তল্লাশির নামে পুলিশের হয়রানি অভিযোগ
০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
রাজধানীতে পুলিশি তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। দিনে কিংবা রাতে সড়কে টহল পুলিশ গণহারে তল্লাশি করে। কখনো অপরাধ দমনের নামে, কখনো বিশেষ অভিযানের জন্য বসানো হয় চেকপোস্ট। ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোন চেক করার নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ সব চেকপোষ্টে জোর করে আদায় করা হচ্ছে টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন জনবহুল এলাকা, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেল স্টেশন এলাকা এবং বিভিন্ন থানার অলিগলিতে তল্লাশির নামে চলছে হয়রানি, ভোগান্তি।
আইনজীবী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, কারও আচরণ ও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলেই তাকে তল্লাশি করা যাবে। তবে, তল্লাশির ক্ষেত্রে কমপক্ষে দু’জন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও মালামাল জব্দ করতে হলেও একই নিয়ম মানতে হবে পুলিশকে। এছাড়া, তল্লাশির সময় পুলিশ দলের নেতৃত্বেও কমপক্ষে একজন সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকতে হবে। আর এ তল্লাশিতে কেউ বাধা দিলে, তাকে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ থানায় নিয়ে যেতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তল্লাশির ক্ষেত্রে পুলিশ ডিএমপি অধ্যাদেশের ১০০ ধারার ব্যবহার বেশি করে থাকে। এ ধারাটি বিতর্কিত ৫৪ ধারার বিকল্প হিসাবেই তল্লাশি এবং আটকের সময় পুলিশ ব্যবহার করে। গত ২ নভেম্বর রাত পৌনে ১১টা। মগবাজার থেকে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হামিদুর রহমান। মগবাজার ওয়্যারলেস গেট পৌঁছলে পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়েন। তিনি তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে বলেন, একজন পুলিশ সদস্য সিগন্যাল দিয়ে বললেন, এই রিকশা থাম। চালক রিকশা থামাতেই ওই পুলিশ সদস্য বললেন, নামেন নামেন। তাড়াতাড়ি নামেন, চেক করব। আমি জানতে চাইলাম, আমি কি অপরাধী? আমাকে চেক করবেন কেন? এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পুলিশের একজন কনস্টেবল এরপরও পরিচয় নিয়ে টানা-হ্যাঁছড়া করে। আমার মতো আরও অনেককেই তিনি হেনস্তা করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি থানার ওসি গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের অবরোধের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছি। কোনো নাগরিককে হয়রানির জন্য নয়। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অহেতুক কোনো নাগরিককে হয়রানির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশ তল্লাশির নামে মোবাইল, পকেট চেক, মানিব্যাগ চেক করে। অপ্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্ন করে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। পরিচয় জানার পরও নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো বেশকিছু সময় তাকে ঘিরে রাখে। কেউ অসুস্থ হলেও শুধু সন্দেহের বশে তল্লাশি করেন তারা। মোবাইলে বিএনপি বা বিরোধী রাজৗনৈতিক দলের কোন নেতা বা সমাবেশের ছবি ফেলেই গ্রেফতার করে। তবে অধিকংশ সময়েই টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ৫৪ ধারার পরিবর্তে বেশিরভাগ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ৮৬ ও ১০০ ধারা প্রয়োগ করা হয়। এই দুই ধারায় পুলিশ কোনো পরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করতে পারে। পুলিশ এই দুই ধারাকে অনেকটা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।
৩০ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টা। সবুজবাগ থেকে কাজ শেষে নারায়নগঞ্জ বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হন মফিজুর রজমান। তিনি রিকশায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গেলেই পুলিশ তার গতিরোধ করে। একজন পুলিশ সদস্য বলেন, এই দাঁড়ান, দাঁড়ান। মফিজুর রহমান বলেন, দাঁড়াতেই প্রশ্ন শুরু করলেন-কি করেন, কোথা থেকে আসলেন। কোথায় যাবেন? বিনয়ের সঙ্গে বললাম সবুজবাগে কাজে এসেছিলাম। বাড়িতে যাব। পকেটে কী? বলেই দেহ তল্লাশি করতে শুরু করলেন তারা। এরপর আমার শার্টের কলার, প্যান্টের নিচের পায়ের মুড়িভাঙা জায়গাসহ পায়ের মোজা পর্যন্ত তল্লাশি করেন। এরপর পুলিশ আমার মোবাইল হাতে নিয়ে নিজেরাই দেখতে শুরু করেন। এমনকি মোবাইলের কভার খুলে চেক এবং মানিব্যাগ হাতে নিয়ে টাকা বের করে তা নাক দিয়ে শুকে চেক করলেন। আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছিলেন আর হাসছিলেন। এভাবে ২০-২৫ মিনিট ধরে তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলেন।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, কারও আচরণ ও গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’ মনে হলে তাকে তল্লাশি করে পুলিশ। তবে নিয়ম মেনে তল্লাশি করতে হবে। তল্লাশির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারা অনুযায়ী কমপক্ষে দুজন গণ্যমাধ্য ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো মালামাল জব্দ করতে হলেও পুলিশকে একই নিয়ম মানতে হবে। এছাড়া তল্লাশির সময় পুলিশ টিমের নেতৃত্বে কমপক্ষে একজন এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে থাকতে হবে।
তল্লাশির বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নুর খান লিটন বলেন, সন্দেহটা উপযুক্ত হতে হবে। মানুষকে হয়রানি করার মতো কোনো কিছুই উচিত নয়। বিশেষ করে নির্দিষ্ট তথ্য ব্যতিরেকে ঢালাওভাবে মানুষকে তল্লাশির নামে হয়রানি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটি শুধু মানবাধিকারের বিষয় নয়, আইনের চোখেও এটি এক ধরনের ব্যত্যয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশ অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চেকপোস্ট বসায়, তল্লাশি করে। নিশ্চয়ই কাউকে কষ্টে ফেলার জন্য তল্লাশি নয়। পুলিশের কাছে কোনো জায়গায় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে তথ্য থাকলে তবেই পুলিশ তল্লাশি চালায়। তিনি বলেন, অবৈধ কোনো কিছু পাচার, মাদক বহন, অস্ত্র বহন কিংবা কোন অপরাধীর মুভমেন্ট থাকার তথ্য থাকলে সে ক্ষেত্রে পুলিশ তল্লাশি করতেই পারে। তবে নিশ্চয়ই মানুয যাতে কোনো প্রকার কষ্টের শিকার না হন, হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইচ্ছাকৃত কোনো হয়রানি আমরা প্রশ্রয় দেই না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শিশু মুনতাহার কি অপরাধ?
ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারলে নোবেল পাওয়া উচিৎ : মাত্তেও সালভিন
গাজায় বর্বর হামলা অব্যাহত, নিহত আরও ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত
আজ থেকে রাজধানীর ১৩ স্থানে সুলভমূল্যে মিলবে ডিম
আজ শহীদ নূর হোসেন দিবস
অসুস্থ পলক ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি
যশোর আর্মি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দম্পতিকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়, আটক ১
কাউন্সিলর কাশেম মোল্লা ৯ বছরে শতকোটি টাকার মালিক
শেখ হাসিনার কথিত অডিও ক্লিপের নির্দেশনা বাস্তবায়নকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর আ. লীগ কার্যালয় থেকে আটক ১
রাজধানীর জিরো পয়েন্টে ছাত্রদলের মিছিল
যশোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারীসহ দু’জন নিহত
মধ্যরাতে হানিফ ফ্লাইওভারে চলন্ত ট্রাকে আগুন
যশোর জেনারেল হাসপাতালে টেন্ডার নিয়ে তত্বাবধায়ক লাঞ্ছিত, ২ নেতা বহিষ্কার
সল্টের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল উইন্ডিজ
নুনেজ-সালাহ নৈপুণ্যে জিতে পয়েন্ট ব্যবধান বাড়াল লিভারপুল
ছন্দ হারানো সিটি হারল ব্রাইটনের কাছেও
হাঁটুর চোটে মৌসুম শেষ মিলিতাওয়ের
ভিনির হ্যাটট্রিক,বেলিংহ্যামের গোলে ফেরার রাতে রিয়ালের জয়
রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা