ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
অবৈধভাবে ইউরোপে মরণযাত্রা-১৬

সদরপুরের ভুক্তভোগীদের আর্তচিৎকার শোনার কেউ নেই?

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ/ আবুল হাসান সোহেল

১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

টাকা দিয়েও বিদেশ যেতে পারেনি আবার অনেকে বিদেশ গেছেন ঠিকি কিন্তু আকামা না পাওয়ার কারণে জেল খেটে আবার সদরপুরের খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন এমন বহুজনের সন্ধানও মিললো। এরকম ভুক্তভোগীদের আত্মচিৎকার শোনার মতো এখন কেউ। বিদেশ গিয়ে অল্পদিনে বহু টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া মানুষগুলো দেনার দায় এখন পথের ফকির হয়ে পাগলের মত ঘুরছে পথে পথে। কোথাও কোনো কাজ তো পায়ই না। আবার কোথাও কোনো কাজ পেলেও দেনার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে অনেকে। ভুক্তভোগীদের এখন কেউ ২০ কেজি চালও বাকি দিতে সাহস পায় না। একদিকে পাওনাদারদের নানান ধরনের কথা এবং দ্রুত দেনা পরিশোধ করতে এলাকাভিত্তিক চাপও কম নয়। সামাজিক এবং আইনের জটিলতাও আছে অনেক। পাশাপাশি স্ত্রী কন্যাসহ স্বজনরা পড়ছে মহাযন্ত্রণায়। এমনই একটি পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে পরিবারের সকলেরই একসাথে গলায় ধরি দিয়ে আত্মহত্যা করার উপক্রম হয়ে পড়ছে ভুক্তভোগীদের অনেকের। ঠিক এমনটা বললেন সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রামের বাসিন্দা মো. তৈয়ব আলী ফকির পিতা. মো. মোজাহার ফকির।

তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, ভাইজানরা ৫ বছর ইরাকে ছিলাম কিছু করতে পারিনি। সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে তিনি ইনকিলাবের এই প্রতিবেদককে জানান, বড় আশা করে আমার এলাকার মো. জসীমউদ্দিন ফকির এবং তার ভাই জহুরুল ফকিরকে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ইরাকে যাই। সেখানে গিয়ে প্রথমে কাজ নাই। আকামা করার পরে বাহিরে গিয়ে কাজ করতে পারিনি। আকামা না হওয়ার কারণে ইরাকের পুলিশ খুব জালতন করতো। সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৈয়ব আলীর সাথে ইরাকে যাওয়া অপর এক যুবক ইনকিলাবকে বলেন, আমিও জহুরুল ফকিরের মাধ্যমে ইরাকে গেছিলাম আকাম পাইনি তাই লুকিয়ে লুকিয়ে চোরের মতো কাজ করতে হয়েছে। এভাবে চললে যে কোনো সময় বিপদ হতে পারে সেই ভয়ে মহিলা মানুষের মতো লুকিয়ে কাজ করতে হতো। এরপর কাজ পেলাম। কোনো রকম এখন মাসের বেতনের টাকা বাড়ি পাঠানোর চিন্তা করলাম সেখানে গন্ডগোল। কাজ করি আমি বেতন হাতে নিয়ে নিজ হাতে বাবা-মা-বউ বাচ্চাদের কাছে টাকা পাঠাবো আমি তা পারিনি। কারণ যার মাধ্যমে ওখানে গেছি তিনিই মুল মালিকের কাছ থেকে মাসের বেতন নেন এবং তিনি আমার মাসের টাকা বাড়ি পাঠান। শেষ পর্যন্ত আমি ইরাকের পুলিশের হাতে ধরা পড়ি প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস জেলও খাটি। শেষ পর্যন্ত জহুরুল আমার কোন ক্ষতি পুরণও দেয়নি।

তিনি আরো বলেন, জহুরুলের আপন ভাই জসিমউদ্দীন ফকির তিনিও বিদেশে আগে লোক পাঠাতেন এখনও পাঠায়। সহজভাবে কাউকে পাঠাতে পারলে কোনো জামেলা হয় না। কেউ জানেও না। ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়া যখন পাঠাতে পারে না তখনই গ্রামের লোক জেনে যায়।

এই বিষয় ইনকিলাবের সাথে কথা কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জসিমউদ্দীনের সাথে তিনি বললেন, আমি এখনও ইরাকে লোক পাঠাই। তবে ভিসা পাইলেই পাঠাতে পারবো। এই দুই প্রতিবেদক তাকে প্রশ্ন করেন ভাই ইরাক যেতে কত টাকা লাগবে? তিনি খুব আরাম আয়েশে বললেন মাত্র ৫ লাখ টাকা। কতদিনে পাঠাতে পারবেন? তিনি বললেন কাগজপাতি সব ঠিকঠাক করারসহ ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যে পাঠানো যাবে। তাকে প্রশ্ন করা হলো, আপনি বিদেশে ছিলেন কত বছর? বললেন, মোট ১০ থেকে ১১ বছর হবে। প্রথমে সাইপ্রাসে ৬ থেকে ৭ বছর। এরপর ইরাকে ছিলাম ৩ থেকে ৪ বছর। আপনি কোন কোন দেশে লোক পাঠাতে পারেন? বললেন শুধু ইরাকেই। প্রশ্ন করা হলো আপনার আরেক ভাই বিদেশ থাকেন তার নাম কি? নাম মো. জহুরুল ফকির কোথায় থাকেন? একটু রেগেই বললেন, তা আমি জানি না। ওর সাথে আমার ভেজাল চলছে। আপনার ভাই কি এখনও লোক পাঠায়? কোন দেশে পাঠায়? প্রশ্ন করা হলো আপনি জেলে ছিলেন কেন? কতদিন ছিলেন? আদম মামলা করছিলো কে? তার বাড়ী কোথায়? তিনি রেগে বললেন এটা আমার কোন বিষয় না, জহুরুল একটা সমস্যা করছিলো সে বিষয় একটা মামলা হয়। আমার কোন সমস্যা হয়নি। সমস্যা ভাইর এই বিষয় আমারে প্রশ্ন করবেন না। পরের জামেলা কাঁধে নিবো না।

এই বিষয় ইনকিলাবের সাথে কথা হয় ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার দেলো তালুকদারের সাথে তিনি ইনকিলাবকে বললেন, ওরা দুই ভাই ইরাকে থাকতো জসিম উদ্দিন ভাল ওর ভাইয়ের সাথে বহু লোকের জামেলা হইছে আমি জানি। জহুরুল এখন জাপান আছে আমি শুনেছি। অপরদিকে, দুই দালালকে খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসলো মানব পাচারকারী ৭০ সিন্ডিকেটের গোপন তথ্য। বেরিয়েছে মজার ও মধুর কথা বলে বিদেশ নিয়ে কৌশলে মাফিয়াদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে লাখ লাখ মুক্তিপণ নেন চাহিদা মতো। মুক্তিপণ না দিলে চলে অববর্ণীয় নির্যাতন।

ইনকিলাবের সাথে কথা উল্লেখিত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল ফকিরের সাথে তিনি বললেন জসিম ও জহুরল ওরা বিদেশে ছিলো। জসিম দেশে আছে জহির বিদেশে। ওদের এক ফুফাতো ভাই নাম মো. রাজ্জাক মানিদাহ বাড়ি ওর মাধ্যমে ও ওরা বিদেশে লোক পাইতো আমি শুনছি। মাঝে মাঝে জামেলা হয় শুনি। আর কিছু জানি না। আগামীকাল ১৭ পর্বে জানুন সদরপুরে ৭০ মাফিয়া সিন্ডিকেটের সদস্য হাবি মুন্সি পিতা. মো. জব্বার মুন্সী এরা ইরাকে আটকিয়ে কিভাবে মুক্তিপণ আদায় করেন! (চলবে)


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব

গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব

কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই

এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই

লৌহজংয়ে দিনমজুর যুবকের আত্মহত্যা

লৌহজংয়ে দিনমজুর যুবকের আত্মহত্যা