নগরীতে সিগারেটের ছেঁকা দিয়ে দুই বছরের এক শিশুকে হত্যার ঘটনায় শিশুটির সৎ পিতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার মো. ইয়ামিন (২৪) শিশুটির মায়ের তৃতীয় স্বামী। নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের পকেট গেইট এলাকা থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ইপিজেড থানার ওসি মোহাম্মদ হোসেন। তিনি গতকাল সোমবার ইনকিলাবকে জানান, শিশুটিকে সহ্য করতে পারতেন না ইয়ামিন। আর এ কারণে শিশুটির মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে তার শরীরে সিগারেটের ছেঁকা দেয় সে। এরপর মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত করা হয়।

তাতে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে। তবে শিশুটির মা প্রথমে ঘটনা বুঝতে পারেনি। কোন কারণে সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মনে করে তাকে নিয়ে ছুটেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। তবে শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। মৃত্যুর পর তার শরীরে পোড়া দাগ দেখে নিশ্চিত হন তাকে খুন করা হয়েছে। গ্রেফতার ইয়ামিন রোববার সন্ধ্যায় মহানগর হাকিমের কাছে খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান ওসি মোহাম্মদ হোসেন। দুগ্ধপোষ্য মাসুম শিশুর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ইয়ামিন নগরীতে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। নিহত শিশুটির মা রওশন আরা বেগম নগরীতে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ইয়ামিনকে পুলিশের কাছে তার তৃতীয় স্বামী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি। পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার দুই বছর বয়সী সন্তানকে ইয়ামিনের কাছে রেখে কাজে গিয়েছিলেন রওশন। বিকেলে রওশন বাসায় ফিরে সন্তানকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে তাকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সে সময় ইয়ামিনই সঙ্গে ছিলেন। শিশুটির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই হাসপাতাল থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর সেখানে আইসিইউতে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আইসিইউ বেড খালি না থাকায় শিশুটিকে তখন আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

ওসি হোসেন বলেন, গত শনিবার বাসায় আনার পর শিশুটির দাফনের প্রস্তুতি নিলে রওশন চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তখন প্রতিবেশীরা জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে এ ঘটনা জানায়। রওশন জানায়, তার শিশুটির শরীরের একাধিক স্থানে পোড়া দাগ রয়েছে এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ গিয়ে ইয়ামিনকে আটক করে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর মা রওশন আরা ইপিজেড থানায় ইয়ামিনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৭ ডিসেম্বর শিশু সন্তানকে বাসায় রেখে রওশন কাজে গেলে, ইয়ামিন শিশুটির শরীরে সিগারেটের ছেঁকা দিয়েছিল। রওশনের অভিযোগের বরাত দিয়ে ওসি জানান, ইয়ামিন তার দুই বছর বয়সী সৎ ছেলেকে সহ্য করতে পারতেন না।