প্রতিবেশি ও পরিচিতজনরাই শিশু অপহরণে জড়িত
০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
প্রতিবেশী কিংবা পরিচিতজনদের মাধ্যমেই শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। উঠতি কিশোর-কিশোরীরাও শিকার হচ্ছে অপহরণের। সেখানেও সম্পৃক্ততা মিলছে স্বজন-পাড়া-প্রতিবেশীদের। অপহরণের এসব ঘটনায় অভিভাবদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। অপরাধ বিজ্ঞানী এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব অপরাধের জন্য অল্প সময়ে সহজে টাকা কামানোর কৌশল বলে দাবি করেছেন। তারা এজন্য সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে দায়ী করেছেন।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, অপরাজনীতি, বিচারহীনতা, মাদকের কারবার, কিশোর গ্যাং, অর্থ ও ক্ষমতার দাপট, এবং পেশাদার অপরাধিচক্র মিলে সমাজে একটি ভয়ঙ্কর দুষ্টচক্রের জন্ম হয়েছে। একইসাথে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাব, আকাশ সংস্কৃতি এবং শিক্ষায় ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চার অভাবে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন সাধারণ মানুষকে আদর্শহীন, নীতিহীন, বিবেকহীন করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিচিতজনদের মাধ্যমে শিশু কিশোর অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি এমনকি পাশবিক নিযৃঅতনের ঘটনায়ও ভাবিয়ে তুলছে সচেতনমহলকে।
কেস স্ট্যাডি (এক)ঃগত ৬ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর মিরপুর মনিপুর কাঠালতলা এলাকার বাসার সামনে খেলা করছিলো সাড়ে চার বছরের শিশু সাদমান। এ সময় প্রতিবেশি রনি আইসক্রিম কিনে দেয়ার কথা বলে শিশু সাদমানকে কোলে তুলে নেয় একটি দোকানে। সেখান থেকেই সাদমানকে নিয়ে হাওয়া রনি। সময় গড়াতেই শিশুর বাবার কাছে সন্তানের মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে ১ লাখ টাকা। একই সঙ্গে বিষয়টি থানা পুলিশ কিংবা ৯৯৯ এ জানালে শিশুটিকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয়। তবে সান্তনার বিষয় হচ্ছে, বিষয়টি জানতে পেরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগ ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শিশুটিকে আবদুল্লাহপুরে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। একই সঙ্গে অপহরনের সঙ্গে জড়িত ইব্রাহিম রনিকে গ্রেফতার করে। এ চক্রের হাতে এছাড়াও অপহৃত ৯ বছরের শিশু ইয়াছিন আরাফাতকে উদ্ধারসহ আফজাল মাতুব্বর নামে আরো এক অপহরণকারিকে গ্রেফতার করে । এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত অপহরণকারি রনি তাদের শিশু সাদমানের প্রতিবেশী। পাঁচ বছর আগে এই বাসায় ভাড়া ছিলো। পরবর্তীতে কিছু দিন আগে আবারও ভাড়ায় এই বাড়িতে ওঠেন রনি। পরবর্তীতে গত বুধবার দুপুরে দিকে শিশুটিকে আইসক্রিম কিনে দেয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। শিশুটির বাবা বলেন, অপহরণকারি পরিচিত বলেই কেউ তাকে প্রথমে সন্দেহ করিনি।
কেস স্ট্যাডি (দুই)ঃ যাত্রাবাড়ির ধলপুর কমিশনার গলির বাসিন্দা গোলাম রসুলের কিশোরপুত্র নুরুন নবী। স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলো সে। ঘটনাটি গত ২১ আগষ্টের। ওই দিন ছিলো নুরুন নবীর জন্মদিন। বিষয়টি জানতো নুরুন নবীর প্রতিবেশি অপর এক কিশোর হোসেন। চক্রের সহায়তায় হোসেন জন্মদিনের অনুষ্টান করার বলে কৌশলে নুরুন নবীকে বাসা থেকে ডেকে নেয়। পাশাপাশি বাসায় তাদের অবস্থান বলে কেউ কিছু সন্দেহ করেননি। হোসেন তাকে ডেকে নেয়ার পর থেকে খোঁজ মিলছিলো না নুরুন নবীর। দিন পেরিয়ে বিকেল। আবার বিকেল পেরিয় সন্ধ্যা। খোঁজ মেলেনি নুরুন নবীর। এরপর গভীর রাত। এরই মধ্যে ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে যাত্রাবাড়ি থানায় অবহিত করেন গোলাম রসুল। হঠাৎ গভীর রাতে হোয়াটঅ্যাপে অপরিচিত নম্বরে ফোন। অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে জানায়, নুরুন নবীকে পেতে হলে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। এভাবে দু’দিন ধরে চলে টালবাহানা। এক পর্যায়ে একটি বিকাশ নম্বর দেয় অপহরণকারি চক্র। সেই নম্বরে ২০ হাজার টাকাও পাঠানো হয়। কিন্তু অপহরণচক্র নুরুন নবীর বাবাকে হুমকি দিয়ে বলেছিলো বিষয়টি যেন থানা পুলিশকে জানানো না হয়। দু’দিন পর চ্ট্রগ্রামের একটি রেলস্টেশনে নুরুন নবীকে হাঁটতে থাকা অবস্থায় ভিডিও কলে দেখানো হয়। এবং দ্রুতই টাকা পাঠাতে বলা হয়। কিন্তু ছেলের অপহরনের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে বিষয়টি আঁচ করতে পারে অপহরণকারি চক্র। এতেই ক্ষিপ্ত হয় তারা। পরদিন ভোরে চট্টগ্রামের পাচলাইশের রহমান নগর হিলভিউ ১০ নম্বর গলির মাথা থেকে অজ্ঞাত হিসেবে নরুন নবীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর নুরুন নবীকে ডেকে নেয়া বন্ধু হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে জানা গেছে, এ অপহরনের পেছনে একটি চক্র রয়েছে। প্রতিবেশি কিংবা পরিচিতজনদের মাধ্যমেই তারা শিশু কিশোরদের অপহলন করে।
কেস স্ট্যাডি (তিন)ঃ
পেশাগত কারনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন হরিণাচালা এলাকায় ভাড়া বাসায় সপরিবারে বসবাস করতেন ভোলা সদর থানার কালিকৃতি গ্রামের মো. মমিনূর রহমান। তার একমাত্র পুত্র ইয়াসিন আল মাহমুদ। যার বয়স তখন মাত্র চার। একই বাসায় ভাড়া থাকতেন বিল্লাল হোসেন। চলতি বছরের ২৪ ফ্রেব্রুয়ারী বাসার সামনের গেটে খেলা করছিলো শিশু ইয়াসিন। এ সময় ইয়াসিনকে কোলে নিয়ে আদার করতে করতে দূরে চলে যায় বিল্লাল হোসেন। একপর্যায়ে ছেলেকে না পেয়ে ইয়াসিনের বাবা-মা খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপহরণকারী বিল্লাল হোসেন শিশুর বাবা মমিনূর রহমানের মোবাইলে ফোন করে অপহরণের কথা জানায় এবং ২০ লাখ ২৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মমিনূর থানায় ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকার ধামরাই থানার কালামপুর এলাকা থেকে ইয়াসিনকে উদ্ধার করে। একই সঙ্গে পুলিশ অপহরণকারী বিল্লাল হোসেনকেও গ্রেপ্তার করে।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছেন শিশু এই অবক্ষয় ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে জিরো টলারেন্স নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া দেশকে বাসযোগ্য করে তোলার বিকল্প কোনো পথ নেই।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখা ঠিক হবে না। সন্তানদের অভিভাবদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকায় পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
গোড়ারকান্দা দরবার শরীফের ওয়াজ মাহফিল ১৭-১৮ জানুয়ারি
সাটুরিয়ায় ৭০ কেজি জাটকা জব্দ করে এতিমখানায় বিতরন, দুই বিক্রেতাকে জরিমানা
মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সাহাদত হোসেনের ইন্তেকাল
দুর্বার রাজশাহীকে বিসিবির কড়া বার্তা
কুষ্টিয়া সীমান্তে উদ্ধার ভূখণ্ডে সীমান্ত পিলার স্থাপন করবে বিজিবি
চীনের আধিপত্য রুখতে ট্রাম্পের পদক্ষেপ
সর্বদলীয় সভায় অংশ নিবেন বিএনপির সালাউদ্দিন আহমেদ
নারীর সঙ্গে মদ্দপ অবস্থায় পুলিশ-আ.লীগ ডান্স পার্টি ভাইরাল, ভিডিওতে যা আছে?
আশুলিয়ায় হিজড়াদের অশ্লীল মেলা বন্ধের দাবীতে এলাকাবাসীর গণসাক্ষর
কুতুবউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে পূর্ব তিমুরের অনারারি কনসাল হিসেবে সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছেন
১৭ বছর পর কারামুক্ত বাবর
রোববার কার্যকর হবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, জানালেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী
এবার ৩০ যুদ্ধবন্দির বিনিময়ে ২৪৬৬ সেনা ফেরত পেল রাশিয়া
দেশের মানুষ আর ভোট বিহীন সরকার দেখতে চায় না - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
সর্বদলীয় সভায় অংশগ্রহণে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি
কিশোরগঞ্জে ভূয়া মানবাধিকার চক্রের ৯ সদস্য আটক
ভারতের বক্তব্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিক্রিয়া
লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা ফয়েজ হত্যা : শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক বালিতে বায়ু দূষণ, অতিষ্ঠ জনসাধারণ