বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনের পাশে আছে : প্রধানমন্ত্রী
১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে ওআইসিভুক্ত ১৪ দেশের রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎ করতে এলে ফিলিস্তিনে রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে এ বৈঠক শুরু হয়। এদিকে ফিলিস্তিনে হাসপাতালে বোমা হামলায় হতাহত হাজারো মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে ফোন করে এ নির্দেশনা দেন তিনি। সচিবালয়ে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ কথা জানান জাহিদ মালেক।
এ দিকে গতকাল বুধবার সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবজাতির কল্যাণে যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য বিশ^ নেতাদের প্রতি তাঁর আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। শান্তি সমৃদ্ধি বয়ে আনে, আর যুদ্ধ কেবল ধ্বংস করে। সে জন্য আমি যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানাচ্ছি।
‘শেখ রাসেল দিবস-২০২৩’ এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের মধ্যে ‘ শেখ রাসেল পদক-২০২৩’ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পদক-২০২৩’ বিতরণের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ এবং সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গাজার একটি হাসপাতালে সাম্প্রতিক হামলায় নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গতকাল গাজার হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ ও শিশুদের হত্যা এবং শিশুদের রক্তমাখা মুখ দেখেছি। আমি বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি-যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা কখনই মানবজাতির জন্য ধ্বংসের পরিবর্তে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। যুদ্ধে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ সারাবিশে^র শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হোক।
প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের ফিলিস্তিনের ওপর আগ্রাসনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আজকে সারা বিশ্বে যে যুদ্ধ চলছে, ফিলিস্তিনে নারী-শিশু মারা যাচ্ছে, ইসরাইলেও মারা গেছে। গতকাল দেখলাম হাসপাতালে বোমা হামলা করা হয়েছে। সেখানে মানুষ মারা গেছে, শিশু মারা গেছে, দেখলাম রক্তাক্ত সেই শিশুদের চেহারা।
তিনি বলেন, আমি বিশ^ নেতৃবৃন্দকে বলবো-যুদ্ধ বন্ধ করুন। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। যুদ্ধ আর অস্ত্র মানুষের মঙ্গল বয়ে আনে না। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় শিশু আর নারীরা। আর যুবকরা দেয় জীবন। সন্তান হারান পিতা-মাতা। পিতা-মাতা হারান সন্তান। তাদের যে কি বেদনা সেটা আমরা জানি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছেন, কিভাবে রাস্তায় রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে রয়েছে। আর ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর প্রবাসে রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হতে হয়েছে তাঁকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর আমরা দুই বোন এবং আমাদের পরিজনরা জানে এই কষ্টটা কি। আমাদেরতো রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছে। সে তো আরো কষ্ট। নিজের নাম পরিচয়টা দিতে পারবো না, অন্যের দেশ, ভাষা আলাদা। সেখানে থাকতে হয়েছে কবে ফিরবো দেশে একটা অনিশ্চয়তা- সেভাবেই তো ৬টি বছর কাটাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এই অস্ত্র বানানোর এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে অর্থ ব্যয় হয় সেই অর্থ সারাবিশে^র শিশুদের খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং তাদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হোক। সেটাই আমাদের দাবি, আমরা তা-ই চাই। আমরা সবসময় শান্তির পক্ষেই কাজ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ছোট্ট রাসেল সোনার মত, আর যেন কাউকে এভাবে জীবন দিতে না হয়। একটা ফুল না ফুটতেই যেন ঝরে না পড়ে। সেটাই আমার কামনা। কবি সুকান্তের ছাড়পত্র কবিতার কয়েকটি পংক্তি তুলে ধরে এ সময় বিশ^কে নবজাতকের বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তিনি।
শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ তোমরা যারা শিশু এখানে আছো, বাবা-মার কথা শুনবে। ঠিকমতো লেখাপড়া করবে। লেখাপড়া ছাড়া মানুষ বড় হতে পারে না। আমাদের ছেলে মেয়েদের মধ্যে এই আকাঙ্খা থাকবে, আমরা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবো। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়ন চায় এ জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ আমাদের টার্গেট। আর আমাদের আজকের এই শিশুরাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের দক্ষ সৈনিক হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠন করার পর থেকে আমার প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশকে আর্থসামাজিকভাবে উন্নত করা। ছোট্ট শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত স্কুল করে দেয়া, বই দেয়া এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা করা। এসবের মধ্যদিয়ে শিশুদের গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছি। ছোটবেলা থেকে যেন খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার অভ্যাস হয়, সে ব্যবস্থা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, পচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বাবা-মা, ভাই সবাইকে হত্যার পর সব শেষে রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তখন আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আর আমি বিদেশে ছিলাম। ছয়টি বছর দেশে আসতে পারিনি। আর আমাদের এই হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকারও ছিল না। জিয়া ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনীদের বিচারেরর পথ রুদ্ধ করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদ ১৯৮৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আমি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সে সময় দেশে স্বৈরশাসন চলছিল। ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলা, সঙ্গীত চর্চা বা সে ধরনের কোন উন্মুক্ত পরিবেশই তখন ছিলনা। ইতিহাস বিকৃতি চলছিল। স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের এবং বিজয়ের ইতিহাস, এত আত্মত্যাগ এত রক্তদানের ইতিহাস আমাদের শিশুরা সে সময় জানতেই পারেনি। শিশুদের সে সময় স্বাধীন দেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ এই সংগঠনের অনেক শিশু দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় বিজয়ীদের মাঝে ‘শেখ রাসেল পদক ও স্মার্ট বাংলাদেশ পদক’ প্রদান করেন শেখ হাসিনা। সরকার প্রধান অনুষ্ঠানে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ত বিভাগ বাস্তবায়িত সারাদেশের একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও বেশকিছু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একই সাথে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে মাসব্যাপী ক্রীড়া, চিত্রাংকন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের মাঝেও পুরস্কার বিতরণ করেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব মো. শামসুল আরেফিন, আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিস শরাফত, সাংগঠনিক সচিব ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন এবং শিশু বক্তা সামিরা নাইর চৌধুরী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পরাজিত শক্তি এবং সুবিধাবাদীরা সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে লিপ্ত- বিমানবন্দরে সংবর্ধনা কালে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মুশাহীদ
নোয়াখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ‘জুলুম-নির্যাতন করে আস্তাকুঁড়ে চলে গেছেন কাদের মির্জা’
পুলিশের সামনে হামলা বিএনপি ও যুবদল নেতা আহত
গাজীপুরে ছুটির দিনেও ২৫ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা
তিন জেলাসহ সাত বিভাগের ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ
তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আইএসপিআর এর বিবৃতি
দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ
ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা
অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী
রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ
কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক
বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের