গত সাড়ে তিন মাসে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের ১২শ’ ৪৯ নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় তাদের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

গতকাল সুপ্রিম কোর্ট বারের দক্ষিণ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। আওয়ামী লীগ নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তার এ বক্তব্য আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজ্ঞাবহ করার এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।

আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যে প্রতিভাত হয়েছে যে, জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে আপোষহীন আন্দোলন বিএনপি চালিয়ে যাচ্ছে, সেই আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য বর্তমান অনির্বাচিত সরকার ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির ২১ হাজার ৮৩৫ জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে কারাগারে অন্তরীণ করেছে। গত ১৪ সপ্তাহে ৭৯টি মামলায় বিএনপি’র ১ হাজার ২৪৯ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। লিখিত বক্তব্যে বিএনপি’র এই নেতা আরো বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের একটি বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিকে ভোটে আনতে সব চেষ্টাই করেছে আওয়ামী লীগ। এমনকি এক রাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাবেও বিএনপি রাজি হয়নি’। তিনি আরও বলেন, ‘বারবার নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে- বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেয়া নয়, বলা হয়েছে, সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার না করলে বাংলাদেশে আজ হরতালের দিন গাড়ি চলতো না। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো গত্যন্তর ছিলো না, বিকল্পও ছিলো না। যেটা করেছি আমরা চিন্তা-ভাবনা করেই করেছি। তাদের জেলে না রাখলে দেশ অচল হয়ে যেতো।’

কায়সার কামাল বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতার এই বক্তব্যই প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে বর্তমান অনির্বাচিত সরকার কীভাবে করায়ত্ত করেছে।

তিনি বলেন, আপনারা (সংবাদকর্মী) অবগত আছেন যে, গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যা আসলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু মহাসমাবেশ চলাকালে সরকারি দল, তাদের পেটোয়া বাহিনী এবং দলদাসে পরিণত হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বিনা উসকানিতে মুহুর্মুহু বিকট শব্দের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং গুলিবর্ষণের মাধ্যমে বিএনপির জনসভা শুধু পণ্ডই করেনি, যুবদল নেতা, একজন সাংবাদিক এবং একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। অগণিত নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে আহত করা, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং নির্যাতন করার এক প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। আওয়ামী লীগ নেতার এই বক্তব্য বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অস্তিত্বকেই শুধু অস্বীকারই করেনি, জাতিকে বার্তা দিয়েছে যে, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন- সবকিছুই ফ্যাসিস্ট সরকারের ইচ্ছার কাছে মাথা নত করেছে। দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান ব্যক্তি শেখ হাসিনার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার ওপরেই সবকিছু নির্ভর করে।

বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক বলেন, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ছাড়া, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি গ্রহণ করেছে, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য বিএনপি অন্যান্য গণতান্ত্রিক সমমনা, রাজনৈতিক দল, জোট সর্বপরি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল, সংগঠনের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ইউএলএফে সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব, মো: আক্তারুজ্জামান, মো: কামাল হোসেন, মো: মাহবুবুর রহমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।