কার বক্তব্য সঠিক?
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দু’দিন থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য টক অব দ্য কান্ট্রি। সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তার বক্তব্য। তার বক্তব্য ‘এক রাতেই সব নেতার কারামুক্তির প্রস্তাবেও রাজি হয়নি বিএনপি। সহিংসতা এড়াতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবেই জেলে পুরে রাখা হয়েছে। আমরা চিন্তা-ভাবনা করেই এটা করেছি। তাদের জেলে না রাখলে দেশ অচল হয়ে যেত’Ñ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে চলছে বিতর্ক এবং পর্যালোচনা। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। কৃষিমন্ত্রীর ‘হাটে হাড়ি ভাঙা’ বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমের পাঠকরাও নানান মন্তব্য করছেন। সবার বক্তব্য বর্তমান নির্বাচন ও রাজনীতির প্রকৃত চিত্র কৃষিমন্ত্রী তুলে ধরেছেন। গতকালও সচিবালয়ে নিজ দফতরে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আমি যা বলেছি, কোনো ভুল বলিনি। বক্তব্য একদম ঠিক আছে। অনেক কথার মধ্যে বিষয়টি এসেছে।’ অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিকে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমাদের সরকার দেয়নি। দলীয়ভাবেও এ ধরনের প্রস্তাব দেইনি। আর বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মী জেলে আছে এটাও তো আমরা বিশ্বাস করি না। প্রশ্ন হচ্ছে কার কথা সঠিক? ওবায়দুল কাদের সঠিক বক্তব্য দিচ্ছেন নাকি ড. আবদুর রাজ্জাক সত্য কথা বলেছেন?
চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর-এ দেয়া সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, বারবার নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেয়া নয়, বলা হয়েছে, সবাইকে জেল থেকে (কারাগার থেকে মুক্তি) ছেড়ে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার না করলে বাংলাদেশে আজকে হরতালের দিন গাড়ি চলতো না। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না। বিকল্পও ছিল না। সহিংসতা এড়াতেই বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবেই জেলে পুরে রাখা হয়েছে। যেটা করেছি আমরা চিন্তা-ভাবনা করেই করেছি। তাদের জেলে না রাখলে দেশ অচল হয়ে যেত।
অন্যদিকে গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ এ ধরনের প্রস্তাব বিএনপিকে দেয়নি।
ওবায়দুল কাদেরের কাছে একজন সাংবাদিক জানতে চান, একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আসার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। যদি তারা আসত, তাহলে রাতারাতি ২০ হাজার নেতাকর্মীকে ছেড়ে দেয়া হতো। এই ব্যাপারটা বিচারের জায়গা থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয় কি না? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কৃষিমন্ত্রীর নামে খবরটি ইন্টারভিউতে প্রকাশ করেছে। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত মতামত। আওয়ামী লীগ কোনো দেউলিয়া দল নয়। আওয়ামী লীগ দলীয় নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে; গণতন্ত্রের প্রতি আওয়ামী লীগের যে কমিটমেন্ট, সেটা বিনষ্ট করে এ ধরনের উদ্ভট প্রস্তাব বিএনপি বা আর কাউকে দেবে, এটা কখনো সঠিক হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, বিএনপিকে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমাদের সরকার দেয়নি। দলীয়ভাবেও এ ধরনের প্রস্তাব দেইনি।
সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের আমরা নির্বাচনে আনতে চাই। কিন্তু সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই আমাদের। আমার বক্তব্যের মূল কথা ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় চেয়েছেন এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক। সেটা বলতে গিয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের কথা বলেছি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে আসেনি।
আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ চেয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, এই কথাটি বলতে গিয়ে আমি সেদিন কিছু কথাবার্তা বলেছি। আমি সেদিন এটিও বলেছি, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তারেক রহমানের নামে মামলা রয়েছে, তার সাজা হয়েছে। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তার মা অসুস্থ, তারও সাজা হয়েছে। কাজেই আমার ধারণা, বিএনপি নির্বাচনে আসতে চায় না, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। আওয়ামী লীগের বক্তব্য হলো, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনোভাবেই নির্বাচন করা সম্ভব না। পৃথিবীর কোনো দেশেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামের ব্যবস্থা নেই। কাজেই আওয়ামী লীগের সামনে কোনো বিকল্প নেই। এই কথাটিই বলেছি। এই পদ্ধতির মধ্যে থেকে বিএনপি বলতে পারত, নির্বাচনটাকে কীভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করা যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে ওবায়দুল কাদের ও ড. আবদুর রাজ্জাক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে অন্যতম। তারা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনরা বলছেন, ড. রাজ্জাক আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনের মুখোশ খুলে দিয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে নেটিজেনরা এমন সব মন্তব্য করছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন যা গণমাধ্যমে মুদ্রিত আকারে প্রকাশ করা যায় না। তবে বেশির ভাগ নেটিজেনের বক্তব্য ছিল, ড. আবদুর রাজ্জাক ফ্রুটিকা খেয়ে’ সত্য কথা বলেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য কার কথা সঠিক ওবায়দুল কাদেরের নাকি ড. রাজ্জাকের?
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে