ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি বিশিষ্টজনের

জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করলে বিদেশি হস্তক্ষেপ হবেই

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

কেবল একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। গতকাল শনিবার গুলশানের একটি হোটেলে ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের সাংবিধানিকতা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কেবল একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতেই আওয়ামী লীগ সরকার সব আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, আমরা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বা কাউকে ক্ষমতায় বসাতে কথা বলছি না। আমরা বলছি জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কথা। আমরা সুজনের পক্ষ থেকে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজনীয়তার কথা বলছি এবং সেই আলোকে কাজ করছি। আমি মনে করি, একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, এই সরকার একদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, অন্যদিকে মানবাধিকার হরণ করেছে। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, বিনা অপরাধে গ্রেফতার এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আজকের সেমিনারে নাগরিক ঐক্য যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছে, সেখানে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে মানবিক, গণতান্ত্রিক হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে, কিছু কর্মসূচি বা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আরো ব্যাপক পরিসরে আলোচনা করার প্রয়োজন। একটি বিষয় পরিষ্কার যে, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অন্তবর্তীকালীন সরকার তা যে নামেই হোক না কেন, তার অধীনেই নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। এখনো প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই সরকার যে উন্নয়নের কথা বলে সেই উন্নয়ন হয়েছে তাদের সহযোগী লুটপাটকারীদের। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটি তো এক দলের সরকার না, এটি এক ব্যক্তির সরকার। উনি যা বলেন, সব মন্ত্রণালয় এমনকি বিচার বিভাগ ঠিক তাই করে। মধ্যযুগীয় রাজাদের মতো ক্ষমতা যার হাতে তার অধীনে আর যাই হোক, কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।
সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেন, আপনারা যদি জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করেন, জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে তো বিদেশি শক্তি হস্তক্ষেপ করবেই। আপনারাই তো বিদেশি শক্তিকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। নাগরিক ঐক্য যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছে, আমি মনে করি এরকম একটি সরকার সংকট উত্তরণের জন্য এই মুহূর্তে দরকার।
আবু সাঈদ খান বলেন, ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৭ ও ১৯৪৬ এবং পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ ও ১৯৭০ সালে নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন নিয়েও এত প্রশ্ন ছিল না, যতটা প্রশ্ন করা যায় ২০১৪ এবং ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়ে। দলীয় সরকারের অধীনে এই দেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাতে কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন।
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে যে চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে, সেই সংকট অতিক্রম করে একটি গণতান্ত্রিক, কল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আজকের এই সেমিনার। লুটপাট, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার দেশকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে একইসঙ্গে অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে আবারও একটি একতরফা প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, আমরা সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন তথা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কথা বলছি। রাষ্ট্রের এমন একটি সংস্কার যাতে সত্যিকার অর্থেই জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হয়ে ওঠে এবং নতুন করে কোনো স্বৈরাচারের জন্ম হতে না পারে। আমরা একটা সম্ভাবনার সূর্য দেখছি এবং আমাদের বিশ্বাস, ‘আমরা পারব’। তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে দেশ যে চরম রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে, সেই সংকট উত্তরণের জন্য এমন একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা প্রয়োজন যে সরকার ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করে একটি সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। এজন্য তিন দিন, তিন মাস, বা তিন বছর-কতদিন লাগবে তা বলছি না। তবে শাসন কাঠামোর সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বিগত ১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে সত্যিকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর কাদিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমান প্রমূখ। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান