ক্লাবে স্ফূর্তি করতে গিয়ে আটক ৫ বাংলাদেশি
নতুন রেকর্ড সোনার দামে, ভরি ১৩৩০৫১ টাকা
সিলেটে একদিনে বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হক
শেখ হাসিনা সকল দপ্তরের টাকা লুট করে আমানত খেয়ানত করেছে : নোয়াখালীতে শিবির সভাপতি
ইসলামী ছাত্র মজলিসের নির্বাচন সম্পন্ন--রায়হান সভাপতি ও ইমরান সেক্রেটারি নির্বাচিত
হাজীগঞ্জে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চিকিৎসাধীন কিশোরের মৃত্যু
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই-ধর্ম উপদেষ্টা
নয়ন মিয়ার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না : যুবদল সভাপতি মুন্না
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার
একই কর্মস্থলে অর্ধ যুগ কাটিয়েছেন পিআইও রেজা, করেছেন প্রকল্পের টাকা হরিলুট
আওয়ামীলীগ শাসনামলে যশোরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কোনো হদিস নেই
যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই
সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন
ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র্যালি
ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে