উৎপাদন বাড়াতে চাষ হাইব্রিড জাতের
০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কৃষি খাত সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ অবস্থায় কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে দিন দিনই উদ্বেগ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি। দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর খাদ্য নিরাপত্তা বলতে প্রধানত চালের নিরাপত্তা বা পর্যাপ্ত চালের জোগানকে বুঝানো হয়। দেশে চালের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে হাইব্রিড জাতের ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে নেওয়া হয়েছে নানান পদক্ষেপ। হাইব্রিড ধান চাষে কৃষকদের প্রণোদনাও দিচ্ছে সরকার। এতে দেশে ধান-চালের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হবে এমন আশা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চালের উৎপাদন আগের চেয়ে কমার পূর্বাভাস করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। কারণ, অর্থবছরের শুরুতে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে কমেছিল আউশের উৎপাদন। তবে পূর্বাভাসের পরপরই বেশ অনুকূলে আসে দেশের আবহাওয়া। ফলে চলতি আমন মৌসুমে সারাদেশে বাম্পার ফলন হয়েছে। আসন্ন বোরো মৌসুমের উৎপাদন আরও বাড়াতে চায় সরকার। তাই আসন্ন বোরোর উৎপাদন তিন-চার শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ে সে জন্য এবার হাইব্রিড জাতের ধান চাষে ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য হাইব্রিড জাতের ধান চাষে কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের আসন্ন মৌসুমে ৫০ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ২ কোটি ১৭ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। যেখানে গত মৌসুমে (২০২২-২৩ অর্থবছর) উৎপাদন হয় ২ কোটি ৭ লাখ টন। তবে গত অর্থবছরের উৎপাদন তার আগের বছরের থেকে প্রায় দুই লাখ টন কম ছিল। আগের অর্থবছরে উৎপাদন হয় ২ কোটি ৯ লাখ টন।
ঘাটতি মেটাতে এবার (আসন্ন মৌসুমে) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দুই লাখ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত মৌসুমে বোরো আবাদ হয় ৪৮ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার বাড়তি জমির মধ্যে এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টরে চাষ হবে হাইব্রিড জাতের ধান। সেখানে হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৯৫ টন ফলন ধরে ৯ লাখ ৫০ হাজার টন অতিরিক্ত চাল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, আমরা (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে পরিকল্পনা তৈরি করেছি। উৎপাদন বাড়াতে এবার আমরা হাইব্রিড চাষাবাদে গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা বলতে আমরা সবচেয়ে আগে চালের নিরাপত্তাকে বুঝি। সেক্ষেত্রে হাইব্রিড ধানের ফলন বেশি, দ্রুত উৎপাদন বাড়াতেও অধিক সহায়ক। হাইব্রিড জাতের ধান চাষে এবার বাড়তি প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদন তিন-চার শতাংশ বেশি হবে। গত কয়েক বছর দ্রুত হাইব্রিড জাত জনপ্রিয় হচ্ছে।
চাষিদের হাইব্রিড জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে গত কয়েক বছর ধরে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৫ লাখ কৃষককে হাইব্রিড জাতের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল। এতে ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধি পায়। চাল উৎপাদন বাড়ে ৯ লাখ ৮৩ হাজার টন।
আসন্ন বোরো মৌসুমেও হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে ৯০ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে শিগগির শুরু হবে প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম। এ প্রণোদনার আওতায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় দুই কেজি হাইব্রিড জাতের বীজ পাবেন বিনামূল্যে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রণোদনার ফলে বোরো মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টর বাড়বে। হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৯৫ টন ফলন ধরে অতিরিক্ত চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ ৫০ হাজার টন।
হাইব্রিড জাতে ব্রি-২৮ বা ব্রি-২৯ এসব ধানের চাষ করে বেড়েছে চালের উৎপাদন। বাংলাদেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। পরের অর্থবছর (২০২২-২৩) উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার টন। দশ বছর আগের তুলনায় এখন অন্তত ৫০ লাখ টন চাল বেশি উৎপাদন হচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টন। বাংলাদেশে তিন মৌসুমে চাল উৎপাদন হয়। সবচেয়ে বড় মৌসুম বোরো। এ মৌসুমে ধান আবাদ করা হয় ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে। চাল ওঠে এপ্রিল ও মে মাসে। বোরোর পরই আউশের আবাদ হয়। আমনের আবাদ হয় ভরা বর্ষায়। আউশ ও আমন বৃষ্টিনির্ভর হলেও বোরো সেচনির্ভর।
গত অর্থবছর (২০২২-২৩) দুই কোটি ৭ লাখ টন বোরো, এক কোটি ৫৪ লাখ টন আমন ও ২৯ লাখ টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে। গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বোরোর উৎপাদন। তবে বোরো চাষে এবার খরচ বৃদ্ধির দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। সার, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিসহ নানা খাতে এবার বোরো উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় বাড়বে। এতে চিন্তিত কৃষকরা। তারা বলছেন, উত্তরাঞ্চলে বোরো ধান চাষে দু-তিন বছরের ব্যবধানে প্রতি বিঘা জমিতে বাড়তি পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু গত মৌসুম শেষে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে উৎপাদন খরচ উঠছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ