কারাগারেও মাদক সিন্ডিকেট
২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
মাদকের ব্যবসা কিংবা ব্যবহারের দায়ে যাকে নেয়া হচ্ছে কারাগারে সেই অপরাধীও সেখানে দেদারছে মাদক সেবনের সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু কোথায় পাচ্ছে মাদক? ‘নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা’র ফাঁক গলে কারাগারে কি করে পৌঁছাচ্ছে তা? খোঁদ কারারক্ষী ও এক শ্রেণির দুনীতিবাজ কর্মকর্তা কারাগারের ভেতরে মাদক পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গত সোমবার কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রধান কারারক্ষী সাইফুল ইসলামকে ৩০০ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগারে প্রবেশের সময় তল্লাশি করে তার কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
কারাগার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও কারা অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক মাসে যেসব কারাগার থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মহ্মহ্মহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা কারাগার অন্যতম। একইভাবে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি কাশিমপুরের চারটি কারাগারের মধ্যে দু’টি কারাগার থেকে বেশি মাদক মিলেছে। আর এই মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় কারারক্ষীদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পেয়েছে কারা অধিদফতর। এরপরের অবস্থানে রয়েছে যশোর ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারসহ আরো বেশ কয়েকটি কারাগার।
কারাসূত্রে জানা গেছে, দেশের কারাবন্দীদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগই মাদকের মামলার আসামি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই হাজতি। এদের কেউ মাদকাসক্ত, কেউ বিক্রেতা আবার কেউ ক্রেতা। এরা ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক মামলার আসামি। কারাগারে তাদের কাছে মাদক পৌঁছে মূলত কারারক্ষী ও কারা পুলিশের মাধ্যমে।
নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে এসেছে এক মাদক কারবারী। তার সাথে কথা বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বাসা থেকে খাবার পাঠাতেন পিসির (জেলে টাকা পাঠানোর মাধ্যম) মাধ্যমে। ওইসব খাবার যেমন আপেল, কলা, গুড়, চিরা-মুড়ি, কমলার ভেতরে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিত। যিনি দায়িত্বে থাকতেন তিনি টের পেতেন না। আর যদি কখনো টের পেতেন, টাকা দিলে আর মুখ খুলতেন না। শুধু বলতেন, তোমাকে পরিবার যে খাবার দিয়েছে তা অন্য কাউকে দিও না। অন্যরা জানলে সবার বিপদ হবে। কেননা কারাগারে মাদক নিষিদ্ধ।
চট্টগ্রামের কারাগারে ছিলেন মানিক মিয়া। বর্তমানে তিনি ঢাকার সবুজবাগ এলাকায় রিকশা চালান। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, তার পাশে একজন ইয়াবা আসক্ত ছিল। তার সিগারেটের প্যাকেট যখন প্রবেশ করত, সেই প্যাকেটের দুই চারটি সিগারেটের তামাক বের করে ফেলে সেখানে ইয়াবা দিয়ে ভেতরে পাঠিয়ে দিত। রাতের বেলায় কয়েকজন মিলে সেই ইয়াবা সেবন করত। পরদিন সারাদিন ঘুমাত। কারাগারে এমনও আসামি আছে, যাদের নামে আসা মালপত্র কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা ভোগ করে কিছু অসাধু কারারক্ষী।
সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীরা সবসময় মরিয়া হয়ে থাকেন কিভাবে কারাগারের ভেতরে কারাবন্দি মাদকসেবীদের সরবরাহ করতে পারবে। নানা কায়দায় মাদকদ্রব্য কারাগারে পৌঁছে যায়। তার মধ্যে লুঙ্গি, শার্টের কলারে, জুতার ভেতরে, খাবারের সাথে এমন কি গলায় ঝুলানো তাবিজেও মাদক সরবরাহ করা হয়। কতিপয় দুনীতিবাজ কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের মধ্যে ১’শর ওপরে কারাগারের ভেতরে মাদক সরবরাহের সাথে জড়িত। এদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে মাদক ভেতরে সরবরাহ করে কারারক্ষীদের অনেকেই।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রধান কারারক্ষী সাইফুল ইসলামকে ৩০০ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করার বিষয়ে কারাগার সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, তল্লাশি ছাড়া কাউকে কারাগারের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না। সাইফুল ইসলাম কারারক্ষীদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি। তাকে তল্লাশি করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগারে মাদকের বিস্তার ও সরবরাহ প্রসঙ্গে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও কারাগারের ভেতরে মাদক ঢুকছে। মাদক সরবরাহ বন্ধে প্রবেশ পথে লাগেজ ও বডি স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এর পরেও মাদক সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে না। বন্দিরা কারাগারে মাদক পাচ্ছে। লুঙ্গি ও শার্টের সেলাইয়ের ভাঁজের ভেতরে, শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ, টুথপেস্ট, আপেল ও সিগারেটের প্যাকেটের ভেতরে যাচ্ছে ইয়াবা। এছাড়া খাবারের ভেতরেও গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদক কারাগারে যাচ্ছে। আর এসব কাজে কারারক্ষীদের একটা অংশ সহায়তা করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, কারারক্ষীদের অনেকে মাদক ভেতরে প্রবেশে সহায়তা করে থাকেন। তাদের চিহ্নিত করে গত এক বছরে ২৫ জনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাকিদের বিচার চলছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে