দেশজুড়ে আলোচিত চট্টগ্রাম নগরীতে পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে হত্যার পর ছয় টুকরো লাশ খালে-সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনায় থানায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশেন-পিবিআই। এতে আত্মস্বীকৃত খুনি প্রতিবেশী আবীর আলীকে (১৯) আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার তার বাবা-মাকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে রোববার অভিযোগপত্র দেওয়া হয় বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মনোজ কুমার দে। তিনি বলেন, অভিযোগপত্রের পাশাপাশি ১৭ বছর বয়েসী অপর এক কিশোরের বিরুদ্ধে দোষীপত্রও জমা দেওয়া হয়েছে। আর আবীরের কিশোরী বোনকে দোষীপত্র থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

৩০২/২০১ (খুন ও লাশ গুম) ধারায় আবীর আলীকে এবং ২০১ (লাশ গুম) ধারায় অপর কিশোরটির বিরুদ্ধে দোষীপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। হত্যাকা- ও লাশ কেটে গুম করার পরিকল্পনা ও ঘটনা জেনেও গোপন রাখায় ১৭ বছর বয়সী এই কিশোরের বিরুদ্ধে দোষীপত্র জমা দেয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আবীরের বাবা-মা ও ছোট বোন হত্যাকা-ের বিষয়ে কোনো কিছুই জানতেন না বলে তদন্তে এসেছে। তাই তাদের মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযোগপত্র ও দোষীপত্র মিলিয়ে ৩৫৭ পৃষ্ঠার নথি জমা দেওয়া হয়েছে তাতে ৫০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

আয়াত ছিলেন নগরীর ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ির সোহেল রানার মেয়ে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিকালে ঘরের পাশে মসজিদে আরবি পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল সে। ওই ঘটনায় আয়াতের প্রতিবেশী তরুণ আবীরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরে আবীর স্বীকার করে আয়াতকে খুনের পর লাশ ছয় টুকরো করে সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দেন তিনি। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্টোল দেখে প্রতিবেশীর শিশু কন্যা আয়াতকে অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের পরিকল্পনা করেছিলেন আবীর।

২৪ নভেম্বর আবির আলীকে আটক করে পিবিআই জানায়, প্রতিবেশি এই তরুণ আয়াতকে অপহরণ করেছিল। এরপর তাকে শ্বাসরোধে খুন করে ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় সøুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবীর। আবিরের দেয়া তথ্যে, ৩০ নভেম্বর আয়াতের বিচ্ছিন্ন দুই পায়ের অংশ এবং পরদিন খ-িত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই। গ্রেফতার আবীর আলী নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা আজাহার আলীর ছেলে। তাদের বাড়ি রংপুর জেলায়। আবীরের বাবা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেটির মালিক আয়াতের দাদা মনজুর হোসেন।

এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় সোহেল রানার দায়ের করা মামলা প্রায় ১১ মাস তদন্তের পর চার্জশীট দেয়া হয়। এতে বলা হয়, তিনটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় আয়াতকে জিম্মি রেখে তার দাদার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল আবীর। কিন্তু আয়াতকে মুক্ত করে দিলে ঘটনা জানাজানি হয়ে যাবার ভয়ে তাকে খুন করে। এরপর লাশ গুম করা হয়। আবীর আলীকে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আয়াত খুনের মামলায় গ্রেফতার দেখায় পিবিআই। দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৩ ডিসেম্বর তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন।