ফিলিস্তিনে আগ্রাসন-প্রথমাংশ

ইউরোপে বিতাড়িত হয়ে ফিলিস্তিনে আশ্রয় নিয়েছিল ইসরাইলিরা

Daily Inqilab আল জাজিরা

০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

হামাসের একটি মারাত্মক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েল তার নৃশংস বোমা হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, এর ফলে, ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের নিয়মিত হামলা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে আটটিতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি আল জাজিরায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত দীর্ঘ প্রতিবেনটি ২ পর্বে উপস্থাপন করা হল।

ফিলিস্তিনে ৭ লাখেরও বেশি ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী, যা ইসরায়েলের প্রায় ৭০ লাখ জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, এখন ইসরাইলের অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের অধিকাংশই দখল করে নিয়েছে। এদের বেশিরভাগ বসতিই সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিপিড়িত ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত জমিতে নির্মিত হয়েছে। ইসরাইল ১৯৬৭ সালের জুনে ছয় দিনের যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকা দখল করার পরই অঞ্চলগুলিতে তার বসতি স্থাপন করা শুরু করে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ইসরায়েলি ইহুদিদের একটি গোষ্ঠি বলেছে যে, তাদের বসতিগুলি ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি নিয়ামক হিসাবে কাজ করে, কারণ তারা এর মাধমে ফিলিস্তিনিদের চলাচলকে সীমাবদ্ধ করে রাখে এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় ৪০ শতাংশ জমিই এখন ইসরাইলি দখদারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সমালোচকদের মতে, এই বসতিগুলি কার্যকরভাবে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি অংশগুলিকে পরস্পরের থেকে আলাদা করে দিয়ে ভবিষ্যতের সংলগ্ন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।

ফিলিস্তিনে প্রথম ইহুদি দখলদারদের বসতি স্থাপনের ঘটনা ঘটে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, যখন ইউরোপে ব্যাপক বর্ণ বৈষম্য, ধর্মীয় নিপীড়ন এবং গণহত্যার সম্মুখীন ইহুদিরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ফিলিস্তিনে আশ্রয় নিতে শুরু করে। তখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিলিস্তিন ইহুদি সংখ্যালঘু সহ একটি আরব প্রধান ক্ষুদ্র দেশ ছিল।

ইসরায়েলের বৃহত্তম শহর তেল আবিব ১৯০৯ সালে আরব শহর জাফার উপকণ্ঠে একটি বসতি হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। ফিলিস্তিনে ইহুদিদের ব্যাপক অভিবাসন আরব বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটায়। কিন্তু সুসজ্জিত ইহুদিবাদী সন্ত্রাসবাদীরা ১৯৪৮ সালে ৭৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে জাতিগতভাবে নির্মূল করে দেয়। ফিলিস্তিনিরা এই গণগত্যাকে নাকবা বা বিপর্যয় বলে অভিহিত করে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশের বেশি ভূমি নিয়ে গঠিত ‘এলাকা সি’তে ফিলিস্তিনি গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, প্রতিবেদন এবং সীমাবদ্ধ করার জন্য সেখানে তাদের বসতি স্থাপনকারীদের প্রতি বছর প্রায় ২০ মিলিয়ন শেকেল বা ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে থাকে। গত ৪ এপ্রিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় বাজেটে এই পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৪০ মিলিয়ন শেকেল বা ১ কোটি মাকিন ডলার করতে বলে।
ইসরাইল পশ্চিম তীরের প্রায় ২৬ শতাংশ এলাকাকে তার নিজস্ব ভূমি হিসাবে ঘোষণা করেছে। এখানে দখলদারদের জন্য তারা রাস্তা নির্মাণ, বসতি স্থাপন এবং পার্ক তৈরির জন্য তথাকথিত ‘জনসাধারণের প্রয়োজনে’ ফিলিস্তিনি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আইনি উপায় ব্যবহার করেছে।

ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এর সাথে ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইসরায়েলি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বসতি নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সেখানে ইতিমধ্যে বিদ্যমান বসতিগুলির সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের বসতি সম্প্রসারণকে জোরদার করেছেন। এরপর, ২০১৭ সালে ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বসতি স্থাপন শুরু করার ঘোষণা দেয়।

এছাড়াও, বেসরকারি ইসরায়েলি সংস্থাগুলি ভূমি আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে কাজ করে থাকে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও তাদের অনুমোদিত ভবন নির্মাণ পত্র এবং জমির নথির অভাবের উছিলায় নিয়মিতভাবে ফিলিস্তিনি সম্পত্তিগুলি বাজেয়াপ্ত এবং ধ্বংস করে থাকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে যে, ইসরাইলি অনুমোদন ও অনুমতি পত্র অর্জন করা ফিলিস্তিনিদের জন্য অসম্ভব। (চলবে)


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সংস্কারের ৩১দফায় তারেক রহমান শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন  - ডা. মাজহার

সংস্কারের ৩১দফায় তারেক রহমান শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন - ডা. মাজহার

৪৩তম বিসিএসের ২৬৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন

৪৩তম বিসিএসের ২৬৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম জয়ন্ত ও মধুমেলা উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম জয়ন্ত ও মধুমেলা উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা

পাকিস্তানের সামরিক আদালতের বিচারকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

পাকিস্তানের সামরিক আদালতের বিচারকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

রেকর্ড ও পরিসংখ্যানের আয়নায় তামিম

রেকর্ড ও পরিসংখ্যানের আয়নায় তামিম

আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি- মাওলানা এ টি এম মা’ছুম

আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি- মাওলানা এ টি এম মা’ছুম

টঙ্গীতে নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ

টঙ্গীতে নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ

দোয়ারাবাজারে সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ

দোয়ারাবাজারে সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ

ক্যাম্পাস সমূহ র‌্যাগিং ও মাদকমুক্ত রাখতে হবে: প্রফেসর ড. মাছুমা

ক্যাম্পাস সমূহ র‌্যাগিং ও মাদকমুক্ত রাখতে হবে: প্রফেসর ড. মাছুমা

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবীনদের বরণ করে নিলো শহীদ নূর আলী কলেজ

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবীনদের বরণ করে নিলো শহীদ নূর আলী কলেজ

ঈশ্বরগঞ্জে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাঝে আর্থিক সহায়তা

ঈশ্বরগঞ্জে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাঝে আর্থিক সহায়তা

ডনবাসের তিনটি এলাকা মুক্ত করেছে রাশিয়া

ডনবাসের তিনটি এলাকা মুক্ত করেছে রাশিয়া

মার্চের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে: পরিবহন উপদেষ্টা

মার্চের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে: পরিবহন উপদেষ্টা

খনন ফিল্ডে প্রত্নতাত্ত্বিক তারিখ নির্ধারন সংক্রান্ত মাঠ কর্মশালা

খনন ফিল্ডে প্রত্নতাত্ত্বিক তারিখ নির্ধারন সংক্রান্ত মাঠ কর্মশালা

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফরিদপুরে যুব সমাবেশ

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফরিদপুরে যুব সমাবেশ

ফ্যাসিস্ট দোসর তাপসকে হঠাৎ হিরো বানানোর চেষ্টা!

ফ্যাসিস্ট দোসর তাপসকে হঠাৎ হিরো বানানোর চেষ্টা!

আ’লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না সময় বলে দিবে: সিইসি

আ’লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না সময় বলে দিবে: সিইসি

সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৪ নিহত ১

সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৪ নিহত ১

দিনাজপুরের প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও সাঁওতাল লোকসংস্কৃতিবিদ গণেশ সরেন আর নেই

দিনাজপুরের প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও সাঁওতাল লোকসংস্কৃতিবিদ গণেশ সরেন আর নেই

ফ্যাসিস্টরা জয়ী হলে ২ লাখ মানুষকে জেলে যেতো: প্রেস সচিব

ফ্যাসিস্টরা জয়ী হলে ২ লাখ মানুষকে জেলে যেতো: প্রেস সচিব