ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
চট্টগ্রামে গ্রেফতার বেশির ভাগই বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মী

ধরপাকড়েও আশাবাদী নেতারা

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

২২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

গায়েবি মামলায় ব্যাপক ধরপাকড়ের পরও এক দফার আন্দোলন সফলের ব্যাপারে আশাবাদি চট্টগ্রামের বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার এই আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতির দিকে যাবে। এই আন্দোলনের সাথে সাধারণ মানুষ একাত্ম। মিথ্যা মামলা, হুলিয়া আর গণগ্রেফতার চালিয়ে জনতার আন্দোলন দমন করা যাবে না। প্রয়োজনে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থক গ্রেফতার হবে। কিন্তু এই দেশে আর প্রহসনের কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধসহ নির্দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন আরো বেগবান হবে বলেও জানান বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার নেতারা। গ্রেফতার এড়াতে দলের নেতাদের অনেকে কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন। আড়ালে থেকে আন্দোলনের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। একই ভাবে কেন্দ্রের সাথেও সমন্বয় করছেন। দলের মধ্যম সারির নেতারাই মাঠের আন্দোলন এগিয়ে নিচ্ছেন। হাইকমান্ডের সবুজ সঙ্কেত পেলে তারাও মাঠে নেমে পড়বেন। আর তখন আন্দোলন আরো তুঙ্গে উঠবে বলেও আশাবাদি দলের নেতারা।
বিগত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় পুলিশী হামলায় মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর সারা দেশের মতো চট্টগ্রামে বিএনপির বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর জেলায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের গ্রেফতার অভিযানে দলের নেতাদের ভাই, পিতা, পুত্রসহ স্বজনেরাও বাদ পড়ছেন না। ২৮ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত মহানগর ও জেলায় বিএনপি ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে ৫৪টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বাদি পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। এসব মামলায় গ্রেফতার বেশির ভাগই তৃণমূলের নেতাকর্মী।
অতীতে দেখা গেছে পুলিশ মহানগর ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতার করতো। তবে এবার যাকে পাচ্ছে তাকে পাকড়াও করছে পুলিশ। মহানগর এবং জেলা নেতাদের বাসা-বাড়িতেও অভিযান থেমে নেই। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতেও অভিযান চলছে বলে অভিযোগ করেন দলের নেতারা। তবে এখনও পর্যন্ত তারা গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
এদিকে গ্রেফতার এড়াতে মহানগর এবং জেলার শীর্ষ নেতারা আড়ালে চলে যাওয়ায় মাঠের আন্দোলন এগিয়ে নিতে রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর এই কারণে তারা গ্রেফতারও হচ্ছেন বেশি। বিএনপির পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের থানা এমনকি ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপির সমর্থকদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তাদেরও গ্রেফতার করছে পুলিশ।
নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আগে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে মহানগরীর নূর আহম্মদ সড়কের নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয় এলাকায় মিছিল সমাবেশ করতো মহানগর বিএনপি। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কার্যক্রমও নাসিমন ভবন এলাকায় সীমিত থাকতো। তবে এখন দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। হরতাল অবরোধসহ চলমান কর্মসূচিতে দলীয় কার্যালয়ের পরিবর্তে রাজপথেই কর্মসূচি পালন করছে মহানগর জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
প্রতিটি কর্মসূচিতে মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিল, পিকেটিং ও সমাবেশ হচ্ছে। বিভিন্ন থানা কমিটির পাশাপাশি, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির উদ্যোগেও মিছিল, পিকেটিং হচ্ছে। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন স্পটে ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ করছে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কোথায় কখন মিছিল, পিকেটিং হয়-তা নিয়েও সতর্ক থাকতে হচ্ছে পুলিশকে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, চলমান আন্দোলনে তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল সমাবেশ ও পিকেটিং করছেন। কিন্তু তাতেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় চালান দিচ্ছে। কিন্তু নেতাকর্মীদেরও দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। গত দেড় দশকে জুলুম নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের নামে শত শত মামলা রয়েছে। অনেক মামলার বিচার শুরু হয়েছে। এসব মামলায় নেতাকর্মীদের গণহারে সাজা দেওয়ার আয়োজন চলছে। এখন আন্দোলন জোরদার হওয়ায় নতুন করে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। কোন ঘটনা ছাড়াই মামলা হচ্ছে।
এসব মামলায় দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সমর্থকদেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নেতাদের না পেয়ে তাদের স্বজনদের ধরে মামলায় আসামি করে কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে। তবে এসব করেও চলমান আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। জুলুম নির্যাতন যতই বাড়বে আন্দোলন ততই জোরদার হবে। কারণ এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। কৌশল হিসাবে নেতারা আড়ালে আছেন জানিয়ে মহানগর বিএনপির একজন নেতা জানান, কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত পেলে তারাও রাজপথে সামিল হবেন। প্রয়োজনে দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের নিয়ে গ্রেফতার হবেন। কিন্তু আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না। মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ে আরো কয়েকটি দল রাজপথে আছে। আগামী দিনে তাদের সাথে এককাতারে কর্মসূচি পালন করার বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান ওই নেতা।
আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্যের নগরী চট্টগ্রাম অতীতের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণি ভূমিকা পালন করেছে। বিগত দেড় দশক ধরে চলমান আন্দোলনেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। গুম, খুন, জেল, জুলুম, হুলিয়া উপেক্ষা করে রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির পাশাপাশি আইনজীবীসহ পেশাজীবীরাও আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। এক দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামি, ইসলামি আন্দোলন ও বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোও রাজপথে সক্রিয় রয়েছে। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা রাজপথের এই আন্দোলন সফল হবেই। #


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার