২৮ অক্টোবর বাঁচা-মরার লড়াই
২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। আগামী মাসেই তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখনো একে অপরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল ও জোট। বিএনপিসহ এসব রাজনৈতিক দলের সাফ কথা নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোন নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না, তেমন কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। ফলে রাজপথে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা-উত্তাপ। এরই মধ্যে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চলেছে বিএনপি। আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিতে চায় দলটি। এই মহাসমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে সারাদেশে চলছে প্রস্তুতি সভা, সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গতকাল শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে দলের সিনিয়র নেতারাও ছুটছেন ঢাকার বাইরে। এসব সভায় দলের নেতাকর্মীদের বার্তা দিচ্ছেন এই মহাসমাবেশ দেশ, দেশের মানুষ, বিশেষ করে বিএনপির জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। দলটির নেতারা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল হলে সরকারের অস্তিত্ব থাকবে না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ২৮ তারিখের সমাবেশ সফল করতে পারলে অনেক কিছুর ফয়সালা হয়ে যাবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা, গণতন্ত্র মুক্ত হওয়া অনেক কিছুই ফয়সালা হবে। এই সমাবেশ অন্যান্য সমাবেশের মতো নয়। এটার গুরুত্ব অনেক, এই জন্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমকি দিয়েছে যে শাপলা চত্বরের মতো করা হবে। কারণ তারা ২৮ তারিখকে ভয় পাচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গতবছর ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ও চলতি বছরের ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি দুটি প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল করতে পারেনি বিএনপি। তবে ওই দুটি কর্মসূচির ব্যর্থতা ও অভিজ্ঞতায় এবার অনেকটা কৌশলী দলের নেতারা। সরকারের উদ্দেশ্যে কড়া কোন কথা না বলে বরং বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও মানুষের সমাগম ঘটাতেই মনোযোগী তারা। এজন্য ইতোমধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদেরকে বিভিন্ন জেলাভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে ঢাকার বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এসব নেতা জেলায় জেলায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করছেন এবং তাদেরকে মহাসমাবেশ নিয়ে কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। বিগত যেকোন সমাবেশের চেয়ে এটির গুরুত্ব যে, বেশি তা তুলে ধরছেন তারা। একই সঙ্গে বিগত দিনের মতো মহাসমাবেশ ঘিরে যে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক বাধা-প্রতিবন্ধকতা থাককে সেটিও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তারা। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বনের কথাও বলছেন বিএনপি নেতারা। তাছাড়া বিগত ১৫ বছর ধরে অত্যাচার-নির্যাতনের অবসান ঘটাতে এবং মুক্তি পেতে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনে জীবন বাজী রেখে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বানও জানানো হচ্ছে।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশ সফল করতে আজ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা করবে বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিববৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব, সকল বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকবৃন্দ, ঢাকা বিভাগের সকল মহানগর ও জেলা সমূহের সভাপতি/আহবায়ক/সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিববৃন্দ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি/আহবায়ক/সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিববৃন্দ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক ও সদস্য সচিব উপস্থিত থাকবেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে বানচাল করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নক আউট হয়ে গিয়েছিলো। জনগণ দমন, নিপীড়ন উপেক্ষা করে তৎকালীন সময়ে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাবেশ ঘটিয়ে সরকারের গালে চপটাঘাত করেছিল ১০ ডিসেম্বর। তাই ১০ ডিসেম্বরের চেতনায় ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে। বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত জনগণ মহাযাত্রা চালিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের চরম ক্রান্তিলগ্নে এক দফার আন্দোলন চূড়ান্ত ও যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অগণতান্ত্রিক সরকার এই আন্দোলন দমন করতে গ্রাম গঞ্জের নিরীহ, নিরাপরাধ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দিয়ে রাতের অন্ধকারে গ্রেফতার করছে। আমরা রাজনৈতিক ও আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে কিছু নেতাকর্মীদের মুক্ত করেছি। নেতাকর্মীদের মুক্তি আন্দোলনের শক্তি, গণ আন্দোলনে সাহস যোগাবে। প্রিন্স বলেন, ২৮ ডিসেম্বর মহাসমাবেশে বাধা দিলে সারা দেশেই মহাসমাবেশ ছড়িয়ে পড়বে। আওয়ামী লীগ সংঘাত সৃষ্টি করতে আসলে দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, সারাদেশের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকার জনগণও যেন মহাসমাবেশে সম্পৃক্ত হয় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। কারণ, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে এখন মানুষ এই সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। তারা এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই যেকোন ধরণের বিস্ফোরণ হলে তারা রাস্তায় নেমে আসবে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে নেতাকর্মীদের ফের মামলা ও গণগ্রেফতার চলানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী সরকারের চলমান দুঃশাসনেরই নিরবচ্ছিন্ন অংশ। রাষ্ট্রক্ষমতা সামলাতে নিশিরাতের সরকার এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকেও বরদাশত করছে না।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের ঘৃনা এতটাই তীব্র মাত্রা লাভ করেছে যে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের সুযোগ পেলে জনগণ তার উপয্ক্তু জবাব দিবে। সেজন্য জনমতকে অগ্রাহ্য করে জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে জোর করে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চায় আওয়ামী সরকার। আর সেজন্যই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোকে নানা পন্থায় দমন করতে অবৈধ সরকার সবধরণের নিষ্ঠুর পদ্ধতি গ্রহণ করছে। কতৃর্ত্ববাদী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল ক্সেত্রে চরম ব্যর্থতা সহ তাদের সকল অন্যায় এবং দেশবিরোধী কর্মকান্ড থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্নদিকে সরানোর জন্য বেপরোয়া গতিতে দেশব্যাপী বিএনপি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে শুরু করেছে। কিন্তু এভাবে নির্যাতন চালিয়ে আওয়ামী সরকার নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে না, কারণ জনগণ এখন ক্ষমতাসীন ফ্যাসিষ্ট সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। আওয়ামী অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাজপথেই অবস্থান করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের হিড়িক থামছেনা, আরও জোরদার করা হয়েছে। সুতরাং এটি অত্যন্ত সুষ্পষ্ট যে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন, দলবাজ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে না আসতে কি পরিমাণ নৃশংসতা চালাবে? তারই ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে। আবারও ভোটের আগের রাতে নৌকা মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলতে তারা সর্বোচ্চ রক্তাক্ত সহিংসতায় লিপ্ত থাকবে।
তিনি বলেন, গত ১৮ অক্টোবর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ৪৭ টি মামলা করা হয়েছে। এতে আসামী করা হয়েছে ১২ হাজার ৭৩০ জনকে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৬০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ১৮ অক্টোবর আংশিক কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করব। এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, ২৮ তারিখের মহাসমাবেশের পর আমরা আর থামব না। টানা কর্মসূচি চলবে। অনেক বাধা বিপত্তি আসবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে অশান্তির এ সরকারের পতন ঘটাব আমরা।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু