ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করলে আমিও সংলাপ করব বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার

খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ : প্রধানমন্ত্রী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

বিএনপিকে খুনী দল উল্লেখ করে দলটির সঙ্গে কীসের সংলাপ হবে বলে প্রশ্ন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খুনীদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক? খুনীদের সঙ্গে আবার কীসের আলোচনা? গতকাল বেলজিয়াম সফর নিয়ে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিএনপিকে শিক্ষা দেওয়া হবে বলে এ সময় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি আশা করবো তারা এগুলো (সহিতংসতা) বন্ধ করবে, না হলে তার পরিণতি তাদের ভোগ করতে হবে। এবার এমনি এমনি যেতে দেব না।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে শর্তহীন সংলাপে বসার কথা বলেছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কি? এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলের সঙ্গে। বিরোধী দলটা কে? সংসদীয় নিয়মে বিরোধী দলের একটা সংজ্ঞা আছে। বিরোধী দল হচ্ছে, সেই দল যাদের সংসদে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, সংসদ সদস্য আছে। এটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। এর বাইরের গুলো দল হিসবে পরিগণিত হয় না। আমেরিকায়ও হয় না। ট্রাম্পকে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কী বলবে? যদিও আমরা তাদের ব্যবস্থায় নাই। এটা মাথায় রাখতে হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সম্প্রতি বিএনপির আন্দোলনে মানুষ মারা যাওয়া নিয়ে কেন প্রশ্ন করা হলো না সে বিষয়ে জানতে চান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ যে মানুষগুলোরে হত্যা করা হলো, তাকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) একটা প্রশ্ন করা হলো না কেন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে। যখন একটা উপনির্বাচনে একটা ঘটনা ঘটেছে; সেই হিরো আলমের মেরেছে, তখন তারা দাবি করেছিল। কিন্তু এখন যখন পুলিশ হত্যা করল। এতগুলো সাংবাদিককে মারল। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এটার বিচার দাবি করল না কেন? বিএনপিসহ বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকায় ট্রাম্পেরে সঙ্গে কি বাইডেন সংলাপ করে? যে দিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করবে সেদিন আমিও সংলাপ করব।

শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক। খুনিদের সঙ্গে আবার কীসের আলোচনা? যারা মানুষের সম্পদ নষ্ট করেছে, যারা আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নষ্ট করতে পারে, তাদের সঙ্গে ডায়লগ? সে বসে ডিনার খাক (মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে উদ্দেশ্য করে)। ডায়ালগ করুক। এটা আমাদের দেশ। আমরা স্বাধীনতা এনেছি, রক্ত দিয়ে। ওই খুনীদের সঙ্গে ডায়লগ এটা আমাদের বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বরং বাংলাদেশের মানুষ এখন বিএনপি-জামায়েতকে ঘৃণা করে, তাদের এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। তারা যেটুক অর্জন করেছিল, এখন সেটুকুও হারিয়েছে। এখন মানুষের কাছে তারা ঘৃণার পাত্র। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আজকে যে তারা (বিএনপি) পুলিশ যারা, এভাবে আগুন লাগালো, ধ্বংস করলো তখন তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চুপ কেন? আমাদের দেশের যে সংস্থাগুলো, বুদ্ধিজীবি, যারা বুদ্ধি বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করে-বুদ্ধির ভান্ডার, আজকে সেই ভান্ডার বন্ধ কেন? তাদের মুখ চুপ কেন?

বিএনপির আন্দোলনে সহিংতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল, এটাই তারা আবার প্রমাণ করলো। কানাডার কোর্ট কিন্তু এ বিষয়টি কয়েকবারই বলেছে। মাঝখানে তারা (বিএনপি) কিছুটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করছিল। আমাদের সরকার তাদের কোনো বাধা দেয়নি। তাদের ওপর একটি শর্ত ছিল তারা যেন অগ্নিসন্ত্রাস-ভাঙচুর, এগুলো করবে না। তারা যখন সুষ্ঠুভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসও ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ তারিখে তাদের যেই ঘটনা, বিএনপি যে সমস্ত ঘটনা ঘটালো, বিশেষ করে মাটিতে ফেলে পুলিশকে যেভাবে কোপালো, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, এই ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছু জুটবে না।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানেও পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। আজকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর যেভাবে হামলা করছে, এখানে হাসপাতালে বোমা হামলা করল, নারী শিশুদের অত্যাচার করেছে, তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। আমি তো মনে করি, এর তফাৎ কিছু দেখতে পারছি না। বিএনপির অবরোধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিসের অবরোধ কার জন্য অবরোধ। দেশে যখন উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব প্রশংসা করছে তখন তাদের কাজটাই হলো এদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের সম্পদ নষ্ট করা আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এটাই বিএনপির চরিত্র। এবং সাংবাদিকদের ওপর যে তারা চড়াও হলো, আমি বুঝতে পারলাম না। কারণ সাংবাদিকরা তো তাদের পক্ষেই ভাল ভাল নিউজ দিচ্ছিলো, টকশোতেও ভাল ভাল কথা, বরং সব কিছুতে সরকারের দোষটাই বেশি দেখে। তাহলে সাংবাদিকদের ওপর কেন, আমি বুঝতে পারলাম না। প্রত্যেকটা টেলিভিশন চ্যানেল আমিই দিয়েছি কিন্তু সেখানে তাদের নিউজ যায় সবার আগে বরং আমার নিউজ যায় অনেক পরে।

বিএনপি ২০১৩ সালের দিকে একই রকম অগ্নী সন্ত্রাস করেছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সে সময় ৩ বছর ধরে তাদের এই অগ্নী সন্ত্রাস। তিনি বলেন, এদের (বিএনপি-জামায়াত) মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব বোধ নেই। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদে এরা বিশ্বাস করে। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে এদের জন্ম। বিএনপি নির্বাচন চায় না দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, এরা তো আসলে নির্বাচন চায় না। এরা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তিনি আরো বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। কাজেই সন্ত্রাসীদের কিভাবে শিক্ষা দিতে হয়, সে শিক্ষাটাই আমাদের এখন দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এবং সেই শিক্ষাটাই আমরা দেব। এদের জন্য দেশটা ধ্বংস হবে এটা সহ্য করা যাবে না। এবং যাদের বাস পুড়িয়েছে সেটা আমরা দেখবো বলে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির আন্দোলনে সংহিংসতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যেভাবে একটা পুলিশকে মেরেছে, ওরা কি মানুষের জাত নাকি! তাদের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডের রেকর্ড করা আছে। তিনি আরো বলেন, ওরা এখানে- ওখানে গাড়ী পোড়াচ্ছে। যারা গাড়ী পোড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা এবং গ্রেফতার করা এবং শান্তি দেওয়া হবে। আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয় তার হাতটাও আগুন দিয়ে পোড়ায় দেওয়া উচিত। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে। আমি আশা করবো, তারা এগুলো বন্ধ করবে না হলে এর পরিণতি তাদের ভোগ করতে হবে। এবার এমনি এমনি যেতে দেব না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আগুন দিচ্ছে, তাদের অনেকে জামিন পেয়ে গেছে।’ এবারে আমরা চেষ্টা করবো যারা এমন কাজ (আগুন দেওয়া) করছে তাদের দ্রুত সাজাটা দিয়ে উচিত শিক্ষা দেওয়ার। কারণ এভাবে আগুন লাগাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

নির্বাচন হবে কী না এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথাই বলবো যে নির্বাচন হবে এবং সময়মতই হবে। কে চোখ রাঁঙ্গালো, আর কে বাঁকালো ওটা নিয়ে আমরা পরোয়া করি না। তিনি বলেন, বিএনপি ১৩ সালেও নির্বাচন এভাবে (আগুন দিয়ে) থামাতে পারে নি, এবারও পারবে না। তারা নির্বাচন থামাতে পারবে না।

নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা অথবা ইংল্যান্ডে যেভাবে তেমনই হবে। শুধু আমাদের আরপিও অনুযায়ী যখনই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে তখন থেকে আর কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা মন্ত্রীরা ব্যবহার করতে পারবে না। কোন রকম সরকারি সুবিধা নিতে পারবে না। তখন একজন প্রার্থী হিসেবেই তাদের ভোট চাইতে হবে। কিন্তু সরকার থেমে থাকবে না। সরকারের রুটি কাজ চলবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে সে দিকে আমরা যাচ্ছি না। আমি এটা ইংল্যান্ডেও আলাপ করেছি, তাদেরটা দেখেছি। অষ্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ যে দেশগুলোতে সংসদীয় প্রদ্ধতি রয়েছে, সেইভাবে করা হবে। অর্থ্যাৎ সে সময় আমরা যারা থাকবো, আমরাই নির্বাচকালীন সরকার হিসেবে রুটিন ওয়ার্ক করবো। নির্বাচনকালীন সরকারের আকার নিয়ে তিনি বলেন, সেটা তখন দেখা যাবে। তবে তিনি জানান, আকার ছোট করলে সমস্যা হয়। অনেক মন্ত্রনালয়ের কাজ আর হয় না। কাজগুলি বাঁধাগ্রস্থ হয়ে যায়। যা তা যাতে না হয়, আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা থাকে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান