জনপদে এখনো বন্যার ক্ষত
১০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিটি জনপদে এখনও রয়ে গেছে বন্যার ক্ষত। ক্ষত-বিক্ষত সড়ক, মহাসড়ক, বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার হয়নি। নজিরবিহীন বন্যা ও পাহাড়ী ঢলের তোড়ে ভেসে যাওয়া ব্রিজ, কালভার্ট, পাকা ও আধা-পাকা, কাঁচা সড়কসহ চলাচলের উপযোগি হয়নি গ্রামীণ অবকাঠামো। ঢল, বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি অনুপাতে পাওয়া যায়নি পর্যাপ্ত ত্রাণ ও সরকারি সহযোগিতা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নিজেদের উদ্যোগে বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘর মেরামত করেছে। প্রান্তিক চাষী, খামারিরা নিজেদের প্রচেষ্টায় কৃষি ও মৎস্য খাতের ক্ষতি পুষিয়ে উঠার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সড়ক অবকাঠামো সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই।
বিগত ৩ আগষ্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, তারা বিগত ৫০ বছরেও এ ধরনের পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকা বসতবাড়ি ডুবে যেতে দেখেনি। বন্যায় লন্ডভন্ড হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। শঙ্খ নদী প্রবাহিত জেলার সাতকানিয়া, লোহাগাড়া অংশের প্রায় ৪৪ কিলোমিটার নদীর তীরে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় এই দুই উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলায় প্রাণ হারিয়েছে ২১ জন।
এই অঞ্চলের সাড়ে সাত শতাধিক কিলোমিটার সড়ক, মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১৮ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত দোহাজারি-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের সাতকানিয়া অংশে কয়েক কিলোমিটার রেল লাইন বিধ্বস্ত হয়েছে। বানের তোড়ে মাটি সরে যাওয়ায় বেঁকে গেছে রেল লাইন। সরকারি হিসাবে পটিয়া-চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, বোয়ালখালীর ১১১টি ইউনিয়নে ২০ হাজার ৭০টি বসত ঘর সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে বিধ্বস্থ হয়েছে সাত হাজার ১৮৫টি বসতঘর। দুর্যোগ কবলিত হয়েছে সাত লাখ ৫০ হাজার ২৮৫ জন মানুষ। মৎস্য খাতে জেলায় ৬৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে ১৮৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার। প্রাণীসম্পদ খাতে ক্ষতি ৩০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পল্লীবিদ্যুতের প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। বেরিবাঁধের ক্ষতি হয়েছে ৭০ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৫০.৮৮১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও প্রতিরক্ষা কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলায় এক লাখ ১৫ হাজার ৮৩১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
বন্যার পর সড়ক, মহাসড়কে জরুরি কিছু সংস্কার করা হলেও বেশির ভাগ সড়ক এখনও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগি। বিশেষ করে আধা-পাকা ও কাঁচা সড়কের অবস্থা বেহাল। সংস্কার করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ রেল লাইনও। ভেসে যাওয়া পুল, কালভার্ট সংস্কার হয়নি। অনেকে এলাকায় স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে পুল ও সাকো তৈরী করে গ্রামীণ জনপদে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা করছেন। কৃষক ও খামারিরাও বসে নেই। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন করে বীজতলা তৈরী করে আমন আবাদ শেষ করা হয়েছে। আবাদ করা হয়েছে শাক সবজির।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহীদুল ইসলাম বাবর জানান, আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যায় সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সাতকানিয়ায়। সাতকানিয়ায় বন্যার পানির তোড়ে একাধিক ইউনিয়নের প্রধান সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যার ফলে দূর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। বন্যা পরবর্তি প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও সড়কগুলো মেরামত করা না হওয়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। আবার জনপ্রতিনিধিরা বলছেন সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এসব সড়ক মেরামত করা না হলে নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে।
তবে, উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ সারওয়ার হোসেন বলছেন, সাতকানিয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের তালিকা তৈরী করে তা আগের জায়গাতে ফেরানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষ সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এর বাইরেও আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা কোন রকমে সচল করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা প্রকৌশলীয় কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, সাতকানিয়ায় বন্যায় ১৭৬.৫৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৯৫.৫৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সড়ক সর্ম্পূণরূপে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো স্থানীয়ভাবে লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে কোনো রকমে চলাচলের উপযোগী করে তোলেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশ সড়কে এখনো যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। কোন কোন সড়কের অংশ একেবারেই বিলীন হয়ে যাওয়ায় বাঁশ কাঠের সাকো তৈরী করে কোনো রকমে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
অপরদিকে চন্দনাইশ ও লোহাগাড়ারও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব সড়কে সামান্য মেরামত করে দিয়ে কোন রকমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করলেও অনেক সড়কে এখনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। সাতকানিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের একটি হচ্ছে চরতী খোদার হাট-মৌলভীর দোকান-বাজালিয়া-বোমাং হাট-নয়াহাট সড়ক। এই সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৪.৯২ কি.মি বন্যায় ১৩.৫০ কি.মি সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, মৌলভীর দোকানের পশ্চিমে মৈশামুড়া, মরফলা বাজারের পশ্চিম দিকে মখতেয়ারের কুম, নলুয়া ডি এল কারন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে তালদল বাজার, আমিলাইশ ইউনিয়নের পশ্চিম ডলু, সরওয়ার চৌধুরী বাজার থেকে দক্ষিণ চরতীর কাটাখালি, দক্ষিণ চরতী থেকে দুরদুরী খতির হাট (বাংলা বাজার) হয়ে দুরদুরী বোর্ড অফিস পযন্ত সড়কের অধিকাংশ এলাকায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে থাকায় যান চলাচল তো দুরের কথা হেঁটে চলাচল করাও অনেক কঠিন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে ছদাহা ইউপি-দস্তিদারহাট সড়ক। এই সড়কের ২.২০ কিলোমিটার। তার মধ্যে ১.৫০ কিলোমটিার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে দস্তিদার হাট এজাহারের দোকানের মধ্যবর্তী সড়কের বেশ কিছু অংশ সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায়। যার ফলে ওই সড়কে সব ধরনের যোগাযাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুজিবুর রহমান জানান, বন্যায় সড়কটি ব্যাপক ক্ষতি হয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে গাছ দিয়ে অস্থায়ী সাঁকো তৈরী করা হয়েছে। লোকজন কোনো রকমে হেঁটে চলাচল করতে পারছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই
সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন
ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র্যালি
ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস
এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার