ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
কোম্পানির কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকা দমনে ব্যর্থ

পোকায় খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া থেকে

০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় রোপা আমন ধানের খেতে ব্যাপকভাবে বেড়েছে মাজরা ও লিফ ফোল্ডার পোকার আক্রমণ। কোম্পানির কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকা দমনে ব্যর্থ হয়ে এখন দিশেহারা চাষিরা। পোকা দমন বা নিধনে কৃষি অফিসের কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না বলে কৃষকের অভিযোগ। কৃষকরা তাদের রোপা আমন খেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। কিন্তু কিছুতেই প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষকরা।
ভেড়ামারা উপজেলার জগশ্বর গ্রামের কৃষক বাচ্চু মণ্ডল বলেন, চার বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান ৮৭ ও ৪৯ জাতের ধান রোপণ করেছি। ধানের গাছও ভাল হয়েছে। কিন্তু পোকার আক্রমণে ধান গাছের মূলকাণ্ড শুকিয়ে যাচ্ছে এবং পাতা খেয়ে ফেলছে। স্থানীয় দোকান থেকে কীটনাশক কিনে খেতে স্প্রে করেছি কিন্তু কোনো উপকার হয়নি।
কৃষক সবুজ আলী বলেন, ইউনিয়নভিত্তিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা মিলছে না মাঠে। বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির লোকজন এসে যতটুকু পরামর্শ দিচ্ছেন শুধুমাত্র সেভাবেই ধানের জমিতে পরিচর্যা করছি। পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই না পেলে ধানে ফলন কম হবে এবং লোকসান হবে আমন ধান আবাদে। কীটনাশক বিক্রেতারাই এখন তাদের পরামর্শদাতা।
উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব জমির আমন ধানের গাছে ব্যাপকভাবে মাজরা ও লিফ ফোন্ডার বা পাতা মরা (লেদা) পোকাসহ পাতাখাদক পোকা আক্রমণ করেছে। মাজরা পোকার আক্রমণের কারণে অধিকাংশ ধানগাছের পাতা মরে হলুদ রং ধারণ করেছে। কোনো কোনো জমির ধানগাছ প্রায় পাতাশূন্য হয়ে মরে যাচ্ছে। মাজরার পাশাপাশি ধানগাছে ঘাসফড়িং পোকারও আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো ধানে অজানা পোকার আক্রমণে ধানে শীষ হলেও সেটা চিটায় পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়াও ‘ফলস স্মার্ট’ বা আঞ্চলিক ভাষায় ‘লক্ষ্মির গু নামে এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে ধানের শীষ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। পোকা দমনের জন্য প্রায় সব কৃষকই কীটনাশক বিক্রেতাদের পরামর্শে দানাদার, পাউডার ও তরল জাতীয় নানান রকম কীটনাশক ব্যবহার করছেন। কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পোকার আক্রমণ। মাজরার পাশাপাশি ধানগাছে ঘাসফড়িং পোকারও আক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
জগশ্বর গ্রামের কৃষক শুকুর আলী মণ্ডল বলেন, এর আগে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যে আমাদের মাঝে দেখা গেলেও ইদানিং তাদের আর খোঁজ নেই। আমরা কোম্পানির কর্মীদের কথা মতো বিষ দিলেও হচ্ছে না উপকার। বিঘা প্রতি প্রায় ৩ হাজার টাকার বিষ লাগছে। কৃষি অফিসের তারা সকালে এসে স্থানীয় সার ও কীটনাশকের দোকানে আড্ডা দেয়। কিন্ত মাঠ পর্যায়ে কোনো কাজ করতে দেখা যায় না। আমরা তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হই।
ভেড়ামারা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদা সুলতানা বলেন, উপজেলায় খরিপ-২ ২০২৩-২৪ উৎপাদন বর্ষে হাইব্রিড, উপশী ও স্থানীয় জাতের আমন ধানের আবাদ লক্ষমাত্রা ছিল ৬৫৩৫ হেক্টর আবাদ হয়েছে ৬৫৩২ হেক্টর জমিতে। ধানের সমস্যা বিষয়ে নিয়মিত কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক ও মাঠ দিবস করা হচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাঠ তদারকিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় ধান খেতে মাজরা পোকার, আক্রমণের কথা বলা হচ্ছে, সেই এলাকায় আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের বিষয়ে আমাকে কোনো কৃষক জানায়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব। তবে, কৃষকরা নিম্নমানের কম দামের কীটনাশক ব্যবহার করায় তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান