ইনকিলাবের ধারাবাহিক সংবাদ আমলে নিলেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসন
২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
ইনকিলাবের ধারাবাহিক সংবাদ আমলে নিলেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। আমরা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক এবং এডিএম সাহেবকে ইনকিলাব পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। ইতোমধ্যে আদম পাচার/ মানব পাচারের উপর ২০টি পর্ব ছাপা হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে ব্যাপক সারা জাগিয়েছেন বৃহত্তর অঞ্চলে পাচারকারী চক্র এবং আদমবেপারি বা দালালরা একটু হলেও নড়েচড়ে বসেছেন। এবার আসি আসল কথায়।
লুঙ্গি পড়ে যারা বিদেশ লোক পাঠান তাদেরকে প্রবাসে যাওয়া লোকগুলো এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা স্থায়ীভাবে বলেন, দালাল। আর যারা কোর্টটাই পড়ে এসি গাড়িতে ঘুরে বিদেশে লোক পাঠান তারা হলো, আদম ব্যবসায়ী। আর দালালরা বলেন, আমরা হলাম সাহায্যকারী। দালাল নয়। দালালরা মূলত আদম ব্যবসায়ীদের সাহায্যকারী বন্ধু। এটা বললে, তারা খুব খুশি হয়। এসব কথা ক্ষেত্র বিশেষ ঠিক থাকলেও বিদেশ নেওয়ার পথে ওরাই হয় অপহরণকারী এবং মুক্তিপণ নেওয়ার মুল আদায়কারী। যারা ফরিদপুর সদর, বোয়ালমারী, মধুখালি, সদরপুর, চরভদ্রাসন, শিবচর, টেকের হাট, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, পাংশা, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ ডামুড্যা, নড়িয়া, পালং জেলা উপজেলা থেকে যে সকল যুবকরা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে ফেরত আসছে, অথবা প্রবাসী পুলিশ আটক করে ফেরত পাঠিয়েছে, অথবা প্রবাসে যারা কারাগারে আটক আছে এবং বিদেশ যাওয়ার পথে যারা মাফিয়াদের হাতে অপহরণের শিকার হয়ে মুক্তিপণ দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে দেশে ফিরছেন সবার অভিযোগই এক রকম। কারোর অভিযোগেই কোনো ভিন্ন বিবরণ পাওয়া গেল না।
এই দুই প্রতিবেদক, প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন যাবৎ বৃহত্তর জেলার উল্লেখিত জেলা উপজেলায় সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ জন লোকের সাথে ইনকিলাবের কথা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশে গিয়ে, বহু নির্যাতন এবং অপহরণ হয়ে না খেয়ে জীবনযাপনের কষ্টের গল্প বলেছেন, ফরিদপুর সদর থানার একাধিক যুবক এবং দিনের পর দিন জেল খাটার গল্প, মুক্তিপণ চেয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতনের কথা শুনে এই প্রতিবেদককেও কখনও কখনও আবেগ প্রবণ হতে হয়েছে। দুই প্রতিবেদকে সংবাদ থেকে বিরত থাকতে মোটা অংকের বকশিশের অফার, আবার মামলা করার হুমকি ও দিছেন নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের আদম ব্যবসায়ী মুরাদ বেপারী গং। তারপর সংবাদ পরিবেশন থেকে পিছু হটেননি দুই প্রতিবেদক এবং ইনকিলাব পরিবার।
গত মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের হল রুমে, ‘মানবপাচার প্রতিরোধের’ উপরে একটি মিটিং হয়। ঐ মিটিংয়ে অবৈধপথে ইউরোপ মরণযাত্রার’ প্রকাশিত ইনকিলাবের ধারাবাহিক ১৮-১৯-২০ পর্বের প্রকাশিত সংবাদের কথা ঐ মিটিংয়ের আলোচনায় উঠে আসে।
ফরিদপুর জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল সেখ ইনকিলাবের এ ধরনের মানবিক ধারাবাহিক সংবাদ পরিবেশনের বিষয় তার বক্তব্যে তিনি প্রকাশ করেন। এখানে তার কথার বিশেষজ্ঞতার পরিবেশেনটি ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার এবং ভোক্তাদের অধিকার লঙ্ঘন করে একটি আদম ব্যবসায়ী বা পাচারকারীচক্র সুবিধা নিচ্ছেন এদের বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নেয়া এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে সাংবাদিকদের নিয়ে সভা সেমিনার এবং প্রচার প্রকাশনা জোরদার করা জরুরি বলে উপস্থাপন করা হয়। বিশেষ করে যেসকল সাংবাদিকরা মানবপাচারের সংবাদ নিয়ে সরেজমিনে কাজ করেন এমন সকল সাংবাদিকদের কমিটির সদস্য করা যায় কিনা মিটিং এ প্রস্তাব করেন। ভুক্তভোগী এবং পাচারকারীদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে অগ্রগামী করার আহ্বান জানান তিনি। তাৎক্ষণিক সোহেল সাহেবের বক্তব্য এবং সাজেশন জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তিনি আমলে নেন এবং নোট করেন। ইনকিলাবের সংবাদ পরিবেশনের কথাসহ ধারাবাহিক ২০ পর্ব ছাপা হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা সংবাদগুলো আমলে নিয়ে তিনি জনস্বার্থে, মানবিক কারণে ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তার বক্তব্যে প্রতিফলিত হওয়ায় সংবাদের সার সংক্ষেপ জেলা প্রশাসকের হলরুমে মিটিং চলাকালীন জনাকীর্ণ হাউজে উপস্থাপন করেন। এই আলোচনায় উপস্থিত সকলকে আরো প্রানবন্ত করে তুলেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদার (পিএএ) অত্যান্ত আন্তরিকতার সাথে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালকের বক্তব্য একটু পরে এসেও তিনিও শুনেন। দীর্ঘদিন যাবৎ জনকল্যাণমুখী কাজ, বাজার মনিটরিং এবং সরকারের সুনাম বাড়ে এমন সব ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে তারা সততা, নিষ্ঠা, নির্বীকতা, বিচক্ষনতায় জেলার আইডল হয়ে উঠছেন সরকারি এই কর্মকর্তা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় সউদী আরবে ১৪ দিন জেল খেটে ফেরত আসছেন মো. নাঈম সেখের সাথে। নাঈম ইনকিলাবের সাথে কথা বলে জানালেন, তিনি ফরিদপুর শরীতুল্লাহ বাজারের একটি ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা লোন নেয়। মাসিক এক হাজার টাকা সুদসহ ব্যাংকে তার গুনতে হবে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় একটি এনজিও থেকে লোন নেয় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন নাঈমের পরিবার পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়ছে।
নাঈম আরো বলেন, বড় আশা করে আলীয়াবাদ ইউনিয়নের মো. দেলো ভাইর স্ত্রী জাহানারা খালার মাধ্যমে সউদী আরব যাই, মাসিক ৬০ হাজার টাকা বেতনের চুক্তিতে প্রথমে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেই। সউদী আরব পৌঁছে বাদবাকি টাকা দেয়া লাগবে। মোট ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুক্তি হয়। সউদী যাওয়ার পর কোনো কাজ দেয়নি। চাকরি তো পরের কথা। জাহানারা খালার তিন ছেলে বিদেশে থাকে। দুই জন বিদেশে আছে। একজন ছুটিতে বাড়ি আইছে। এরাই আমাকে ভালবাসা দিয়ে তদবির করে বিদেশ নেয়। বর্তমানে আমার অবস্থান এবং জেল খেটে ফেরত আসার খবর তাকে বললে আমার কথা শোনারই তার সময় নাই।
গত ২৭-৭-২০২৩ ইং তারিখ আমি খালার মাধ্যমে সউদী আরব যাই। ওখানে যাওয়ার পর পুলিশ বলে এটা টুরিস্ট ভিসা। মেয়াদ মাত্র তিন মাস। সউদীতে যাওয়ার পর ওখানে বসা ছিলাম। আমার বাড়ি থেকে আমি যখন টাকা ফেরত চাই। তখন আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে বাহিরে বের করে নিয়ে। তখন সউদীর পুলিশ আমাকে জেলে আটকে দেয়। ১৪ দিন জেল খেটে দেশে ফেরত আসি। আগামীকাল ২২ পর্বে জানুন নাঈমের আরেক বন্ধু সেও জেল খেটে দেশে ফিরছেন কেন এবং কিভাবে সউদীতে চলে জেল-জরিমানা। (চলবে)
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে