টানেল ঘিরে উচ্ছ্বাস
৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১২ এএম | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১২ এএম
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম সুরঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে গতকাল রোববার ভোর থেকে শুরু হয়েছে যানবাহন চলাচল। টানেল পাড়ি দিয়ে উচ্ছ্বসিত যাত্রী ও যানবাহন চালকেরা। প্রথম দিনে হরতালের কারণে যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও টানেলের দুইপ্রান্তে ছিলো উৎসবের আবহ। আনোয়ারা প্রান্তে ভোর ৬টায় প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দেন মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ী জুয়েল রানা। তার ইচ্ছে ছিল টানেলের প্রথম যাত্রী হবেন। এজন্য আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বের হয়ে পড়েন।
চলে যান কক্সবাজার। সেখান থেকে শনিবার রাতেই আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছে যান মাইক্রোবাস নিয়ে। অপেক্ষায় থাকেন টানেলে প্রবেশের। ভোর ৬টায় সুযোগ পান। প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দেন তিনি। টানেলে ঢুকেই উল্লাসে ফেটে পড়েন তারা। এরপর দ্বিতীয় যাত্রী হিসেবে আনোয়ারা প্রান্তে টোল দেন চালক শফিক আলম। মো. জাকারিয়া নামের এক বিমান যাত্রীকে নিয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান তিনি। ৩ মিনিটে কর্ণফুলী পার হয়ে আবেগাপ্লুত শফিক আলম বলেন, এত দ্রুত পৌঁছে যাব তা স্বপ্নেও ভাবিনি, স্বপ্ন এখন সত্যি। নিজেই গাড়ি চালিয়ে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে টানেল পাড়ি দিয়ে আনোয়ারায় যান আনিতা মুবাশ্বিরা।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলক উন্মোচনের পর পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে টোল দিয়ে আনোয়ারায় পৌঁছেন। এরপর গতকাল সকাল থেকে যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয় দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম এ সড়ক টানেল। সকাল থেকে ১০ ঘণ্টায় টানেল পার হয়েছে এক হাজার ১৬১টি গাড়ি। টোল আদায় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও পর্যটন শহর কক্সবাজারের সাথে সড়ক যোগাযোগ সহজতর করতে চীনের আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায় ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় দেশের প্রথম এই সুড়ঙ্গপথ। নদীর তলদেশ দিয়ে যানবাহন চালিয়ে টানেল পার হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। প্রথম দিনেই টানেল পাড়ি দিতে তাই দুই পাড়ে হাজির হয় অনেক যানবাহন। নদীর তলদেশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আপ্লুত হন চালকেরা। গাড়ির যাত্রীরাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। যাত্রাপথে সময় কমে যাওয়ায় খুশি চালক ও যাত্রীরা। দুই প্রান্তেই ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। তারা ঘুরেফিরে দূর থেকে টানেল দেখতে যান।
পতেঙ্গা প্রান্তে ভোর ছয়টায় দুলাল সিকদার প্রথম টানেলে প্রবেশ করেন। প্রথম যাত্রীবাহী বাস হিসেবে টোল দিয়ে টানেল পাড়ি দেয় মারশা পরিবহনের একটি বাস। এছাড়া বিডি বাস লাভার গ্রুপের একটি বাসও পতেঙ্গা প্রান্ত দিয়ে টানেল পাড়ি দেয়। টানেলে প্রবেশের জন্য উভয় প্রান্তে রাত থেকে অপেক্ষায় ছিল প্রায় শতাধিক গাড়ি। তবে পতেঙ্গা প্রান্তের চেয়ে আনোয়ারা প্রান্তে গাড়ির চাপ ছিল বেশি। বিডি বাস লাভার গ্রুপের তরুণ-যুবকরা ফুল ও কাপড় দিয়ে সাজানো বাসটি নিয়ে টানেল পাড়ি দেন। তারা জানান, টানেল পাড়ি দিতে তারা রাত ১২টা থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে অপেক্ষা করছিলেন। ভোর ৬টায় টানেল খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাস নিয়ে প্রবেশ করেন তারা।
টানেলটি খুলে দেওয়ার প্রথম দু’ঘণ্টার মধ্যেই শতাধিক গাড়ি টানেল অতিক্রম করে এবং প্রায় ৩০ হাজার টাকা টোল আদায় হয়। প্রথমদিনের শুরুতে যানবাহনের চাপ বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। হরতালের কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শুরুতে ব্যক্তিগত যানবাহনই বেশি দেখা গেছে, যাদের অনেকেই বিমানবন্দরের যাত্রী। দূরপাল্লার বাস কিংবা পণ্যবাহী পরিবহন তেমন ছিল না। হরতালের কারণে ঢাকা থেকে কক্সবাজারমুখী দূরপাল্লার বাস ও পণ্যবাহী পরিবহন কিছুটা কম চলাচল করছে।
কক্সবাজার থেকে আসা পণ্যবোঝাই প্রাইম মোভার এক হাজার টাকা টোল দিয়ে আনোয়ারা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে টানেলে। সেটি পতেঙ্গা দিয়ে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। লরিচালক ফিরোজ বলেন, আগে তো আনোয়ারা পর্যন্ত এসে কর্ণফুলী সেতু পার হতে হতো। তারপর শহরের ভেতরে আরও প্রায় ঘণ্টাখানেক চালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে উঠতে হতো। এখন আনোয়ারা থেকেই সরাসরি পতেঙ্গা হয়ে ফৌজাদরহাট গিয়ে মহাসড়কে উঠতে পারছি। সময় দু’ঘণ্টা কম লেগেছে।
টানেল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, টানেল ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। গভীর রাতে যানবাহন চলাচল সাধারণত কম থাকে। তখন লেন কমিয়ে দেওয়া হবে। এরপরও কোনো যানবাহনকে অপেক্ষা করতে হবে না। টানেলের ভেতরে গতি যাতে ৬০ কিলোমিটার থাকে, কোনো যানবাহন যাতে ধীরগতি না হয় বা দাঁড়িয়ে না থাকে, দুই চাকা ও তিন চাকার কোনো যানবাহন যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
টানেলে প্রাইভেট কার, জিপ ও পিকআপকে টোল দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা করে। আর মাইক্রোবাসের জন্য ২৫০ টাকা। ৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে। ৫ টন পর্যন্ত ট্রাককে ৪০০ টাকা, ৫ দশমিক ১ টন থেকে ৮ টনের ট্রাককে ৫০০, ৮ দশমিক ১ টন থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে। তিন এক্সেলবিশিষ্ট ট্রাক-ট্রেইলরের টোল ৮০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রাক-ট্রেইলরকে দিতে হচ্ছে ১০০০ টাকা। এর বেশি ওজনের ট্রাক-ট্রেইলরকে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হবে। চালুর প্রথম ১০ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৬১ টি গাড়ি চলাচল করেছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৫০ টাকা।
টানেলের ভেতরে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চৌকস টিম। আর দুই পাড়ে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। হরতালের কারণে গতকাল দুই প্রান্তেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের
পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম
ধর্ষণের প্রতিশোধে বাবাকে হত্যা, গ্রেফতার ২ কিশোরী
আমাকে ধর্ষণ করার ভিডিও দেখে স্বামী
হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই
ফিলিপাইনে ৪০০ বিদেশি অনলাইন প্রতারক গ্রেফতার
ইসরাইলি ৪শ’ সেনা নিহত গাজায় স্থল অভিযানে
কুষ্টিয়ায় কৃষি যন্ত্র বিতরণে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক
জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করতে হবে
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ
ভোলায় শীতার্তদের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরণ
গাজীপুরে বিএনপি নেতার উপর হামলা
চাঁদপুরে হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম গ্রেপ্তার
বিভিন্ন বিভাগ ছোট হচ্ছে পাকিস্তানে
আশুলিয়ায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে দোকানীকে গুলি
গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স
৪ ভূখ-কে অন্তর্ভুক্ত করে ইসরাইলি মানচিত্র প্রকাশ
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
চলতি বছর বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমার পূর্বাভাস
যুক্তরাষ্ট্রের নাম মেক্সিকান আমেরিকা রাখার পরামর্শ