ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে নোয়াবের মতবিনিময়

অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় সমস্যা সিন্ডিকেট এবং কিছু বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ। এজন্য এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত ভবিষ্যতের জন্য বড় বোঝা হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) মতবিনিময় সভায় গতকাল বক্তারা এ সব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অর্থনীতিবিদ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, এসওএএস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়্যারম্যান ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

নোয়াবের সদস্যদের মধ্যে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এ সময় নোয়ারের সদস্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রায় পঁচিশ জন সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোকপাত করেন। তাদের আলোচনায় মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট, রপ্তানিসহ সরকারী বিভিন্ন তথ্যে গরমিল, শিক্ষা ব্যবস্থা ও গুণগত মান, ব্যাংকিং সমস্যা ও সংকট, বিদেশি ঋণ, ডলারের বিনিময় মূল্য, অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধ, পশ্চিমা বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা, প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি, অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস, উন্নয়ন আলোচনার মতো বিষয়গুলো উঠে আসে।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ এখন বড় আলোচনার বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছিলাম, যে পর্যায়ে নেমেছে, সেটা ধরে রাখেন, আর অবনমন করতে দেবেন না। কারণ এরপরে আরো নামলে স্পেকুলেশন অনেক বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, ব্যক্তির ওপর স্যাংশন বা সংস্থার ওপর স্যাংশন এটা ওদের ব্যাপার এটাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু বাণিজ্যের স্যাংশন অত্যন্ত বড় জিনিস বাংলাদেশের জন্য। একটাই মাত্র পণ্য। সেটার ওপর আবার নতুন বিধিনিষেধ হলে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে।

ব্যাংক খাত নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে সবকিছু গভর্নরের ওপরে দায়িত্ব দিয়ে দিলে হবে না। এখানে মূল জিনিসটা হলো সার্বিকভাবে যেটা চলছে দেশে, সেটা সুশাসন বলেন বা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে চলছে, সেটা বলেন-এগুলো বলা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো ঠিক করতে না পারলে পেলিয়েটিভ ট্রিটমেন্ট দিয়ে লাভ হবে না। বাংলাদেশের সমস্যার মধ্যে প্রথমেই হলো এক্সটারনাল সমস্যা। কভিড হচ্ছে, ইউক্রেন ওয়ার। খালি বাইরের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। ভেতরের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। বর্হিস্থ সমস্যা নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত সমস্যা, সেটা থাকবে, এর মধ্যে থেকেই ভেতরের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো কম্পোনেন্ট আমরা অর্জন করতে পারিনি। অর্থাৎ তথ্যে বড় সমস্যা আছে। প্রবৃদ্ধি করতে হলে বিনিয়োগ লাগবে। পাঁচ বছরে ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য থাকলেও এসেছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। আমরা দেখছি এসব থেকে যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে সেগুলো কোনো তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না। সে কারণে জিডিপি তো বেড়েছে, কিন্তু অনুপাত গণনায় দেখা যায় আমদানি, রপ্তানি, রাজস্ব-সবগুলোর অনুপাত কমছে। অর্থাৎ মারাত্মক বড় ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি।

বিদেশি ঋণ নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন ড. মুশতাক খান। তিনি বলেন, আপনি বিদেশি কারেন্সিতে ঋণ নিচ্ছেন কিন্তু সেটা ফেরত দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। এটা যখন হয় তখন আপনি এক পর্যায়ে গিয়ে খেলাপি হবেন। এর সঙ্গে যোগ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত ভবিষ্যতের জন্য বড় বোঝা হবে।

ড. মুশতাক আরো বলেন, দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় সমস্যা সিন্ডিকেট এবং কিছু বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ। এজন্য এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। অর্থনীতিতে এখন প্রয়োজন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা। সেজন্য শক্ত রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা জানি যে আমরা ব্যালান্স অব পেমেন্টের সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আমি বলব এটা মাঝারি বা মডারেট ক্রাইসিস। এটা পূর্ণাঙ্গ সংকটে রূপান্তরিত হয়নি। হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে সরকার কিছুটা পলিসি রেসপন্স করছে বা করতে বাধ্য হয়েছে। যেমন এক্সচেঞ্জ রেটের ক্ষেত্রে করতে চায়নি কিন্তু বাধ্য হয়েছে। বাজার পরিস্থিতি বাধ্য করেছে।

বর্তমান সংকটের জন্য ঋণের সুদের হার ৬-৯ কে বড়ভাবে দায়ী করে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ কারণে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ব্যাংক থেকে অর্থ বের হয়ে গেছে। সেসব অর্থ আর ব্যাংকে ফিরে আসেনি।
ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, অর্থনীতির পরিস্থিতি সবার জানা। প্রশ্ন হচ্ছে উন্নয়নের গল্পটা ভবিষ্যতে জারি রাখতে পারবে না পারবে না। যেমন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য আমদানি হয়। কিন্তু উন্নয়ন গল্পে খ্যাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ফলে এটা সঠিক চিত্র নয়।

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর আরো বলেন, আমাদের যে মূল্যস্ফীতি এটা ঘটছে সরকারের নীতির কারণে। যেমন ঋণ পরিশোধ করতে টাকার দরকার হবে। তখন আরেকটা মূল্যস্ফীতি তৈরি হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির দিকে যাচ্ছে।

মতবিনিময় সভার সূচনা বক্তব্যে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, আরো নিবিড়ভাবে বোঝার জন্য নোয়াবের এই আয়োজন। অর্থনীতির সঠিক খবর যেন সংবাদমাধ্যম তুলে ধরতে পারে সেজন্য তাদের জানা-বোঝার প্রয়োজন আছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান