অস্তিত্ববিহীন ২৬টি স্কুলের অনুমোদন
২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
তফসিল ঘোষণার পর থেকে সরকার এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে রুটিন দায়িত্ব পালন করছে বলা হলেও তা বাস্তবেই মানছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার রেশ কাটতে না কাটতে এবার কোটি টাকার বিনিময়ে অস্তিত্ববিহীন স্কুলের অনুমোদন দিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও প্রাথমিক শিক্ষা সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তোভোগিরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে ট্রাস্টে প্রাথমিক অন্তর্ভুক্ত শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অনুমোদন স্থগিত করে ট্রাস্টে আবেদনকৃত সকল শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা দিয়ে পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়েছে অভিযোগকারীরা।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.ফরিদ আহম্মদের ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বগুড়া সদরের জাহানারা বেগম শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. জাহিদুল রহমান জাহিদ এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চর হরিপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. খেলাফত হোসেন স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সরকার এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে রুটিন দায়িত্ব পালন করছে। এ সময়ে প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এসব বিদ্যালয়কে অনুমোদন দেয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত ৫ ডিসেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিশু কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের ৭৯তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ২৬টি বিদ্যালয় শিশু কল্যাণ ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অসত্য, ভূয়া তথ্য দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের কাছে অভিযোগ করে চিঠিও দিয়েছেন অনেকে
গত ১৩ ডিসেম্বর গাইবান্ধার ফুলছড়ির পথের আলো শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো, শাহাদাৎ হোসেন মন্ডল সচিবের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন,এতে বলা হয়, অস্তিত্ববিহীন স্কুল অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি ব্রহ্মপুত্র নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত। ২০১৫ সাল থেকে বিদ্যালয়টি স্থানীয় সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টি ২/৩ কিঃমিঃ এর মধ্যে কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বিদ্যালয় ক্যাচমেন্ট এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৫৭৫ জন লোকের বসবাস। জরিপকৃত শিশু সংখ্যা ৬৮০ জন। বিদ্যালয়টিতে প্রাক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২৫০ জন শিশু ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করছে। বিদ্যালয়টি জেলে, মাঝি, দিনমজুর, নাপিত সহ নিম্ন শ্রেণির পরিবারের সন্তানরাই লেখাপড়া করছে। এখানে বেশ কিছু ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীও রয়েছে। গত ১১ নভেম্বর শিশু কল্যাণ ট্রাস্টে প্রাথমিক আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ নভেম্বর ফুলছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়টি তদন্ত করেন। পরবর্তীতে ২৩ নভেম্বর গাইবান্ধার সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়টি পরিদর্শণ করে প্রতিবেদন শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট ঢাকায় পাঠান। উভয় পরিদর্শনে তাঁরা বিদ্যালয়টি দূর্গম চর অঞ্চল হওয়ায় এবং ট্রাস্টের শর্তাবলী পূরণ করায় পথের আলো শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ট্রাস্টির অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।
প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে বলা হয়, গত ৫ ডিসেম্বর ট্রাস্টি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে ২৬টি বিদ্যালয়কে শিশু কল্যাণ ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন। তালিকায় কুড়িগ্রাম থেকে ৮টি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা সহ ৬টি জেলার ২৬টি স্কুলকে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন। কুড়িগ্রামের রৌমারি, রাজিবপুর, ফুলবাড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকার পরও ৮টি বিদ্যালয়কে নতুন করে শিশু কল্যাণ ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যে স্কুলগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। এর প্রত্যেকটির পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা নগন্য। তাই এই বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী পাবে বলে আশা করা যায় না। তাছাড়া শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের শর্তের সাথে পুরোপুরি বিপরীত। এই বিদ্যালয়গুলোর সাথে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করার স্বার্থেই বিদ্যালয়গুলোর স্থাপন দেখানো হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলায় যে বিদ্যালয়টি ট্রাস্ট অন্তর্ভুক্ত করেছে সেখানে একই চিত্র। বিদ্যালয়টির নিজস্ব জমি, ঘর কিছুই নেই। এর ১০০ ফিট দুরেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত যা ফুলছড়ি উপজেলা পরিদর্শনে উল্লেখ করেছেন। এর আশে পাশে অর্থ্যৎ ৪-৫ কিঃ মিঃ এর মধ্যে কোন আশ্রয়ণ কেন্দ্র নেই। আশ্রয়ণ কেন্দ্র না থাকা সত্বেও শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে তদন্ত প্রতিবেদন নিজের ইচ্ছেমত করিয়ে নিয়েছেন। ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নেই প্রায় ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা স্কুল প্রতি ৫০-১০০ জনের মধ্যে। তবুও গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নে অস্তিত্বহীন পূর্ব বাজে ফুলছড়ি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে ট্রাস্টের অন্তর্ভুক্তি করার প্রস্তাব পাশ করেছে। যেটা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অন্তরায় ছাড়া কিছুই নয়। পুরো বিষয়টি প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের একটি সিন্ডিকেট চক্র জড়িত। এরা সকলেই প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছের লোক বলেও জানা যায়। তারা প্রতিটি বিদ্যালয়কে ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্কুলগুলোকে ট্রাস্টের অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। অথচ উপজেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের সুপারিশ ও ট্রাস্টির সকল শর্ত পুরণ থাকা সত্ত্বেও পথের আলো শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিদ্যালয়কে ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির জন্য গ্রহণ করা হয়নি। আগামী ২১ ডিসেম্বর প্রাথমিক অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।
##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে