মানহীন ভারতীয় গোশতে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য
১১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বৈধ এবং অবৈধ পথে আসছেই মানহীন ভারতীয় মহিষের গোশত। এসব হিমায়িত গোশত দীর্ঘদিন সতেজ রাখতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার গরুর গোশত বলে বিক্রি হচ্ছে সুপার শপ, হোটেল, রেস্তোরাঁয়। তাতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা-ভোক্তারা। দেশে চাহিদার বেশি গরু, মহিষ, ছাগলসহ গবাদি পশু থাকার পরও ভারতীয় নিম্নমানের গোশতের আগ্রাসন খামারিদেরও উদ্বেগ বাড়ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রায় আড়াই কোটি টাকার মহিষের গোশতের প্রকাশ্য নিলামে সর্বোচ্চ দাম উঠে মাত্র চার লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর মাসদাইর গাবতলীর মেসার্স এমবি ট্রেডিং চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারত থেকে ৪০ ফুটের কন্টেইনারে প্রায় ২৮ টন মহিষের গোশত আমদানি করে। নির্ধারিত সময়ে এ গোশত খালাস করে না নেয়ায় তা নিলামে তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মহিষের গোশত আসছে। তবে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, এসব গোশত আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কসহ বেশকিছু শর্ত আরোপ করায় বৈধপথে আমদানি কমে গেছে। চোরাই পথে আসছে ভারতীয় মহিষের গোশত। বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে একশ্রেণির আমদানিকারক গোশত আমদানি করছে। বৈধ পথে আসা গোশত ফ্রিজার কন্টেইনারে করে আমদানি করা হলেও সীমান্তে বস্তায় ভরে এসব গোশত আনা হচ্ছে।
বৈধ এবং অবৈধ পথে আসা এসব ভারতীয় গোশত দেশের সুপার শপ, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের দোকান এমনকি বড় বড় হাটবাজারের গোশতের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে। এসব গোশত তাজা দেখানোর জন্য ফ্রিজ থেকে বের করে জবাই করা গরুর রক্ত মেখে বিক্রি করা হচ্ছে। মহিষের গোশতকে গরুর গোশত হিসেবেও বিক্রি করছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়িরা। তাতে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। কিছুটা কম মূল্য হওয়ায় হোটেল, রেস্তোরাঁগুলো ভারতীয় মহিষের গোশত পরিবেশন করছে। ভোক্তারা গরুর গোশত মনে করেই চড়াদামে এসব গোশত এবং গোশতের তৈরি খাবার খাচ্ছেন। সুপার শপগুলোতে গরুর গোশত হিসেবে ভারতীয় এসব মহিষের গোশত বিক্রি হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে গোশত আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ দাবি আমলে নিচ্ছে না। দেশিয় প্রাণিসম্পদের সুরক্ষায় ভারতীয় মহিষের গোশত আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ককর বৃদ্ধিসহ কিছু শর্ত জুড়ে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গোশত আমদানি করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে গোশত আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে আমদানি ধীরে ধীরে কমে যায়। আবার আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ অনুমোদন না পাওয়ায় আমদানি আরো কমে গেছে।
জানা গেছে, আমদানিতে কড়াকাড়ি আরোপের ফলে ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন অনেকে। আমদানিকারকরা অফাল (গরু-মহিষের গোশত ছাড়া পায়া, নাড়িভুঁড়ি, জিহ্বাসহ অন্যান্য) ঘোষণা দিয়ে গোশত আমদানি করছেন। অফালের ওপর শুল্ক ৫ শতাংশ। অফাল ঘোষণা দিয়ে গোশত আমদানির অভিযোগে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে। একসময় শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতীয় গোশত আমদানি হলেও এখন স্থলবন্দর দিয়েও আমদানি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আগের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতীয় মহিষের গোশত আমদানি অনেক কমেছে। সাম্প্রতিককালে কোনো চালান আসেনি বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রিয়াজুল করিম বলেন, দেশ এখন প্রাণিসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাহিদার চেয়ে বেশি গবাদিপশু মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে গোশত আমদানি কোনো প্রয়োজন নেই। গত কয়েক বছর ধরে আমরা গোশত আমদানির কোনো অনুমতি দিচ্ছি না। অবৈধপথে কিংবা অন্য কোনো কৌশলে কেউ যদি গোশত আমদানি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোশত নিয়ে বিপাকে কাস্টমস : প্রায় ২৮ টন ভারতীয় মহিষের গোশত নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আমদানিকৃত ২৭ হাজার ৮৯০ কেজি হিমায়িত মহিষের গোশতের প্রকাশ্যে নিলামে দুই কোটি ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৩ টাকা দাম নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। এ হিসেবে প্রতিকেজির দাম ৮৭৫ টাকা। কিন্তু সোমবার অনুষ্ঠিত নিলামে প্রতিকেজির দাম উঠেছে ১৪ টাকা ২৯ পয়সা। যা সংরক্ষিত মূল্যের ২ শতাংশেরও কম। রাজশাহীর শাহ মখদুম ট্রেডার্স সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলামের স্থায়ী আদেশ মতে, পণ্যের প্রথম নিলামে সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ দাম না পড়লে বিক্রয় অনুমোদন দেয়া যাবে না।
নিলাম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এসব গোশতে পচন ধরেছে। আমদানিকারক নির্ধারিত সময়ে চালানটি খালাস না নেয়ায় এটি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় কাস্টম হাউস। নিলাম প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসময় ক্ষেপণ হওয়ায় গোশতের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদি কাস্টমসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এসব গোশতের নমুনা পরীক্ষা করে গুণগতমানের সনদ দেয়ার পরই তা খালাস করা হবে।
এমভি এইচআর আরাই নামের জাহাজে করে ৪০ ফুট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনারে এক হাজার ৬৫৬ কার্টুনে মহিষের গোশত পাওয়া যায়। এসব কার্টুনে উৎপাদনের তারিখ লেখা রয়েছে ২ জানুয়ারি ২০২৩ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা রয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩। আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিপিএল টি- ২০ উপলক্ষে সমন্বয় সভা করলো বিসিবি
৫৫ দিনের তারুণ্য উৎসবে শত আয়োজন
৫ সমন্বয়কের ফেসবুক আইডিতে আক্রমণ, নেপথ্যে জানা গেল যাদের নাম
এক বছরে ১৫০ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ, আটক ৮৬
ভারত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় বেনাপোল সীমান্তে আটক ৭
মতলব দক্ষিণে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
৫৭৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে রূপালী ব্যাংক
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের জন্য হেলথকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন
ঢাবি দাবা প্রতিযোগিতা শুরু
জোকোভিচ-কিরগিওস জুটির বিদায়
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের তালিকাভুক্তির সময় বাড়ল
হাসিনার বিরুদ্ধে সিনেমা করে হুমকির মুখে তিশা
ডুয়েটে টেকনিক্যাল সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত
প্রতিদিনের বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হলেন মোরছালীন বাবলা
‘লেখাপড়া না করে দেশ শাসন করতে গেলে আ.লীগের মতো ভুল করার আশঙ্কা রয়েছে’
বিরলে অবৈধ সুদ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বিরলে বুরো বাংলাদেশের আয়োজনে শীতবস্ত্র বিতরণ
বিরল প্রেস ক্লাবে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
বিরলে পৃথকভাবে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন
বর্ণাঢ্য আয়োজনে পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত