চৌগাছায় ১১ মাসে ৪৭ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার, আটক ৫
১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৩ এএম
ভারতে স্বর্ণ পাচারের প্রধান রুট হিসেবে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তগুলো পরিণত হয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালানিরা এ সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহার করছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা চলতি বছরে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ২৯৭টি স্বণের্র বারসহ পাঁচজন চোরাকারবারিকে আটক করেছে। আটক ও উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় ৪৭ কেজি (৩৭৬০ ভরি)। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১১ মাসে উপজেলার কাবিলপুর, আন্দুলিয়া, মাসিলা, লক্ষিপুর, বল্লভপুর ও দৌলতপুর সীমান্ত থেকে বিজিবি ২৯৭টি স্বণের্র বার আটক ও উদ্ধার করেছেন। যার ওজন প্রায় ৪৭ কেজি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের একটি সূত্রে বলছেন, এ সীমান্ত পথে বিজিবির কাছে যে পরিমাণ স্বর্ণ আটক হয়, এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি পাচার হয়। চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার মাশিলা সীমান্তের লক্ষীপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ভারতে পাচারের সময় ছয়টি স্বর্ণের বারসহ নাঈম হোসেন (১৮) নামে এক যুবককে আটক করেন বিজিবি সদস্যরা। আটক নাঈম মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার উজ্জ্বল হোসেনের ছেলে।
২২ আগস্ট সন্ধ্যায় সীমান্তের বড় আন্দুলিয়া থেকে দুইজন পাচারকারীকে আটক করেন বিজিবি। এ সময় তাদের নিকট থেকে ১৩ কেজি ৪৬৪ গ্রাম ওজনের ৪৩টি স্বণের্র বার উদ্ধার করেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ১৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আটককৃতরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে শাওন হোসেন ও মাগুরার শালিকা উপজেলার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার ছেলে রফিকুল ইসলাম।
৫ জুন সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাবিলপুর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ২৬টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে বিজিবি সদস্যরা। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। তবে এ সময় কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
১০ এপ্রিল কাবিলপুর শ্মশানঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহ আলম (৩৫) নামে এক স্বর্ণ চোরাকারবারিকে আটক করেন বিজিবির সদস্যরা। এ সময় তার নিকট থেকে প্রায় সাড়ে ১৪ কেজি ওজনের ১২৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। আটক ব্যক্তি উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে অতিসম্প্রতি উপজেলার শাহজাদপুর সীমান্তের একটি মরিচ ক্ষেতের মাটির নিচ থেকে ৯ কেজি ২৮০ গ্রাম ওজনের ৮০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেন বিজিবি। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। উপজেলার তিলকপুর সীমান্ত থেকে বিজিবির সদস্যরা নাজমুল হোসেন (২২) নামে এক স্বর্ণ চোরাকারবারিকে আটক করেন। এ সময় তার নিকট থেকে দুই কেজি ওজনের ১৮টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। আটক নাজমুল চৌগাছা উপজেলার ঝিনাইকুন্ডু গ্রামের শরিফুল আলম বাবুর ছেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত থেকে চলতি বছরে বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৪৭ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার হয়েছে। তবে এসব স্বর্ণ উদ্ধারের সময় বহনকারী শ্রমিকরাই আটক হন। মূল হোতারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার স্বর্ণ উদ্ধার ও বহনকারীরা গ্রেফতার হলেও পরবর্তী তদন্তে তারা মুখ না খোলায় মূল হোতাদের মুখোশ উন্মোচন হয় না। ফলে স্বর্ণ পাচার কমছে না। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানান, এসব স্বর্ণের মালিক তারা নন, তারা বাহকমাত্র। প্রতিটি বার ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বহন করেন তারা।
সীমান্তবর্তী বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভারতে স্বণের্র ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ, যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর ৮৫ কিলোমিটার দূরত্বে কলকাতার অবস্থান, যশোর থেকে চৌগাছা উপজেলার সীমান্তগুলোও কম দূরত্বের মধ্যে হওয়ায় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধাজনক বিধায় চোরাচালানিরা এসব পথ ব্যবহার করেন।
গত ২৬ অক্টোবর দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার মাশিলা সীমান্তের লক্ষীপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ভারতে পাচারের সময় ছয়টি স্বর্ণের বারসহ নাঈম হোসেন (১৮) নামে এক যুবককে আটক করেন বিজিবি সদস্যরা। আটক নাঈম মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার উজ্জ্বল হোসেনের ছেলে।
এর আগে গত ২০ মে চৌগাছার বড় কাবিলপুর শ্মশানঘাট থেকে ওই গ্রামের শাহআলমে (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে ১৪ কেজি ৪৫০ গ্রাম ওজনের ১২৪টি স্বর্ণের বারসহ আটক করেন চৌগাছার শাহাজাদপুর বিজিবি সদস্যরা। স্বর্ণসহ আটকের পর কোরআনের হাফেজ ও কাবিলপুর বাজারে হোমিও ডাক্তার হিসেবে পরিচিত শাহআলম স্বীকার করেন তিনি এর আগেও ৬বার ওই এলাকা দিয়ে স্বর্ণ পাচার করেছেন। সপ্তমবারে অতি আপনজনের দেওয়া তথ্যে তিনি ধরা পড়েন। তবে এসব স্বর্ণ পাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও মূল হোতারা সবসময় থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বাংলাদেশ জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতি চৌগাছার সভাপতি দিদারুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত মূল হোতারা আটক হয় না। বিজিবির কাছে যে পরিমাণ স্বর্ণ আটক হয়, এর চেয়ে অনেক বেশি পাচার হয়। এতে আমাদের বদনামও হয়, আমরা ক্ষতিগ্রস্তও হই।
এ বিষয়ে যশোর ব্যাটালিয়ন ৪৯ বিজিবি আন্দুলিয়া কোম্পানী কমান্ডার সুবেদা মজিবুর রহমান বলেন, স্বর্ণসহ বিভিন্ন চোরাচালান রোধে বিজিবি সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে আমাদের গোয়েন্দা দল কাজ করছে। স্বর্ণ চোরাচালানে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সরকারের শিক্ষা-গণমাধ্যমসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ
তাসকিনের শিকার রোহিত
কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার হলো ধামরাইয়ে
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে চাটমোহরে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন
বায়তুল মোকাররমের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে যা বললেন খতিব রুহুল আমীন
গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক, সাবেক এমপি লুৎফুন নেসা হোসেন মারা গেছেন।
দেড়শর আগেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস
ঝিনাইদহে ৮ মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী
পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ
গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা নিয়ে অভিনেত্রী মেহজাবীনের পোস্ট
গোয়ালন্দে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
হবিগঞ্জে ৫ সাংবাদিক নাশকতার মামলায় আসামি
ঢাবিতে বর্বরোচিত গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের জানাজা শেষে পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন
তারাকান্দায় প্রাইভেটকার ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত-২
রাঙামাটিতে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকড
দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ পেলেন ড. এস এম হাসান তালুকদার
৮ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ
২০ কোটি সহায়তা দিয়ে এখনও বিএনপির ত্রাণ তহবিলে ৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে : ডা. জাহিদ