বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় : প্রধানমন্ত্রী
০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। বিগত বছরগুলোতে আমরা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। যার মধ্যে রয়েছে-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহজীকরণসহ আরো অনেক কিছু। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে আমাদের অর্জন দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আজ তিনটি ভারত-সহায়ক উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনন্য সাধারণ বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রমাণ দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
গতকাল বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভারতের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং নয়াদিল্লি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা (ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমি) আজ যৌথভাবে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। এটি আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যকার অনন্য সাধারণ বন্ধুত্ব ও পারষ্পরিক সহযোগিতারই বহি:প্রকাশ। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশাবাদী সামনের দিনগুলোতে আমাদের যৌথ সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্বরুপ আরো এমন অনেক সাফল্যের উদাহারণ তৈরি হবে যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে। প্রতিবেশির সঙ্গে যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখলে দেশের উন্নতি হয়, আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি। আমি মনে করি বিশে^র জন্য এটা একটা দৃষ্টান্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেন,এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, আমরা আবার ভারত-বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতা উদযাপন করতে একত্রিত হয়েছি। আমাদের সম্পর্ক আপাত দৃষ্টিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত,সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। তিনটি প্রকল্প হচ্ছে-আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইতিহাস,সংস্কৃতি এবং ভাষা দ্বারা আবদ্ধ। আমাদের দুই দেশই ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রসহ অগনিত বিষয়ে অভিন্ন মূল্যবোধ পোষণ করে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সে সময় তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এই দুটি খাতে বাংলাদেশের অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য তিনি ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো এবং উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশের জনগণ ও তাঁর তরফ থেকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় করতে আপনার আন্তরিকতার জন্যও আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আজকে যে তিনটি প্রকল্প আমরা উদ্বোধন করেছি তা উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। এই প্রকল্পগুলো আঞ্চলিক যোগাযোগের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আমি বিশ^াস করি। তিনি বলেন, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টটি আরো সাশ্রয়ী মূল্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ অবদান রাখবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্যান্য ব্যয়বহুল উৎসের ওপর থেকে আমাদের নির্ভরতাকে কমিয়ে নিয়ে আসবে। পাশাপাশি সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়তা করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ আমাদের দু’দেশের জনগণের মধ্যে বিশেষকরে ভারতের উত্তর পূর্ব অংশের সঙ্গে সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ প্রকল্পটি মোংলা বন্দরকে বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সারাসরি যুক্ত করবে। এতে করে আমাদানীকৃত কন্টেনারইগুলো সহজেই রেলের সাহায্যে দেশের উত্তরপূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সম্ভব হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতের জনগণ যাতে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দু’দেশের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক বাস্তব ফলাফল অর্জন করেছি। যারমধ্যে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য রাজ্যসমূহের সাথে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সংযোগ সহজিকরণ প্রভৃতি। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরজীবী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে আসন্ন দীপাবলী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতের জনগণকে তাঁর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
যোগাযোগ খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য সর্বমহলে প্রশংসিত॥
এদিকে বিকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের যোগাযোগ খাতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে তা সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বুধবারের প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে উন্নত, দক্ষ ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার খাত হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, সুগম ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে সড়ক ও রেলপথের সম্প্রসারণ ও সংস্কার চলমান রয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজনতিক দল সড়ক, রেল, বিমান ও নৌপথ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি (রূপকল্প ২০২১ ও রুপকল্প ২০৪১) সামনে রেখে তা বাস্তবায়নে কাজ করছে।
আওয়ামী লীগ দলীয় আরেক সংসদ সদস্য মো. হাবিবর রহমানের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে আমি ১৫তম ব্রিকস সামিটে যোগদান করি এবং গত ২৪ আগস্ট ‘ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ’ এ বক্তব্য প্রদানকালে ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আহ্বান জানাই। সরকারপ্রধান বলেন, প্রথমত: আমাদের অবশ্যই চলমান খাদ্য, জ্বালানি এবং নারী ও কন্যাশিশুদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার আর্থিক সংকটের কারণে উদ্ভূত বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত: আমাদের মেয়েদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য, তাদের সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, তৃতীয়ত: নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, শালীন কাজের সুযোগ, মজুরির সমতা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়াতে হবে। চতুর্থত: ক্রমবর্ধমান জলবায়ু প্রভাবের কারণে সুরক্ষা এবং সহনশীলতা নিশ্চিতকরণে নারীদের প্রয়োজনীয়তার দিকে আমাদের গভীরভাবে নজর দিতে হবে। পঞ্চমত: আমাদের অবশ্যই নারীদের জন্য টেকসই ও সক্রিয় রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গঠনের একটি সুষম প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র গড়ার প্রচারণা চালাতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীতার্তদের পাশে জামায়াত
সালথায় রাতের আঁধারে কৃষকের পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন
রাণীশংকৈলে মারামারি ও ভাংচুরের মধ্য দিয়ে শেষ হলো জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির শুটিং
ওসি শাহ আলমকে কত টাকার বিনিময়ে ছেড়েছে, প্রশ্ন হান্নান মাসউদের
দৌলতখানে ছাত্রদলের মাদক বিরোধী র্যালি ও আলোচনা সভা
৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে লাকসামে বিএনপির জনসভা
এক ট্রলারেই ১৯৫ মণ ইলিশ, ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি
শিবচরের পদ্মায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে গ্রেপ্তার ২
গার পাহাড় সীমান্তে শাড়ি-লেহেঙ্গা, সানগ্লাসসহ ২ কোটি ৩২ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টপকে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করতে যাচ্ছে ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজ
নরসিংদীতে সাদপন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
ঈশ্বরগঞ্জে শীতার্তদের মাঝে বিএনপি নেতার কম্বল বিতরণ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মুচলেকা ও জরিমানার পরও বন্ধ হয়নি ইট ভাটা
ফরিদপুরের জেলার সকল অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে গেট স্থাপনের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি পাতিল যাচ্ছে বিদেশে
রাণীনগর উপজেলা পরিদর্শনে এসে শীতার্তদের শীতবস্ত্র দিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল
রাজশাহীর চারঘাটে আ.লীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম
উন্নতির জন্য ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ চান ফাহিম
দৌলতদিয়া স্রোত ও নদী ভাঙনের কারণে লোকসানের মুখে ঘাট ইজারাদার
রাজশাহীতে সাদপন্থীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত