ঢাকা   বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৯ কার্তিক ১৪৩১

বাইতুল মাকদিস বিজয়

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

বাইতুল মাকদিস ১৬ হিজরিতে অর্থাৎ নবী কারীম (সা.)-এর ইন্তেকালের পাঁচ বছর পর হযরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে প্রথম মুসলমানদের হাতে এসেছে, কীভাবে এসেছে, ওই ইতিহাস শুনলেই ইমান তাজা হয়ে যায়।
ইমান জিন্দা হয়ে যায়। আবু উবাইদা (রা.)সহ সাহাবিগণ যখন বাইতুল মাকদিসের ফিলিস্তিন-এলাকা ঘেরাও করলেন, তারা চেয়েছেন, যাতে কোনো রক্তপাত না হয়। খ্রিস্টানরা কত ধরনের জুলুম-অত্যাচার করেছে, সব তারা ভুলে গিয়ে অত্যন্ত সুন্দর ব্যবস্থাপনায় তাদের নিরাপত্তা দিয়ে সন্ধির মাধ্যমে মুসলমানরা বাইতুল মাকদিস গ্রহণ করেছেন। এভাবে বাইতুল মাকদিসের যারা প্রকৃত হকদার, তাদের হাতে এসেছে এই মসজিদ।

১৬ হিজরিতে স্বয়ং হযরত উমর (রা.) বাইতুল মাকদিসে গিয়ে মসজিদ পরিষ্কার করেছেন। ওরা কেবল কুফর-শিরকের নাপাকি নয়; বরং গান্ধা-আবর্জনা দিয়ে ভরে রেখেছিল মসজিদের একটা অংশ। উমর রা. নিজহাতেও অনেকগুলো সাফ করেছেন, লোক দিয়েও সাফ করিয়েছেন। মুসলমানেরা মসজিদ সাফ করেছেন এবং সন্ধি করেছেন, এই এই শর্তে তোমরা এখানে থাকতে পারবে। কোনো সমস্যা নেই।

এভাবে বাইতুল মাকদিস এসেছে মুসলমানদের হাতে। মারা যাওয়া তো দূর; একটা লোকেরও কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। প্রায় পাঁচশ বছর মুসলমানদের হাতে ছিল বাইতুল মাকদিস। এরপর খ্রিস্টানরা এসে আবার এটা দখল করল। দখল করার সময় মুসলমানদের ব্যাপকহারে হত্যা করল। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানি, মাত্র নব্বই বছরের মধ্যে আল্লাহ তাআলা আবার সালাউদ্দীন আইয়ুবীর মাধ্যমে বাইতুল মাকদিস দান করেছেন মুসলমানদের হাতে। এরপর হাজার বছরের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ছিল মুসলমানদের হাতে।

১৯৪৮ সালে এসে ইহুদীদেরকে এনে বসানো হল। ব্রিটিশরা বসিয়েছে এদেরকে। প্রথমে জবরদস্তি একটু জায়গা নিলো, এরপর শুরু হলো একটার পর একটা দখল করা। দখল করে যাচ্ছে, একের পর এক জুলুম করে যাচ্ছে। বাইতুল মাকদিসের সম্মান নষ্ট করছে, মুসলমানদের হত্যা করছে, মেয়েদের হত্যা করছে, শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করছে। আর সবাই বসে বসে তামাশা দেখছে!

কেন? কারণ আমরাও তো আসলে এমনই। আমাদের আখেরি নবীর আদর্শের ওপর আমরা কতটুকু আছি? এক আফগানিস্তানের ইমারতে ইসলামিয়া ছাড়া কোনো একটা মুসলিম দেশ কি আছে, যেখানে ইসলামি হুকুমত আছে? আল্লাহ তো দেখছেন সব! ১৯৪৮ থেকে ২০২৩, এই পর্যন্ত কত ধরনের যে জুলুম তারা করেছে, করে যাচ্ছে। চুক্তি লঙ্ঘন তো ওদের একেবারে স্বভাবের মধ্যেই আছে। তাছাড়াও আরো যত ন্যাক্কারজনক কাজ আছে, সবই তারা করছে।

এবার সম্ভবত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর একটু কুদরত দেখাচ্ছেন। ফিলিস্তিনের মুজাহিদ ভাইদের হাতে কী আছে? কিন্তু ওদের সঙ্গে তো দুনিয়ার সব সুপার পাওয়ার। এরপরও মোটামুটি এবার কিছুটা হলেও ইহুদিরা ভয় পাচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুদরতিভাবে হিম্মত দিয়েছেন মুজাহিদদেরকে। এখন আমাদের সবার দায়িত্ব হলো সালাতুল হাজত পড়ে পড়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা। বেশি বেশি তওবা ও ইসতেগফার করা। আমাদের গোনাহর কারণেই এই মুজাহিদ এবং নারী-শিশুরা কষ্ট পাচ্ছে। এই জালিমরা মসজিদে আকসার মতো পবিত্র জায়গা, যেখান থেকে নবী (সা.)-এর মিরাজ হলো, সেই জায়গা তারা অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছে।

খুব দু’আ করি, এবারই যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাইতুল মাকদিস ফাতাহ করে দেন! ফিলিস্তিনকে আল্লাহ তা’আলা বিজয় দান করেন! ইসরাইলকে আল্লাহ তা’আলা ধ্বংস করে দেন! এদের জমিনের ওপরে থাকার অধিকার নেই। নিজেরাই নিজেদের অধিকার নষ্ট করে ফেলেছে। সবাই খুব দু’আ করি! ইসতেগফার করি! বেশি বেশি সালাতুল হাজত পড়ি। ‘কুনুতে নাযেলা’-এর দু’আ যাদের মুখস্থ আছে, মুনাজাতে পড়ব। নফল নামাজে পড়ব। সিজদার মধ্যে পড়ব। বিতরের নামাজে দু’আয়ে কুনুত যেটা পারি সেটা তো পড়ব, কুনুতে নাযেলাও পড়ব। যাদের মুখস্থ নেই, মুখস্থ করে ফেলতে পারি।

আমরা এই দু’আগুলোও পড়তে পারি : ‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সবরাও ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়ানসুরনা আ’লার ক্বাওমিল কাফিরিন। রাব্বানাগফিরলানা যুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফী আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়ানসুরনা আ’লার ক্বাওমিল কাফিরিন’। সেই সঙ্গে আমরা বেশি বেশি দু’আ ইউনুস পড়ব। আল্লাহ তা’আলা ভরপুর তাওফিক দান করুন -আমীন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে মুজিবের ছবি সরানো হয়েছে : মাহফুজ আলম
এই সরকারকে সব সংস্কারে হাত দেওয়ার দরকার নেই : মির্জা ফখরুল
আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট
ড.মুহাম্মদ ইউনুস জলবায়ু সম্মেলনে আজ দুপুরে ভাষণ দেবেন
এনআইবির মহাপরিচালক নিয়োগে সুপারিশ নিয়ে যা বললেন নাহিদ
আরও

আরও পড়ুন

কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে মুজিবের ছবি সরানো হয়েছে : মাহফুজ আলম

কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে মুজিবের ছবি সরানো হয়েছে : মাহফুজ আলম

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছীতে সবুজ নামের এক যুবককে মোটরসাইকেলসহ পুড়িয়ে হত্যা

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছীতে সবুজ নামের এক যুবককে মোটরসাইকেলসহ পুড়িয়ে হত্যা

টাঙ্গাইলে নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী

টাঙ্গাইলে নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী

ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ জাতিকে বিভক্ত করেছে, আমরা বিভক্তি দুর করে এক্যবদ্ধ জাতী চাই- ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির মহাসচিব

ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ জাতিকে বিভক্ত করেছে, আমরা বিভক্তি দুর করে এক্যবদ্ধ জাতী চাই- ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির মহাসচিব

আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের কারণে অস্ট্রেলিয়া-বালি ফ্লাইট বন্ধ

আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের কারণে অস্ট্রেলিয়া-বালি ফ্লাইট বন্ধ

১০০০ গোলের স্বপ্ন এখনও দেখছেন রোনালদো?

১০০০ গোলের স্বপ্ন এখনও দেখছেন রোনালদো?

কুয়াকাটায় রাস উৎসবের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি, সাজ সাজ রব

কুয়াকাটায় রাস উৎসবের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি, সাজ সাজ রব

কাপ্তাইয়ের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সীতাকুণ্ড হতে গ্রেপ্তার

কাপ্তাইয়ের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সীতাকুণ্ড হতে গ্রেপ্তার

অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় শার্শা সীমান্তে ৩ নারী আটক

অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় শার্শা সীমান্তে ৩ নারী আটক

এই সরকারকে সব সংস্কারে হাত দেওয়ার দরকার নেই : মির্জা ফখরুল

এই সরকারকে সব সংস্কারে হাত দেওয়ার দরকার নেই : মির্জা ফখরুল

পাকিস্তানের উত্তরের ইন্দুস নদীতে বাস দুর্ঘটনা,অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু

পাকিস্তানের উত্তরের ইন্দুস নদীতে বাস দুর্ঘটনা,অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু

ফ্যাসিবাদী সাবেক মেয়র আতিক আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে

ফ্যাসিবাদী সাবেক মেয়র আতিক আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে

একসঙ্গে ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ৪ ঘূর্ণিঝড়

একসঙ্গে ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ৪ ঘূর্ণিঝড়

"হিনার আবেগঘন পোস্টে দুশ্চিন্তায় ভক্ত-অনুরাগী"

"হিনার আবেগঘন পোস্টে দুশ্চিন্তায় ভক্ত-অনুরাগী"

নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় অপরাধীদের বিচার দাবি জাবি ছাত্রশিবিরের

নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় অপরাধীদের বিচার দাবি জাবি ছাত্রশিবিরের

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই : সারজিস আলম

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই : সারজিস আলম

যশোরের ঝিকরগাছায় শিশু কন্যাকে গলা টিপে হত্যা

যশোরের ঝিকরগাছায় শিশু কন্যাকে গলা টিপে হত্যা

ট্রাম্পের মন্ত্রীসভায় চীন বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট !

ট্রাম্পের মন্ত্রীসভায় চীন বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট !

আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট

আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট

বেনাপোল : মণিরামপুরে হঠাৎ চুলকানিতে এক স্কুলের অর্ধশত শিশু শিক্ষার্থী হাসপাতালে

বেনাপোল : মণিরামপুরে হঠাৎ চুলকানিতে এক স্কুলের অর্ধশত শিশু শিক্ষার্থী হাসপাতালে