কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত ২৮ অক্টোবরের তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড-মামলা-গ্রেফতার পূর্বপরিকল্পিত : রিজভী
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
২৮ অক্টোবরের তাণ্ডব, হত্যাকাণ্ড, হামলা-মামলা যে পূর্বপরিকল্পিত তা কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করে পুলিশের তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা-মিথ্যা মামলা-গ্রেফতার-হুলিয়া-হত্যা-বিএনপিসহ বিরোধী দলের বাড়ি-ঘরে হামলা-তল্লাশি-ভাংচুর-গৃহছাড়া-আটক-বাণিজ্য সব কিছু শেখ হাসিনার পূর্ব পরিল্পিত।
শেষ পর্যন্ত এই (কৃষিমন্ত্রী) প্রভাবশালী মন্ত্রী হাঁটে হাঁড়ি ভেঙে স্বীকার করলেন যে, দেশের আইন-আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-প্রশাসন, কোট-কাঁচারি, বিচার-আচার সব কিছুই আওয়ামী মাফিয়া সরকারের হাতে বন্দি। বিচার ব্যবস্থা আর আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে গেছে। পৃথক কোনো স্বত্তা নেই, দেশে কোনো আইন নেই, সব কিছু শেখ হাসিনার ইশারায় চলছে। গতকাল সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত রোববার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাকারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, “সিট ভাগাভাগির-নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন কন্টকমুক্ত করার জন্যই বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জেলে রাখা হয়েছে। বিএনপিকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে, এমনকি একরাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাবও তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি”।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে, আমরা মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের থেকে একটি কবিতা পড়তাম। আমাদের পাঠ্য কবিতার প্রথম লাইনটি ছিলো, এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে। কিন্তু এখানে আমরা একটু পরিবর্তন করে বলতে চাই, এতক্ষণে ড. আব্দুর রাজ্জাক কহিলেন হরষে অত্যন্ত আনন্দের সাথে। এই হরষের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করে পুলিশ তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা-মিথ্যা মামলা-গ্রেফতার-হুলিয়া-হত্যা-বিএনপিসহ বিরোধী দলের বাড়ি-ঘরে হামলা-তল্লাশি-ভাংচুর-গৃহছাড়া-আটক-বানিজ্য সব কিছু শেখ হাসিনার পূর্ব পরিল্পিত। বিচার ব্যবস্থা আর আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে গেছে, পৃথক কোন সত্বা নেই। দেশে কোন আইন নেই, সব শেখ হাসিনার ইশারাই চলছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলা দায়ের আর অর্ধ কোটি আসামী করা হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে। কারাগারে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে সরকারের ব্লুপ্রিন্টে। বিনা কারণে বাংলাদেশী নাগরিক গ্রেফতার, নির্বিচারে বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর নেতাকর্মীদের কারাগারে আটক ও নির্যাতন, ইচ্ছা মাফিক জেল ও জামিন বিচার বিভাগের অস্তিত্বকেই বিলিন করে দিয়েছে।
রিজভী বলেন, বিচার বিভাগ আইনের গতিতে নয়, চলছে গণভবনের গতিতে, শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো গতিতে, তিনি এর মোমেন্টামটা ধরে রেখেছেন, গণভবন যে গতিতে যাবে, যেভাবে বলবে, বিচার বিভাগের গতি তাই থাকবে। অমুককে কারাদণ্ড দিন, অমুককে এতো বছরের জেল দিন, এগুলো সবই যেভাবে গণভবন থেকে যাচ্ছে, সেভাবেই হচ্ছে। আবদুর রাজ্জাক তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নিজেই তা প্রমাণ করলেন, হ্যাঁ তারাই সব কিছু করে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে কার্যত: আওয়ামী লীগের একটি ইউনিটে পরিণত করা হয়েছে। পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে বেঁছে বেঁছে বিচার বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ কারণে গত ১৫ বছর ধরে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের আওয়ামী নমুনা কৃষিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০ হাজার নির্দোষ নেতাকর্মীকে নিবিঘ্নে নির্বাচন করতে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারাদেশের নির্দোষ নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে, তাদের জামিনের অধিকারও খর্ব করা হয়েছে। এতো ক্ষমতা তাদের হাতে, তারা যে অপকর্ম করছেন সেগুলো বলতেও তারা দ্বিধায় করছে না। নার্সিসিষ্টিক সিকনেস’ অতি আত্মমুগ্ধতার ক্ষমতায় তারা অতি বেশি আত্মমুগ্ধ হয়ে আছেন যে তারা এখন আত্মমুগ্ধতার অসুস্থতায় ভুগছেন। কত বেপরোয়া নিষ্ঠুর সরকার হলে এমনটি করতে পারে।
ভারতের এম জে আকবরেরে বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রতিথযশা সাংবাদিক ও লেখক এম জে আকবর বাংলাদেশে এসে এক সেমিনার শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিশিরাতের ভোট ডাকাত, ১৫ বছর বন্দুকের নলের মুখে জনগণের ঘাড়ে দৈত্যের মতো চেপে বসা গণবিচ্ছিন্ন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে স্তুতি আর প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন। তার বক্তৃতা শুনে তার সম্পর্কে যারা অবগত তারা রীতিমতো বিস্মিত-হতবাক হয়েছেন। এম জে আকবরের মতো একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিকের চোখ যদি এরকম অন্ধ হয়ে যায় শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে একটা জনসমর্থনহীন, স্বৈরাচার, যারা কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ড করছেন তার প্রশংসা করেন। তাহলে এতো গুম, পৃথিবীর সমস্ত হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন তারা যে একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট পেশ করেছেন এগুলো কোনো কিছুই কি এম জে আকবর সাহেবের গোচরে আসেনি। উনি যেটাকে শেখ হাসিনার মুক্তি সংগ্রাম বলেছেন সেটা আওয়ামী লীগের মুক্তির সংগ্রাম, তারা কি করে কানাডায় বাড়ি করবে, বেগমপাড়া বানাবে, তারা কি করে সিডনিতে তাদের সেকেন্ড হোম বানাবে, তাদের নেতাদের অর্থনৈতিক মুক্তি হচ্ছে শেখ হাসিনার মুক্তির সংগ্রাম। আর এমজে আকবর সাহেব চোখ বন্ধ করে স্তুতি গাইলেন স্বৈরাচারের পক্ষে।
বিএনপির এই নেতা বেলন, এম জে আকবর কি করে সবকিছু জেনেশুনেও একনায়কতন্ত্রের পক্ষে, ১৮ কোটি বাংলাদেশীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বললেন? জনসমর্থনহীন শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকা আপনাদের কি স্বার্থ নিশ্চিত করে? এটা এদেশের জনগণ জানতে চায়। আপনাদের সমর্থনে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা এদেশে নিষ্ঠুর বর্বরতা চালাচ্ছেন বলে এদেশের জনগণ বিশ্বাস করে। ‘ভারত কি তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকেই বন্ধুত্বের বন্ধনে আঁকড়ে রাখতে চায়? এম জে আকবর বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণকে অবজ্ঞা করার শামিল, এম জে আকবরের মন্তব্য কর্তৃত্বসূলভ ও বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে অসম্মান করা, বাংলাদেশ কোন স্যাটেলাইট স্টেট নয়। বাংলাদেশের জনগণ কোন দেশের প্রোটেক্টটরেট নয়।
তিনি বলেন, আমরাতো ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাই না। বাংলাদেশী নাগরিকরা অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের সমমর্যাদার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়াতে বিশ্বাস করে। আপনি একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক ও বিদ্বৎজন। জনগণ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের ভোট চুরির দোসর হবে না ভারত। প্রতিবেশী হিসাবে এদেশের ১৮ কোটি জনগণের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পক্ষে দাঁড়াবেন, এটাই এদেশের মানুষ কামনা করে।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে