ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

এয়ারবাস এলেই কি বদলে যাবে বিমান

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

২০০৮ সালে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করেছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এরপর বিমানের বহরে একে একে যুক্ত হতে থাকে বিশ্বের সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭, বোয়িং ৭৮৭, বোয়িং ৭৩৭। ২০১১ সাল থেকে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ আসা শুরু করলে সবাই আশা করেছিল অত্যাধুনিক এই বহর (ফ্লিট) দিয়ে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্সটি ঘুরে দাঁড়াবে, লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেখবে লাভের মুখ। অথচ এখনো বিমানের লোকসানের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সম্প্রতি বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিমানকে কাগজে কলমে লাভজনক বলে হিসাবে দেখিয়েছে। এই লাভজনক দেখানো নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে জেট ফুয়েলের মূল্য বাবদ কোটি কোটি টাকা পাওনা রাষ্ট্রীয় সংস্থা পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের। এগুলো সঠিকভাবে হিসাবে আনলে তখন এটি শেষমেষ লোকসানই প্রতিষ্ঠানই থেকে যাবে।
এরই মধ্যে সম্প্রতি আলোচিত হচ্ছে বিমানের এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনা নিয়ে। বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনা হলে বিমানের সক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয় বেড়ে যাবে। আগামী এক দশকে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে সাহায্য করবে এয়ারবাস। এর মাধ্যমে বদলে যাবে বিমান। কিন্তু এয়ারবাস বিমানের বহরে যুক্ত হলেই কি বিমান বদলে যাবে।
জানা গেছে, বিমান ইউরোপের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কিনছে। শুধু উড়োজাহাজ বিক্রি নয়, বিমানের বহর পরিকল্পনাও সাজিয়ে দেবে এয়ারবাস। এজন্য এয়ারবাস একটি মেগা মাস্টারপ্ল্যানও করছে। এয়ারবাস বলছে, বিমানের জন্য তারা ১০টি ওয়াইড বডি উড়োজাহাজ (এয়ারবাস ৩৫০-৮০০) নির্মাণে সব প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। এখন শুধু কার্যাদেশ পেলেই আগামী বছরের মধ্যে প্রথমে ৩৫০ উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে।
এয়ারবাস বলছে, বেবিচকের নিরীক্ষা অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো প্রায় এক কোটি আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিচালনা করেছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৮৫ লাখের কিছু বেশি। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আকাশপথের যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
বেবিচকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান আন্তর্জাতিক রুটসমূহে প্রায় ২০ দশমিক ৫৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। এসব ফ্লাইটের আবার প্রায় ৭ লাখ আসন খালি ছিল, যা বিমানের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতার প্রায় ২৪ শতাংশ। এছাড়া বিমান তার কার্গো মালামাল পরিবহনের মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে। অথচ এরপরেও এয়ারবাস থেকে আরও দুটি নতুন কার্গো উড়োজাহাজ কেনা হচ্ছে।
বিমানের কর্তাব্যক্তিরা মনে করছেন, নতুন নতুন উড়োজাহাজ বিমানের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আয় বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলছেন, বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্সে বোয়িং ও এয়ারবাস উভয় কোম্পানির উড়োজাহাজ থাকে। তাছাড়া এয়ারবাস কেনা হলে এককভাবে বোয়িংয়ের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে।
নতুন উড়োজাহাজ এলে আমরা বিমানের নেটওয়ার্ক সম্পসারণ করবো। কানাডায় আরও ফ্লাইট বাড়ানো, নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুসহ আরও নতুন রুট চালু করা হবে, যোগ করেন তিনি।
তবে বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিমানকে নতুন কোম্পানির উড়োজাহাজের জন্য বৈমানিক, কেবিন ক্রু ও প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। আর বিমান এখনো তাদের বর্তমান সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটিতে বর্তমানে শুধুমাত্র বোয়িংয়ের উড়োজাহাজই রয়েছে ১২টি। প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই উড়োজাহাজগুলো কেনা হয়। বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বোয়িংয়ের এই উড়োজাহাজগুলোর শতভাগ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এই ফ্লিট অনুযায়ী আমরা নতুন রুট চালু করতে পারিনি, এছাড়া বিমানের বৈমানিকসহ অন্যান্য জনবলের ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এসব-ই হয়েছে বিমানের দুর্বল পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার কারণে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান এখন ১২টি বোয়িংয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে অর্থ খরচ করছে, এর সঙ্গে আরও বোয়িং যুক্ত হলে খরচ তেমন বাড়বে না। কিন্তু যদি কোনো এয়ারলাইন্সে ৫টি বোয়িং ৭৮৭ ও ৫টি এয়ারবাস এ ৩৫০ থাকে তাহলে খরচ বহুগুণ বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে মিশ্র ফ্লিট হলে বিমানকে কয়েকশ কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে। তাছাড়া বিগত এক দশকে বোয়িং থেকে বিপুল সংখ্যক উড়োজাহাজ কিনতে যে অর্থ খরচ করা হয়েছে তার কাক্সিক্ষত ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। বড় এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে মিশ্র বহর ব্যবহারে সুবিধা পাওয়া গেলেও বিমানের মতো ছোট এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে টেকনিক্যালি যেমন অসুবিধা হবে, তেমনি খরচও বাড়বে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান