সারা বছরের সমস্যা ডেঙ্গু
২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
সারা বছেরের সমস্যার তকমা পেয়েছে ভয়াবহ ডেঙ্গু। সারা দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এই ডেঙ্গুতেই প্রতিদিন মরা যাচ্ছে একের পর এক মানুষ। প্রথম দিকে ডেঙ্গু ঢাকার সমস্যা থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এরমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও জেলা-উপজেলায় মশক নিধন কার্যক্রম তেমন একটা নেই। এ অবস্থায় দেশজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৭৭ জনে। এসময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৯৪ জন ডেঙ্গুরোগী। অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন চার হাজার ১২৪ জন ডেঙ্গুরোগী। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, প্রতিটি মানুষের বাড়িঘর আঙ্গিনা এবং আশেপাশের জায়গা, কর্মস্থল যতœসহকারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা উচিৎ। বসবাসের জায়গা সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিষ্কার করতে হবে। এডিস মশা সাধারনত ২০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে তাই যে কোন ব্যাক্তির বাড়িঘর আঙ্গিনা এবং আশেপাশের জায়গা, কর্মস্থল ও বসবাসের জায়গা যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এডিস মশাসহ অন্যান্য প্রজাতির মশা ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর এখন একটি এ্যান্ডেমিক রোগ, যদি আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করি তাহলে বছরব্যাপি এ রোগটি হওয়ার সম্ভবনা থেকে যাবে। সে কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আমরা চাই ডেঙ্গুতে যেন একজনেরও মৃত্যু না হয়। কিন্তু এটি শুধু চাইলেই হবে না। আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু ঢাকা শহরে না, পুরো দেশে প্রচারণা চালাতে হবে। ব্যাপক প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডেঙ্গু এখন আর কোন নির্দিষ্ট সিজনের সমস্যা না। ডেঙ্গুতে এখন সারা বছর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু বর্ষায় না, শীতকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধু বর্ষায় নয়, সারা বছরই সচেতন থাকতে হবে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) আয়োজিত কমিউনিটি পর্যায়ে ডেঙ্গু বিষয়ক জনসচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ড্রেন বা নর্দমার পানিতে কিন্তু এডিস মশার জন্ম হয় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই এডিসের লার্ভা জন্মায়। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, অব্যবহৃত কমোড, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতি তিনদিনে অন্তত একদিন জমে থাকা পানি ফেলে দিন। প্রতি শনিবার নিজেদের বাসা বাড়ি পরিষ্কার করি তাহলেই এডিস মশার কামড় থেকে আমরা নিরাপদ থাকতে পারবো।
মেয়র আরও বলেন, প্রচারণার পাশাপাশি আমরা সিটি করপোরেশন থেকে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিচ্ছি। পেট্রোবাংলা, টিসিবি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন এবং যমুনা অয়েলের ভবনেও অভিযান চালিয়ে লার্ভা পেয়েছি। সবাইকে জরিমানা করেছি। নিজ নিজ ভবনের ভিতরে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিজেদেরকে নিয়ে হবে।
তিনি বলেন, কাউকে জরিমানা করা বা জেল দেয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো কোথাও যেন এডিসের লার্ভা না জন্মে। আমরা চাই সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। কমিউনিটির সবাই সচেতন হলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, করোনার সময়ে দেখেছি চিকিৎসকরা, নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। ভয়াবহ করোনায় আপনাদের অবদানের জন্য আমি আপনাদের স্যালুট জানাই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করতে আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছি। কমিউনিটি পর্যায়ে ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধিতে আপনারা প্রচারণার যে কর্মসূচি নিয়েছেন এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নিপসম ও ডিএনসিসি যৌথভাবে কাজ করবে। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মশা মারার জন্য দোকান থেকে অ্যারোসল ও কয়েল কিনে ব্যবহার করি। মশা হওয়ার পরে মশা মারার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়। সিটি করপোরেশন থেকে মশার লার্ভা ধ্বংসে লার্ভিসাইডিং করা হয়। কিন্তু পরিপূর্ণ মশা হওয়ার আগে লার্ভা ধ্বংসের কীটনাশক যদি ওভার দ্য কাউন্টারে এভেইলেবল কিনতে পাওয়া যায় তাহলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। সবাই দোকান থেকে কিনে কীটনাশক ব্যবহার করে উৎসস্থলেই মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারবে। স্বাস্থ্য বিভাগকে অনুরোধ করবো এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মিজানুর রহমান আজহারীর ব্যাখ্যা
বিতর্কিত চিন্ময় কাণ্ড: আত্মসমর্পণের পর জামিন পেলেন ৬৩ আইনজীবী
শরীয়তপুরে ১০ বছরেও নির্মাণ হয়নি আদালত ভবন
শুভেন্দুর হুঙ্কার : ‘বাংলাদেশকে জবাব দিতে পাঁচ-সাতটি ড্রোনই যথেষ্ট’
ষড়যন্ত্র ও হয়রানির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আবেদন বঞ্চিত বিধবার
মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে ভারতীয় রুপির সর্বনিম্ন রেকর্ড
দোয়ারাবাজারে অভিযুক্ত বাঁধে বালু অপসারণ!
তালেবান শাসনকে বৈধতা না দেওয়ার আহ্বান নোবেলজয়ী মালালার
ফের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের
ঢাকার বাইরে প্রথম নরসিংদীতে রয়েল এনফিল্ড লঞ্চ
ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত করা সম্ভব
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না : হাইকোর্ট
বিদ্যুৎ প্লান্টের পাঁচ লাখ টাকার লোহা তামা স্টিল সামগ্রী চুরির দায়ে ৫০ জনের নামে মামলা
নেত্রকোনা গত ১ বছরে ২৩২টি অস্বাভাবিক মৃত্যু
মেহেরপুর শহরে অবৈধ গাড়ির দৌরাত্ম ফুটপথ দখল, সরু সড়ক, যানজট লেগেই থাকে
অ্যাপলের ডাইভার্সিটি নীতি , বৈচিত্র্য রক্ষার লড়াইয়ে বোর্ডের বার্তা
ঢাবি,ভিকি,এনএসইউ ওয়েটিং লিস্টে থাকে,বান্নাহ খাওয়া মাল খায় না'
দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা কর্নেল অলির
আশুলিয়া থানা জমিয়তের কমিটি গঠন
বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০ জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী