বাংলাদেশকে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে বলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
বাংলাদেশকে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ এবং করপোরেট দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, স্বল্প বেতন, বিক্ষোভ দমন এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হতাহতের ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ শ্রমিক অধিকারের জন্য ব্যাপকভাবে ঝুঁকি তৈরি করছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে শ্রমিকেরা তাঁদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং সম্মিলিতভাবে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এই অঞ্চলে সবচেয়ে কম মজুরি পান এই শ্রমিকেরা। তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত হওয়া ও মৃত্যুর ঘটনাও বেশি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শ্রমিকদের মতপ্রকাশ, সংগঠন ও সমাবেশ করার স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিতে অবিলম্বে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি শ্রমিক এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা যেন পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত হওয়া ও মৃত্যুজনিত কারণে সময়মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পান, সে জন্য আইনগত পরিবর্তন আনতে আহ্বান জানাচ্ছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কম মজুরি, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ, বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের দমন-পীড়ন, শ্রমিক অধিকার রক্ষায় ব্যর্থতা, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত হওয়া ও শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য করপোরেট জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের অগ্রহণযোগ্য হারে মৃত্যু ও আঘাত অব্যাহত থাকা, পেশাগত মৃত্যু ও আঘাতের জন্য একেবারেই অপর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় আগুনে শ্রমিকদের হতাহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের জন্য কিছু সুপারিশ দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই শ্রমিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। শ্রমিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। শ্রমিক অধিকারের পক্ষে কাজ করতে হবে। এর মধ্যে তৃতীয় পক্ষের অপব্যবহার থেকে শ্রমিকদের রক্ষায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ নীতি, আইন, প্রবিধান ও প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কিছু সুপারিশের কথা উল্লেখ করেছে। সেগুলো হলো- মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভকালে চার শ্রমিক হত্যার ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করুন। পোশাকশ্রমিকেরা যাতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত মজুরি পান, তা নিশ্চিতে মজুরি নির্ধারণ নীতি ও পদ্ধতি জরুরিভাবে পর্যালোচনা করুন। মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি নিশ্চিতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর মজুরি পুনর্বিবেচনার বর্তমান ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। মজুরি স্তরগুলো নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পর্যালোচনা করা উচিত। মজুরি বৃদ্ধি প্রতিবছর জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি প্রভৃতির হালনাগাদ পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা উচিত।
মজুরি বোর্ডের নেওয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়ন করুন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে একটি ন্যূনতম মাসিক মজুরি গ্রহণ করুন। মানসম্পন্ন জীবনযাপনে শ্রমিকেরা যাতে নিজেদের, তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের পর্যাপ্তভাবে সহায়তা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করুন।
কারখানা পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, ট্রেড ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে শ্রমিকেরা যাতে সংগঠন করার স্বাধীনতা ও সম্মিলিতভাবে নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরার স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করুন। তাঁরা যাতে সরকারি কর্তৃপক্ষ ও কারখানার মালিকদের সঙ্গে সত্যিকারের সামাজিক বিষয়াবলিতে সংলাপে যুক্ত হতে পারেন, তা নিশ্চিত করুন। শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও ধর্মঘটের স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করুন।
শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের সুরক্ষা ও তার চর্চা সহজ করার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সব সংস্থা যাতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলে, তা নিশ্চিত করুন। বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে তারা যাতে আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ড কঠোরভাবে মেনে চলে, তা নিশ্চিত করুন। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার ঘটনা একটি ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা হওয়া উচিত। ছত্রভঙ্গ করার জন্য কখনোই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ও শিশু আইন ২০১৩-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রম আইনে শিশুর সংজ্ঞা সংশোধন করুন। শিশুদের শ্রমে নিয়োগের জন্য করপোরেশনগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনুন।
নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রম নিরসন-সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন (কনভেনশন নম্বর ১৮২) লঙ্ঘন করে যাতে কোনো শিশুকে শ্রমে নিয়োগ করা না হয়, তা নিশ্চিত করুন। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশনগুলো অনুসমর্থন করুন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান