খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তোলপাড়! একই ধারার পরিচালক বেতন ভাতাদি ঠিকই পাচ্ছেন

৩৮ বছর আগের পদোন্নতি বাতিল ইফায়

Daily Inqilab শামসুল ইসলাম

২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

সরকারি চাকরিতে ৩৮ বছর আগে দেয়া পদোন্নতি বাতিল করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশাসন বিভাগ। এরই মাঝে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবসরে চলে গিয়েছেন এবং অবসরে যাওয়ার ৬ বছর পর তিনি পদোন্নতি বাতিলের আদেশ পান। বিষয়টি নিয়ে খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সচিব মো. আশরাফুল মমিন খানের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মচারী মো. শামছুল হক ১৯৮৫ সালের ৩০ নভেম্বর স্মারক নং-৮০৭/ইফা:প্রশা:/১-৮১/৬২৩৯ মারফত জারিকৃত অফিস আদেশে তাকে এমএলএসএস পদ থেকে সিলেকশন কমিটির অনুমোদনের শর্তে এলডিএ-কাম-টাইপিস্ট পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। উক্ত অনুমোদনের শর্ত পূরণ না করায় উপরোক্ত অফিস আদেশটি বাতিল করা হলো। নজিরবিহীন এ পদোন্নতি বাতিলের ঘটনার সংশ্লিষ্ট নথিতে অনুমোদন দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. বশিরুল আলম।
এ পদোন্নতি বাতিলের প্রেক্ষিতে এতদিন বেতন হিসেবে নেয়া পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদের সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে হবে। সে সাথে পেনশনের টাকা ও প্রায় অর্ধেক কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ এরূপ পত্র ইস্যুতে হতভম্ব হয়ে পড়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরূপ ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। এমনকি পাক-ভারত উপমহাদেশের কোথাও এ ধরনের ঘটনা বিরল। চাকরিজীবীদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়া হয়। কিন্ত ৩৮ বছর আগের পদোন্নতি বাতিলের ঘটনা এটাই প্রথম। তাও আবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবসরে চলে যাওয়ার ৬ বছর পর। সাধারণত কোনো লোক অবসরে চলে গেলে তিনি অফিস শৃঙ্খলা ও বিধির বাইরে চলে যান। তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটলে ও অফিস তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তার পক্ষ নিয়ে অডিট মোকাবিলা করেছে এবং তিনি ঠিকমতো বেতন ভাতাদি পাচ্ছেন। অথচ অবসরে যাওয়া বৃদ্ধ গরীব কর্মচারীর ক্ষেত্রে সার্ভিস রুল এবং প্রচলিত প্রথাবিরোধী অমানবিক ব্যবস্থা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। শামছুল হক ১৯৮২ সালের ১ জুলাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনে সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে রাজস্ব খাতে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালের ৩০ জুলাই তাকে এম এ এ এস পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি অবসরে যান এবং এ সময় অফিস থেকে তার অবসরোত্তর ছুটি মঞ্জুর করা হয়। তার অবসরোত্তর ছুটি মঞ্জুরির পত্রে তার অবসরকালীন পদ এলডিএ-কাম-টাইপিস্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সে হিসবে তার বেতন ও নির্ধারণ করা হয়। এর ৬ বছর পর তার পদোন্নতি বাতিলের আদেশ ইস্যু করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে বিব্রত খোদ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. বশিরুল আলমের একক সিদ্ধান্তে এ কাজ করেছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দীর্ঘদিন প্রশাসন বিভাগে কাজ করা সাবেক উপসচিব ও সাবেক পরিচালক মুহাম্মদ এবাদুল্লাহ বলেন, সিলেকশন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে পদোন্নতি দেয়া হলে এবং পরে তা অসাবধানত অনুমোদন না নিলে কি হবে এ বিষয়ে ইতঃপূর্বে একটি সিদ্ধান্ত দেয়া আছে। তিনি বলেন, সাবেক উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসনের ক্ষেত্রে এরূপ ঘটনায় ইফার সাবেক সচিব আব্দুল মোনাফ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে একটি কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল বিষয়টি ‘ফ্যাকটাম ভ্যালেট’ অর্থাৎ ‘ অনুচিত কিংবা উচিত যা কিছুই ঘটে থাকুক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান বৈধ’। কারণ হিসেবে বলা হয় ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়ী নয়। উক্ত সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে মহাপরিচালকের সাবেক একান্ত সচিব মো. হানিফসহ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়গুলো সমাধান করা হয়েছিল। এ ধারা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ছিল। তা ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরি বিধিমালা-১৯৯৮-এর বিশেষ বিধান ও হেফাজত ধারা শিরোনামের ৫৭(ক) ধারা মোতাবেক সার্ভিস রুল পাস হওয়ার আগের সমস্ত কর্মচারী নিযুক্ত বলে গণ্য হবে। তাই একটি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে হঠাৎ ৩৮ বছর পর করো পদোন্নতি বাতিল করা সঠিক হয়নি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন অবসরপ্রাপ্ত কর্মজীবী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সমন্বয়ক এবং কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এম এ বারী বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদন (বিশেষ নিরীক্ষা)-এর ৫৮ অনুচ্ছেদে বলা হয় ‘এ কে এম ফজলুর রহমান সিলেকশান কমিটি সুপারিশ ছাড়াই চাকরি করছেন’। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তার অডিট আপত্তির জবাবে অফিস তার পক্ষ নিয়ে লিখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরি বিধিমালা-১৯৯৮-এর বিশেষ বিধান ও হেফাজত ধারা শিরোনামের ৫৭(ক) ধারা মোতাবেক সার্ভিস রুলের আগের অর্থাৎ ১৯৯৮ সালের আগের সমস্ত কর্মচারী নিযুক্ত বলে গণ্য হবে।
উক্ত জবাবের প্রেক্ষিতে তার অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হয় এবং তিনি বেতন ভাতা পাচ্ছেন। দু’টো ঘটনা একই রকম ঘটনা হলেও শামছুল হকের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত উল্টো কেন হলো তা বোধগম্য নয়। এখানেও তো ইসলামিক ফাউন্ডেশন (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরি বিধিমালা-১৯৯৮-এর বিশেষ বিধান ও হেফাজত ধারা শিরোনামের ৫৭(ক) ধারা প্রযোজ্য হবে। তিনি অভিযোগ করেন যে ২০২০ সালের আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে উপ-সচিব পদটিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব লোক দেয়া হতো। এখন সেটিও বাহির থেকে আসে। তারা এ প্রতিষ্ঠানের ধরণ ও ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ফলে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দিচ্ছে প্রশাসন বিভাগ। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-সচিব এবং মহাপরিচালক পদে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব লোক দেয়া প্রয়োজন। নইলে এ ধরনের বিধিবর্হিভূত ঘটনা বারবার ঘটতেই থাকবে। শামছুল হকের বিষয়টি সিলেকশন কমিটিতে উত্থাপনের দায়িত্ব ছিল প্রশাসনের। কিন্তু তারা তা করেনি। এখন ৩৮ বছর পর তার পদোন্নতি বাতিলের মতো ঘটনা প্রমাণ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মেধা ও মননের দুর্ভিক্ষ চলছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
আরও

আরও পড়ুন

খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট

খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা

মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার

মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে