ফিলিস্তিন : ইতিহাসের পাতা থেকে-২
২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২১ এএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২১ এএম
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২৫০ সালের দিকে তাদের মাঝে মূসা (আ.) প্রেরিত হন। তার আগে জন্ম হয় হারুন (আ.)-এর। নানান জুলম-নির্যাতন অতিক্রম করে, ফেরাউনের লোহিত সাগরে সলিল সমাধির মধ্য দিয়ে বনী ইসরাইল মিশর ত্যাগ করে সিনাই উপত্যকায় আসে। সেখানে তারা নানান বিশৃঙ্খলা করে নবী মূসা ও হারুন (আ.)-কে যারপরনাই কষ্ট দেয়। একপর্যায়ে তারা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে। শহর রক্ষা প্রাচীরের কাছে যাত্রাবিরতি দেয়। বিরতির পর মূসা (আ.) তাদেরকে শহরে প্রবেশ করতে বললে তারা এই বলে অস্বীকৃতি জানায়, এখানে এক পরাক্রমশালী জাতির বাস। এই পরাক্রমশালী যোদ্ধা জাতি ছিল কেনআনীরা।
আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার শাস্তিস্বরূপ তারা তীহ প্রান্তরে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকে। এ সময়ে মূসা (আ.)-এর ইন্তেকাল হয়। মূসা (আ.)-এর ইন্তেকালের ১০ বছর পর আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১১৯০ সালে ইউশা (আ.) বনী ইসরাইলকে নিয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে ফিলিস্তিনে বসবাস করতে থাকেন। তার জীবদ্দশায়ই বনী ইসরাইল অনেক বিশৃঙ্খলা করে। ইউশা (আ.)-এর ইন্তেকালের পর ১৫০ বছর অতিক্রান্ত হয়। এ সময়ের মধ্যে তাদের অবাধ্যতা চরমে পৌঁছে। পৌত্তলিকতা তাদের ওপর চেপে বসে।
তাদের প্রিয় তাবুত, যার মধ্যে মূসা (আ.)-এর লাঠি ছাড়াও অন্য আরও পবিত্র বস্তু ছিল, তারা হারিয়ে ফেলে। নানান ঘটনার পর তালুতের নেতৃত্বে জিহাদে অংশগ্রহণ করে। সে যুদ্ধে দাউদ (আ.)-ও অংশগ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। তিনি দুষ্টশাসক জালুতকে হত্যা করেন। স্বল্পসংখ্যক সৈন্য নিয়ে তিনি জালুতের ওপর বিজয় লাভ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ ঈসাব্দে দাউদ (আ.) আলকুদস শহরে প্রবেশ করেন। তিনি সবচেয়ে বড় ইহুদি সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তা ছিল ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ৭৪% অঞ্চল।
এটাই ছিল ফিলিস্তিনে ঈমান ও আহলে ঈমানের প্রথম আধিপত্য। ফিলিস্তিনে ইবরাহীম (আ.) কেবল দাওয়াত দেয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। ইউশা (আ.) ফিলিস্তিনের খুব বেশি এলাকা দখলে আনতে পারেননি। দাউদ (আ.) চল্লিশ বছর শাসন করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর সুলাইমান (আ.) উত্তরাধিকারী হন। তিনি দাপটের সঙ্গে শাসন করেন। তাঁর প্রভাবের সামনে বনী ইসরাইল মাথা নুইয়ে রাখলেও তাঁর ইন্তেকালের পরপরই ইহুদিরা পুরোনো চরিত্রে ফিরে যায়। সুলাইমান (আ.)-ও ৪০ বছর শাসন করেন। তিনি বাইতুল মাকদিস পুনঃনির্মাণ করেন। ইহুদিরা যে ওখানে সুলাইমানী ট্যাম্পল থাকার কথা দাবি করে, নানান অনুসন্ধান করেও তার কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।
বনী ইসরাইলের ছিল ১২টি গোত্র। সুলাইমান (আ.)-এর ইন্তেকালের পর তারা বিভক্ত হয়ে পড়ে। একজনের নেতৃত্বে ১০ গোত্র একত্রিত হয়। বাকি দুই গোত্র একত্রিত হয় অন্য একজনের নেতৃত্বে। ১০ গোত্র ফিলিস্তিনের উত্তরে গড়ে তোলে ইসরাইলী সাম্রাজ্য। অন্য দুই গোত্র দক্ষিণ ফিলিস্তিনে গড়ে তোলে ইয়াহুযা সাম্রাজ্য। এরা ছিল ইয়াহুযা ও বিনইয়ামিনের বংশধর। বিশৃঙ্খলা ও পৌত্তলিকতায় উভয় সাম্রাজ্যই বরাবর ছিল।
সেই ইসরাইলী সাম্রাজ্য ২০২ বছর টিকে ছিল। একপর্যায়ে তারা অ্যাসিরিয়ানদের হাতে পরাজিত হয়। অ্যাসিরিয়ানরা ছিল ইরাকের অধিবাসী। খ্রিস্টপূর্ব ৭২১-এ তারা ইসরাইলী সাম্রাজ্যে হামলা করে। তারা সবকিছু তছনছ করে দেয়। অধিকাংশকে বন্দি করে পৃথিবীর নানান প্রান্তে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। এভাবে ইহুদিদের ১০ গোত্র ইতিহাস থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ইয়াহুযা সাম্রাজ্য আরও ১৫০ বছর টিকে ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে আল্লাহ তাদের ওপর আবার ধ্বংসলীলা চাপিয়ে দেন। ইরাকের সেনাপতি বখতে নসর ফিলিস্তিন আক্রমণ করে ইহুদিদের তছনছ করে দেয়। মসজিদে আকসা ধ্বংস করে দেয়।
ইয়াহুযা সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে ব্যাবিলন শাসনের সূচনা হয়। এ শাসন খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ থেকে ৫৩৯ পর্যন্ত ৪৭ বছর স্থায়ী হয়। তখন পারসিক ও ব্যাবিলনদের মাঝে দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধ ছিল চরম পর্যায়ে। ইহুদিরা সাইরাসের নেতৃত্বে থাকা পারসিকদের সহায়তা করলে ব্যাবিলনীরা পরাজয় বরণ করে। ফিলিস্তিন চলে যায় পারসিকদের দখলে। পারসিকরা ২০৭ বছর ফিলিস্তিন শাসন করে।
খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সালে রোমান সেনাপতি আলেকজান্ডার পারস্যকে পরাজিত করে। তারাও মুশরিক ছিল। ইহুদিরা তখন আলেকজান্ডারের অধীনে বসবাস করতে থাকে। রোমানরা খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সাল থেকে ৬৩ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিন শাসন করে। রোমানরা ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর। বেশির ভাগ ইহুদি রোমানদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের সঙ্গে মিশে যায়। অল্প কিছু ইহুদি বিকৃত ধর্মের ওপর অটল থাকে।
এরপর ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের পর থেকে ৩০০ বছর পর্যন্ত ফিলিস্তিনে অল্প কিছু মানুষই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল। ৩২৪ ঈসাব্দে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। তাঁর মা আগেই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গোটা রোমান সাম্রাজ্যেই খ্রিস্টধর্ম ব্যাপক প্রসার লাভ করে। পৌত্তলিকরাও দলে দলে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন।
তাদের চিন্তা-চেতনার প্রভাব খ্রিস্টধর্মেও পড়ে। যার ফলে খ্রিস্টধর্ম এক বিকৃত রূপ নিয়ে গোটা রোমান সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ সময় রোমানরা মসজিদে আকসার কাছেও যায়নি। ফিলিস্তিনে রোমান শাসন ৩১২ বছর স্থায়ী ছিল। একেবারে মুসলমানদের ফিলিস্তিন বিজয়ের আগ পর্যন্ত।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য
পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ
অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
কারাগারে এস কে সুর
‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’
ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে
অভি খালাস! তাহলে খুনী কে?
জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা টিকটক কিনছেন না মাস্ক
ধামরাইয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানায় ফের আবার ডাকাতির চেষ্টা
রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা
বন্ধ বেক্সিমকো খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করবে বিবিএস
পরিবারসহ জ্যাকব ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন শুনানির নতুন তারিখ
সামাজিক ও আচরণ পরিবর্তনের বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ইউজিসি’র
চুক্তিতে নিয়োগের দৌড়ে নওফেলের জালাল উদ্দিন চৌধুরী
পুলিশের চাকরি হারিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন হাকিম
ভোটার তালিকা হালনাগাদে সহায়তা করবে ইউএনডিপি
সাকরাইনে মেতেছে পুরান ঢাকা