সরকারের খাতায় মৃত বিপ্লব সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে
২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বিদেশে চাকরি করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন নিয়মিত অথচ সরকারের নিবন্ধন তালিকায় তিনি মৃত। এই ভুক্তভোগীর নাম মো. বিপ্লব। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর খাসমহল দোসার পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা বিপ্লব সিংগাপুরে চাকরি করেন। এমআরপি পাসর্পোটধারী প্রবাসী বিপ্লব নিজের জন্য ই-পাসপোর্ট করতে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মৃত। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি হতভস্ব, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। জন্ম সনদ অনুযায়ী অনলাইন জন্মনিবন্ধনে এহেন অবস্থা তার। নিজেকে জীবিত প্রমান করতে দেশ বিদেশে টানা কয়েক মাস হয়রানি শেষে বিকল্প ব্যবস্থায় যদিও তিনি ই-পাসপোর্ট করতে সক্ষম হন। তবে পাসপোর্ট জটিলতা ঠিক করতে বাধ্য হয়ে দেশে আসা, জেলা নির্বাচন কমিশন ও জন্ম নিবন্ধন অফিসে মোটা অঙ্কের ঘুষসহ তার খরচ হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। ততক্ষণে সময় গড়িয়েছে অন্ততঃ ৬ মাস।
বিপ্লব গত ২০০৭ সাল থেকে সিঙ্গাপুর প্রবাসী। সেখানে রিকল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিঃ নামে একটি প্রতিষ্টানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। সম্প্রতি সিঙ্গাপুস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে তার সাথে পরিচয় পরবর্তীকালে তিনি ই-পাসপোর্ট করতে গিয়ে দূর্বিসহ হয়রানি ও কষ্টের কথা তুলে ধরেন এ প্রতিবেদককে। শুধু বিপ্লব একাই নয়, জন্ম নিবন্ধন কিংবা এনআইডিতে নাম ঠিকানা ভুলের খেসারত দিচ্ছেন সেখানের মোক্তার, ঝন্টুসহ অনেক প্রবাসী শ্রমিক। ভুক্তভোগী বিপ্লব জানান, গত ২০০৭ সালে তিনি ১০ বছর মেয়াদি এনালগ পাসপোর্টে সিঙ্গাপুরে আসেন। কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই তিনি আগের পাসপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে ৫ বছরের জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়ন করেন। এরপর মেয়াদশেষে ২০১৯ সালেও পাসপোর্ট নবায়ন করেন। কিন্তু জীবনের চরম শিক্ষাটি পান ২০২২ সালে ই-পাসপোর্ট করতে গিয়ে। হাঁড়ে হাঁড়ে টের পান দেশে বিদেশে বাংলাদেশী বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষের জন্য কতটা নির্দয় হতে পারেন।
বিপ্লব বলেন, সিঙ্গাপুরে যখন ই-পাসপোর্ট করতে যাই তখন দেখি অনলাইন জন্ম নিবন্ধনে আমার নাম নেই। পরে বার্থ সার্টিফিকেট অনুযায়ী সার্চ দিলে দেখি নাম ঠিকানা সবই ঠিক আছে। শুধু আমাকে মৃত দেখানো হয়। বিষয়টি সংশোধনের জন্য আমি তাৎক্ষনিক সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শরনাপন্ন হই। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও আগের জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট দেখাই। সেখানের কর্মকর্তারা এ ব্যাপাারে কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। তারা এ জটিলতা নিরসনে বাংলাদেশ সচিবালয় কিংবা মুন্সীগঞ্জ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী আমার বাবাকে মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন অফিসে পাঠাই। তারা জানিয়ে দেয়, মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা সম্ভব নয়। তবে তারা চাহিদা মতো টাকা পেলে ভিন্ন ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন করে দিতে রাজী হয়। ভিন্ন ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধনের বিষয়টি সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানো হলে সেখানকার কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ভিন্ন ঠিকানায় আগের পাসপোর্টের সাথে মিল রেখে ই-পাসপোর্ট না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। এক্ষেত্রে আরো আইনি জটিলতা বাড়বে। এতে করে আমাকে সিঙ্গাপুর ছাড়তে হতেও পারে। তিনি আমাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেশে গিয়ে এ সমস্যা সমাধান করার পরামর্শ দেন। দেশে ফিরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করি। সেখানের জন্মনিবন্ধন কর্মকর্তা পাসপোর্ট ও পুরাতন জন্ম নিবন্ধনের সাথে মিল রেখে নতুন নম্বরে একটি জন্ম নিবন্ধন করে দেন। সেটা নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)র জন্য আবেদন করি। কিন্তু একই নামে একই তারিখের দুই বার্থ সার্টিফিকেট থাকায় তার এনডি রিজেক্ট হয়।
বিপ্লব বলেন, এহেন পরিস্থিতিতে উল্টো উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তারা আমাকে প্রতারক হিসেবে চিহিৃত করে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের অফিসের ১০৫ নম্বরে কল করি। তাদের সব কিছু অবহিত করি। তারা বিষয়টি জটিল বলে উল্লেখ করেন। শেষে এনআইডি ঠিক করতে আবারও ফিরে আসি মুন্সীগঞ্জ নির্বাচন কমিশন অফিসে। তারা আমার ফিঙ্গারিংসহ ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য দুই সপ্তাহ পরে যোগাযোগ করতে বলেন। ছুটি না থাকায় আমি ফের ১০৫ নম্বরে ফোন করি। তারা ২দিন সময় নেন। কিন্তু ফিঙ্গারিং নিতে মোটা অঙ্ক দাবি করেন। এ পেক্ষিতে আমি স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতা নেই। তিনি স্ব-শরীরে যাবার পরেও মুন্সীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস অর্ধ লক্ষ টাকা নেন। এর এক সপ্তাহ পরে এনআইডি পাই। অনলাইনে এনআইডির কপি সংগ্রহ করে সিঙ্গাপুরে ফিরে আসি। ওই কপি দিয়ে ই-পাসপোর্টের আবেদন করি। সিঙ্গাপুরে ই-পাসপোর্টের জন্য ২শ’৪৫ ডলার নেয়ার কথা থাকলেও তাদের দাবিকৃত ৩শ’ ডলার দিতে বাধ্য হই। একমাস ১০ দিন পরে মেলে কাঙ্খিত ই-পাসপোর্ট।
বিপ্লব বলেন, শুধু জন্ম নিবন্ধনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সামান্য ভুলে আমার ৬ মাসের হয়রানির পাশাপাশি কম করে হলেও লাখ দশেক টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
প্রবাসে শুধু বিপ্লব একাই নয়। এ ধরনের হাজারো ভুক্তভোগী নিরবে হয়রানি সহ্য করছেন। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো সাধারনের সহযোগিতার জন্য নয়,তাদের প্রহর যেন শুধু ঘুষেরই জন্য।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু