ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে নিজ কক্ষে পরামর্শের জন্য ডেকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে একই ইনস্টিটিউটের প্রফেসর নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার ওই শিক্ষকের ক্লাস বর্জন ও রুমে তালা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে মঙ্গলবার এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর হল বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য ইনস্টিটিউটের অফিস কক্ষের সামনে গেলে তিনি আমাকে নিজে থেকে তার কক্ষে ডাকেন। তখন আমি স্যারের কক্ষে যাই। স্যার আমাকে প্রয়োজনীয় দু’একটা কথা বলার পরপরই অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে শুরু করেন। আমার বাবা নেই জানার পর তিনি আমাকে নানারকমের সাহায্যের প্রলোভন দেখান এবং আমাকে উনার সাথে একা দেখা করতে বলেন। তার বিষয়ে বা তার সাহায্যের বিষয়ে কাউকে না জানাতে বলেন।

ওই শিক্ষার্থী আরো উল্লেখ করেন, স্যার আমার সেল ফোন নাম্বার নেন এবং এক রকম জোর করেই আমার মেসেঞ্জারে নক করেন এবং যুক্ত হোন। তার কথার ধরন এবং অঙ্গভঙ্গি আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াই এবং তখন তিনি নিজেও তার নিজ আসন ছেড়ে আমার কাছে উঠে আসেন এবং আমাকে যৌন নিপীড়ন করেন। তিনি বার বার বলতে থাকেন, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। তিনি আমার শরীরের আপত্তিকর স্থানে স্পর্শ করেন, ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আমি ভয়ে তার কক্ষ হতে দৌড়ে পালিয়ে যাই।

জানা যায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকবার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। চলতি বছরে জানুয়ারি মাসেও এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসেও এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল প্রফেসর নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

গতকাল বুধবার ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা প্রফেসর নুরুল ইসলামের ক্লাস বর্জন করে ভিসির বাসভবনের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় জন্য ভিসির নিকট স্মারকলিপিও দেন তারা।

ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের বলেন, মানববন্ধন শেষে আমরা মাননীয় ভিসি স্যার বরাবর আমাদের দাবী দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করেছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের ৬ সদস্যদের প্রতিনিধি দল ভিসি স্যারের সাথে এই বিষয়ে দুইদফা আলোচনা করেছে। ভিসি স্যার ইতঃপূর্বে ভিক্টিমের মুখ থেকে সরাসরি ঘটনার বিস্তারিত শুনেছেন। আমাদের প্রতিনিধি দলও ঐ শিক্ষকের পূর্বের এবং বর্তমানের কৃতকর্ম সম্পর্কে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস পেশ করেছেন। দোষী সাব্যস্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম সম্পর্কে ভিসি স্যার, প্রো-ভিসি স্যারও নিজেদের পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

এই শিক্ষার্থী জানান, আগামীকাল (আজ) সিন্ডিকেট মিটিং রয়েছে, সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের ব্যাপারে ভিসি স্যার আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।

ইনস্টিটিউটে নিরাপত্তাহীনতার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে গতকাল আমি মাননীয় ভিসি স্যারের নিকট অভিযোগ পত্র দিয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এবং আমি যেন সেখানে গিয়ে সবকিছু বিস্তারিত বলি। আজকেও আমার সহপাঠীরাসহ আমরা কয়েকজন গিয়েছিলাম। মাননীয় ভিসি স্যার আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, সবকিছুর বিচার হবে। তবে উপযুক্ত প্রসেসিংয়ে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমি ইনস্টিটিউটে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া অপরাধের বিচার চাই।

এ বিষয়ে মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।