ঠাকুরগাঁওয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ে এদিন
০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম
আজ ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে ঠাকুরগাঁও মহকুমায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনতার দুর্বার প্রতিরোধে পরাজিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের জনগণ ওই দিন ভোরে ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন। হানাদারদের পরাজয়ের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দে উদ্বেলিত কন্ঠে জয়বাংলা ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে সবাই।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর পাকিস্তানী হায়েনাদের গণহত্যার মাধ্যমে এদেশের মানুষ যে ঘুরে দাঁড়ায় তা জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে সেই যুদ্ধ। যা মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের উত্তরের এলাকা পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে মুক্তাঞ্চল। সেখান থেকে পরিচালিত হয় চূড়ান্ত লড়াই। ১৫ এপ্রিলের পর ঠাকুরগাঁও এলাকায় শুরু হয় হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাট আর বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাটিভাঙ্গা ও রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়াদীঘি পাড়ে মুক্তিকামী লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ১৭ এপ্রিল জগন্নাথপুর, গড়েয়া শুখাপনপুকুরী এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষ ভারত অভিমুখে যাওয়ার সময় স্থানীয় রাজাকাররা তাদেরকে জড়ো করে মিছিলের কথা বলে পুরুষদের লাইন করে পাথরাজ নদীর তীরে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। একইভাবে রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়াদিঘীর পাড়ে গণহত্যা চালানো হয়। হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার নিরীহ মানুষজনকে পাকবাহিনী ধরে এনে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। মানুষের রক্তে এক সময় লাল হয়ে উঠে ওই পুকুরের পানি। পরবর্তীতে এ পুকুর খুনিয়াদীঘি নামে পরিচিত পায়।
ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তি বাহিনীর সাথে পাকিস্তানী বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় জুলাই মাসের প্রথম দিকে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গেরিলারা হানাদার বাহিনীর ঘাটির উপর আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে। বেশ কিছু ব্রিজ ও কালভার্ট উড়িয়ে দেয় তারা। দালাল রাজাকারদের বাড়ি ও ঘাটিতে হামলা চালায়। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক অভিযান চালায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। মুক্তি বাহিনীর যৌথ অভিযানে পঞ্চগড় মুক্তিবাহিনীর দখলে আসলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয় ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে। মিত্রবাহিনী যাতে ঠাকুরগাঁও দখল করতে না পারে সেজন্য পাকসেনারা ৩০ নভেম্বর ভূল্লী ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সর্বত্র বিশেষ করে ইক্ষু খামারে মাইন পুতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভূল্লী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করে।
১ ডিসেম্বর ভূল্লী ব্রিজ পার হলেও মিত্রবাহিনী যত্রতত্র মাইন থাকার কারণে ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকতে পারেনি। ওই সময় শত্রুদের মাইনে দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায়। এর পর এফ এফ বাহিনীর কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মাইন অপসারণ করে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। ২ ডিসেম্বর সারারাত প্রচণ্ড গোলাগুলির পর শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে সৈয়দপুরে আশ্রয় নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোর রাতে শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের
সিরিয়া সীমান্তে কুর্দিদের নিয়ে তুরস্কের উদ্বেগ বৈধ : যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ
এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণে ১২০ নিহত সুদানে
ভারতীয়দের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ সউদীর
দুর্গের মতো পুলিশের ঘেরাটোপে ট্রাম্পের অভিষেকের প্রস্তুতি
প্রথম পর্যায়ে মুক্তি পাবেন এক হাজার ফিলিস্তিনি
প্রশ্ন: চিন্তা কি অপরাধ?