ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
অবৈধভাবে ইউরোপে মরণযাত্রা-১৫ ভুক্তভোগীদের কারোর কষ্টের শেষ নেই

সদরপুরের আদম ব্যবসায়ীরা এখনও তেলে ঝোলে

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ/ আবুল হাসান সোহেল

১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

ফরিদপুর অঞ্চলের সদরপুরের আদম ব্যবসায়ীরা এখন তেলে ঝোলে আছে। অপরদিকে ভুক্তভোগীদের কারোর কষ্টের শেষ নাই। এক সময় ১৬ থেকে ১৭ জনের একটি আদম ব্যবসায়ী চক্র সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রামসহ বহু এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো এরা। খুব প্রভাব এবং অনেক টাকা পয়সার মালিক ছিলেন এরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় নিজগ্রাম এলাকার দেলো ফকিরের বাড়ীর পাশের জনৈক ৩০ বছর বয়সী এক নারী ইনকিলাবের দুই প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের এলাকার মো. জসিমউদ্দীন ফকির, তার ভাই জহুরুল ফকির আরেক ভাই মো. জাফর ফকির, এদের বাবা মো. হামেদ ফকির। এরা এক সময় ইরাক এবং কুর্দিস্তান লোক পাঠাতো। সে সময় তাদের এতটাই দাপট ছিল তাদের কাছে কিনার যাওয়াটাই ছিল খুব কষ্টের। তাদের পয়সার গরম এতটাই বেশি ছিল যে, পয়সার তাপে দুই এক গ্রামের মানুষ সিদ্ব হওয়ার অবস্থা ছিল। ঐ সময় দুই তিন গ্রাম এবং আশেপাশে দাপিয়ে বেড়ালেও কারোর বলার কিছু ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকেই কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে গ্রাম দুটি দল পক্ষ আছে। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলে কোনো কথা নয়। দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও দখলদারির দল পক্ষ এবং ক্ষমতার পেশী শক্তির মহড়া হতো প্রতিদিন। আদম ব্যবসায়ী কাম ইরাক প্রবাসী জসিম ফকির গংরা ছিল নিজগ্রাম পক্ষের সাবেক জনৈক মাতুব্বরের লোক। কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মো. দেলো ফকিরের তারই ওয়ার্ডের নির্বাচিত বর্তমান মেম্বার মো. জসিমউদ্দীন ফকির। জসিমউদ্দীন ফকির গংরা এখন দেলো ফকির মেম্বার দল পক্ষের লোক। জসীমউদ্দিন ও তার আপন ছোট ভাই মো. জহুরুল ছিলেন, ইরাক ও কুর্দিস্তান প্রবাসী। আরেক ছোট মো. জাফর খুবই নিরীহ।

বহু বছর আগে ছিলেন টাকার গরমে মহানায়ক। মাঝখানে কিছু দিন দেনার দায় মানুষের চাপে একটু গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও বর্তমান আবারও সচল হয়েছে জসীমউদ্দিন মেম্বারের আদম ব্যবসার চাকা। নিজ গ্রামের ও কৃষ্ণপুর বাজার এলাকার পেশীশক্তি ক্ষমতার মালিক এমন একটি পক্ষের এবং সাবেক চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল ফকিরের বিপক্ষে শক্তির সাথে মিশে এখনও তারা সাবেক পেশায় সক্রিয় অবস্থায় আছেন। অভিযোগ আছে জসীমউদ্দিন এবং তার ভাই জহুরুল এক সময় বহুলোকের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে দেনার পাহাড় করছেন তারা। অপরদিকে, ইরাক এবং কুর্দিস্তান, সউদী আরব যেতে লাখ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন যারা কাঙ্খিত দেশে না যেতে পারায় পথের ফকির হয়েছেন তারা।

অপরদিকে, একটি পক্ষ বলছেন, জসীমউদ্দিন এবং জহুরুল বহু লোকও বিদেশে নিছেন আমরা জানি এবং দেখেছি। কিন্তু বিষয়টি এমন হয়েছে টাকা নিছেন ৩০ জনের কাছ থেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন ৫ জন। বিদেশ যাওয়া এই পাঁচজনই পুনরায় লোক দিয়েছেন আরো ১০ জন। এমনি করে পাঁচজন প্রবাসীরই ২৫ জনও প্রত্যেকে ইরাক বা কুর্দিস্তান যাওয়ার জন্য ৪/৫ লাখ করে টাকা জমা দিয়ে আদম ব্যবসায়ীদের টাকার পাহাড় গড়ে দিয়েছেন। বিদেশ যেতে না পারা লোকেরা এখনও টাকা ফেরত নিতে ফকির বাড়ি পথ কেউ ছাড়ছেন না। মেম্বার কাম সাবেক প্রবাসী এবং আদমবেপারী জসীমউদ্দিন কায়দা করে এখন তিনি এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি।

এলাকার সচেতন মহল ও নিরীহ শ্রেণির মানুষ ইনকিলাবকে বললেন, কি আজব সমাজে বাস করি আমরা। কয়েক বছর আগে বিদেশ পাঠাতে না পারায়, টাকা ফেরত নিতে দল পক্ষ হয়ে যারা জসীমউদ্দিন ফকিরের ঘেরাও করছেন তারাই ভোট দিয়ে তাকে বিজয় মালা পড়িয়ে ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বানিয়েছেন। টাকা ফেরত দেয়া ও নেয়ার চাপও অনেক অনেকটা কমছে। কিন্ত কমেনি বিদেশ যাইতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা দেয়া কাঙ্খিত ব্যক্তির পরিবারের কষ্ট।

রোববার সরেজমিন প্রতিবেদনকালে জাতীয় ‘দৈনিক প্রথম কথার’ স্থানীয় উপজেলা সংবাদদাতা ফৌজিয়া আক্তার ইনকিলাবকে জানান, আমাদের এলাকার দীর্ঘদিন যাবৎ একটি আদম ব্যবসায়ী চক্র এলাকা দাপিয়ে বেড়ালেও কারো কোনো মাথা ব্যাথা নাই। পাশাপাশি কেউ কেউ তাদের শিকার হয়ে জীবন যৌবন জীবন সংসার সন্তান সবকিছু খোয়ায়ে এখন পাগল প্রায়।

তিনি ইনকিলাব আরো বলেন, আমার আপন বড় বোনের জামাই মো. তৈয়ব আলী ফকির পিতা. মো. মোজাহার ফকিরকে এই জসীমউদ্দিন মেম্বার কাম আদম ব্যবসায়ী ইরাকে নেয়ার জন্য বিগত ১০ থেকে ১২ বছর আগে ৫ লাখ টাকা নেন। ইরাকেও নেন ঠিকই কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ওখানে নেয়ার পর দুলাভাইরে মাসের বেতনের টাকা কখনই সে নিজে বাহিরে গিয়ে পরিবারের লোকজনকে পাঠাতে পারতো না। কারণ ভাইকে যে শর্তে তিনি বিদেশ নিয়েছেন তার কোনো শর্তই পালন করেন নি সে। খোঁজ খবর নিয়ে আমরা জানতে পারি তৈয়ব আলীর আকাম করিয়ে না দেয়াটা ছিল তার টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটা নিজস্ব কৌশল। যখন স্থানীয়ভাবে এবং দুলাভাই আকামা করার জন্য চাপ দেন তখন ভুয়া একটি আকামার কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বাহির বের হওয়ার সাহস দিলেন তিনি। এরপর নির্ভয়ে বাহিরে বের হন। পরে ইরাকের পুলিশ অবৈধ প্রবাসী হওয়ায় আটক করে জেলে দেয়। তখন তার পরিবারটি বড় অসহায় হয়ে পড়েন।

অপরদিকে, স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. হাওলাদার লতিফুল হক ইনকিলাবকে জানান, আপনারা দুইজন সিনিয়র সাংবাদিক একসাথে আসছেন দেখে খুবই ভাল লাগলো। আমরা স্থানীয় লোক তাই কোনো কিছু বলতেও পারি না। লিখতেও পারি না। এক সময়ের নাম করা ও প্রভাবশালী আদম ব্যবসায়ী এখন এলাকার জনপ্রতিনিধি। এটাই একটা কষ্টের বিষয়। যারা মানুষের জীবন যৌবন সংসার সন্তান সবকিছু শেষ করে দিচ্ছে তাদের বুকে আগলিয়ে আমরাই ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছি। আমাদের চরিত্র এখনও ঠিক হয়নি মানুষের দোষ দিয়ে লাভ কি?

আগামীকাল সোমবার ১৬ পর্বে পড়ুনকে এই জসীমউদ্দিন ফকির তার আসল পরিচয় কি? লুটছেন কত টাকা? ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানি করলেন কত জনকে? থাকবে জসীমউদ্দিনেরও বক্তব্য। হকার বলুন একটি ইনকিলাবের কপি রাখতে। (চলবে)


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ

মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ

গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম

গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম

মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী

মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী

নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড

নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?

মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক

বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক

প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম

প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম

অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন

অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন

ময়মনসিংহে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ প্রকল্পের লটারি অনুষ্ঠিত

ময়মনসিংহে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ প্রকল্পের লটারি অনুষ্ঠিত

পাঠ্যবইয়ে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ভুল তারিখ সংশোধন, জড়িতদের শোকজ

পাঠ্যবইয়ে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ভুল তারিখ সংশোধন, জড়িতদের শোকজ

টাঙ্গাইল হাসপাতালে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা

টাঙ্গাইল হাসপাতালে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা

স্থানীয় খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স এবারের বিপিএলকে জাঁকজমক করেছে: আশরাফুল

স্থানীয় খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স এবারের বিপিএলকে জাঁকজমক করেছে: আশরাফুল

কুয়েট ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

কুয়েট ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

বিরলে বিরল প্রজাতির লক্ষীপেঁচা উদ্ধার

বিরলে বিরল প্রজাতির লক্ষীপেঁচা উদ্ধার

সাগর-রুনি হত্যা: সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউলকে ২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

সাগর-রুনি হত্যা: সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউলকে ২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

অবিশ্বাস্য নতুন চুক্তিতে প্রতি মিনিটে রোনালদোর আয় ৪৩ হাজার টাকা!

অবিশ্বাস্য নতুন চুক্তিতে প্রতি মিনিটে রোনালদোর আয় ৪৩ হাজার টাকা!

মতলবের মেঘনা -ধনাগোদা নদীতে বিশেষ কম্বিং অভিযানে জাগ উচ্ছেদ ও জাল জব্দ

মতলবের মেঘনা -ধনাগোদা নদীতে বিশেষ কম্বিং অভিযানে জাগ উচ্ছেদ ও জাল জব্দ

ঘোষণাপত্র নিয়ে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য: জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক

ঘোষণাপত্র নিয়ে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য: জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক

মির্জাপুরে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে  পিটিয়ে আহতের অভিযোগ

মির্জাপুরে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহতের অভিযোগ