যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত
২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ নিবাসী রাখার সঙ্গে দীর্ঘদিনের জনবল সঙ্কটে প্রকট আকার ধারণ করছে কেন্দ্রটিতে। জনবল সঙ্কটে খালি থাকা বিভাগ ও পদগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। একই সাথে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও পরিমিত খাবার গুরুত্বপূর্ণ হলেও কেন্দ্রে তা পাচ্ছেন না। একজন উঠতিবয়স্ক আহারের চেয়েও কম খাবার পাচ্ছেন কেন্দ্রটির নিবাসীরা। সরেজমিন কেন্দ্রেটিতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
১৯৯২ সালে পাঁচ একর জমির উপর যশোর শহরতলী পুলেরহাটে প্রতিষ্ঠিত হয় এ সংশোধানাগার। প্রথমে এটি শিশু কারাগার থাকলেও সরকার পরবর্তীতে এটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র হিসাবে নামকরণ করে। বিভিন্ন কারণে অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক বালকদের প্রচলিত জেলখানায় অপরাধীদের সঙ্গে রাখার পরিবর্তে সংশোধনের জন্যে এই কেন্দ্রটি ব্যবহার করা হয়।
কেন্দ্রটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী যশোরে আসনসংখ্যা ১৫০, তবে বর্তমানে সেখানে আছে ২৮৪ জন। অর্থাৎ আসনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি নিবাসী নিয়ে কেন্দ্রটি চলছে। কয়েক মাস পর পর তিন বা সাড়ে তিনগুণও হয়ে যায় নিবাসীদের সংখ্যা। বর্তমানে অবস্থান করা নিবাসীদের মধ্যে ৬৭ জন হত্যা মামলা, ৭০ জন নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা, ৬৫ জন মাদক মামলা, ৪ জন অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তরা আছে। নিবাসীদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সীর বেশি ১২ জন। এখানে থাকার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ১৮ বয়স নিবাসীরা এখানে থাকার বিধান না থাকলেও জন্মনিবন্ধন জটিলতায় আদালতের নির্দেশে তারা রয়েছেন।
কেন্দ্রটিতে অনুমোদিত পদ ৪৯, এর মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন পদে কর্মরত ২৪ জন। সহকারী তত্ত্ববাবধায়ক, প্রবেশন অফিসার, প্রসিকিউশন অফিসার, সোশ্যাল কেস ওয়ার্কার, হাউস প্যারেন্টসহ ২৫টি পদই শূন্য। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সীমিত বাজেট, প্রশাসনিক দুর্বলতা, অপর্যাপ্ত জনবল, অনুন্নত সংশোধন প্রক্রিয়া, পুনর্বাসন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কেন্দ্রটি পরিচালিত হচ্ছে। নিবাসীদের স্বজন ও সম্প্রতি কেন্দ্রটি থেকে বের হওয়া কয়েকজন কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জীবনমান, খাবারদাবার অত্যন্ত নিম্নমানের বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পর্যপ্ত ঘুমানোর জায়গা, বরাদ্দের অভাবে পেটপুরে খাওয়া শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোনো সুযোগও পাচ্ছে না শিশুরা। এসব কারণে সংশোধনের পরিবর্তে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা হিংস্র হয়ে উঠেছে। আছে ‘বড় ভাই’ কালচারও। যার যাঁতাকলে পড়ে কিশোরদের জীবন ওষ্ঠাগতপ্রায়। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে আইনভঙ্গের ঘটনা।
কেন্দ্রের নিবাসীদের মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি বাবদ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২০০ টাকা। চিকিৎসায় বরাদ্দ ১০০ টাকা। প্রশিক্ষণে ১৫০ টাকা, পোশাক ৩০০ টাকা, তেল, সাবানসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ ২৫০ টাকা। তবে প্রতি ক্ষেত্রেই ভ্যাট, ট্যাক্স, পরিবহন, ঠিকাদারের লভ্যাংশও এর মধ্যে থেকে রাখতে হয়। কেন্দ্রে সকাল দুপুর ও রাতে ভাত ও বিকালে নাস্তা দেওয়া হয়। প্রতি নিবাসীর মাথা পিছু চারবেলার খাবারের বরাদ্দ ১০০ টাকা। এই মধ্যে ৩০ টাকা কেটে নেওয়া হয় জ্বালানির জন্য। বাকী ৭০ টাকাতে তিন বেলা খাবার ও একবেলা নাস্তা দেয়া হয়। এই বাজেটে টানা এক যুগ একজন ঠিকাদার খাবার সরবরাহ করে এলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণে এতদিন পর তিনিও এই দামে খাবার সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রটির ঠিকাদার শেখ হাবিবুর রহমান সাগর বলেন, এই টাকায় তিনবেলা খাবার ও বিকালে নাস্তা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও এ কাজ করতে হয় পেশা হিসেবে। তবে খাবারে কোন ফাঁকি দেয়া হয় না। যা বরাদ্দ থাকে সেভাবে আমি খাবার সরবরাহ করে থাকি।
কেন্দ্রটিতে কিশোরদের চিকিৎসার জন্য বর্তমানে নেই কোনো চিকিৎসক। এখানকার নিবাসীদের কেউ অসুস্থ হলে তাদের পাঠানো হয় যশোর জেনারেল হাসপাতালে। তাদের চিকিৎসায় নেই কোনো চিকিৎসক, কমপাউন্ডার বা নার্স। এমনকি তাৎক্ষণিক অসুস্থ হলেও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না।
কেন্দ্রের দেয়া তথ্যমতে, শিশুদের মানসিক বিকাশে ও সংশোধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা আছে। শিশু-কিশোরদের নানা ধরনের বিভিন্ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে। ফ্লোরের ভেতরে দাবা, কেরাম ও লুডু খেলার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া মাঠে বিভিন্ন টুর্ণামেন্টের আয়োজন করা হয় বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল হাছান বলেন, আমাদের এখানে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ নিবাসী থাকছে। প্রতিজন খাবারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে একশ’ টাকা। এতে করে শিশুরা মানসম্মত খাবার সেভাবে পাচ্ছে না। যেহেতু বাড়ন্ত শিশুদের বেশি ও পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি থাকলে তাদের শারীরিক গঠনে সমস্যা হতে পারে। রয়েছে জনবলের তীব্র সঙ্কট। খাবারের বরাদ্দ ও জনবলের চাহিদা চেয়ে আমরা প্রতিবছর মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাচ্ছি।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, গত এক দশকে ছোট বড় ৮টি সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটেছে কেন্দ্রটিতে। এর মধ্যে মারা গেছেন সাত নিবাসী। এছাড়া আত্মহত্যা করেছে ৪ জন। সর্বশেষ কেন্দ্রের ভেতরে তিন শিশুর একসঙ্গে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে কেন্দ্রটির অব্যবস্থাপনা নিয়ে ১৫ কিশোর কাঁচ দিয়ে শরীর চিরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। এছাড়া সীমানা প্রাচীরের গায়ে থাকা পানির পুরোনো পাইপ বেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল ছয় কিশোর। ফলে অন্যদুটি কেন্দ্রের থেকে সব সময়ই আলোচনায় থাকে এই কেন্দ্রটি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুমকিতে নিষিদ্ধ পলিথিনসহ আটক ১
দাবানলে সব ঘরবাড়ি পুড়লেও অলৌকিকভাবে অক্ষত একটি বাড়ি!
নিজ দলের দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করার দাবি আওয়ামীলীগ নেতার
রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে দাউদকান্দিতে ধানের চারা রোপন কর্মসূচি
ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের মতবিনিময় সভায় চরমোনাই পীর
ধামরাইয়ে যুবকের লাশ উদ্ধার
ফেনীতে বন্যায় ব্রিজ ভেঙে খালে ৪ মাসেও সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ চরমে
সউদী আরব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও বিক্রির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে
মুজিবনগর সেচ প্রকল্পে দুদকের অভিযান ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ
শীত আসতেই রাজনগরে শুরু হয়েছে নাচ-গান আর জুয়ার আসর
বিজিবি দিনাজপুর সেক্টরের উদ্যোগে শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ
বুড়িচংয়ে কাকদী নদীর পাড় কাটায় বাধঁ ভাঙ্গার আশঙ্কা বিরাজমান
বীজ সরবরাহে প্রতারণা উপরে সুন্দর গাছে আলু ফলন নেই
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন বাবর
ভারতের মহাকুম্ভ মেলায় পবিত্র নদীতে স্নানের মহোৎসব , আধ্যাত্মিকতার মহাযজ্ঞ
কলাপাড়ায় বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদকের বাসায় চুরি
কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলায় মানুষের ঢল
রাজউক উত্তরা জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
নিষিদ্ধ সংগঠন সহ-সভাপতি সজল ১ দিনের রিমান্ডে
কুলাউড়ায় জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন