চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর

আমদানি কমেছে ২০.৬৪ শতাংশ

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

দেশে গত প্রায় দুই বছর ধরে ডলারের সঙ্কট চলছে। বর্তমানে সে সঙ্কট চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। ডলার সঙ্কটে বার বার টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। পরিস্থিতি বাগে আনতে সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণে গত দু’বছরে নানা পদক্ষেপ নেয়। তাতে বিলাস পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কিছুটা কমেছে বটে। তবে ডলার সঙ্কট কমেনি, বরং বেড়েছে। এর প্রভাবে দেশে খাদ্য, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঘন ঘন বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ছোট ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমনকি কোনো উৎস থেকে ডলার আশা করার সুযোগও নেই। বিদেশি ঋণের ছাড়, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই, রফতানি কিংবা প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কোনো উৎস থেকেই নেই সুখবর। ডলারের সব উৎসে চলছে ভাটার টান। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হচ্ছে আগের চেয়ে ঢের। এ ঋণে সুদের হারও এখন বেশি। একে তো ডলার আসছে কম, আবার পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। গত অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। যার প্রভাব দেখা যায় অক্টোবরে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমদানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছর অক্টোবরে তা ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। এরপর থেকে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর অক্টোরব পর্যন্ত টানা ১৩ মাস ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি চলছে আমদানিতে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর চার মাসে মোট আমদানি হয়েছে ২১ দশমিক ৮৭২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চার মাসে আমদানি কমেছে পাঁচ দশমিক ৬৮৭৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া আমদানির পাশাপাশি চলতি অর্থবছর পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এলসি খোলা কমেছে ১৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর এ সময়ে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর চার মাসে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে চাল আমদানি কমেছে ৯৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। মূলত ধান উৎপাদনে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় চাল আমদানি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। সামান্য কিছু সুগন্ধি চাল আমদানি হয়েছে চার মাসে। তবে এ সময়ে গম আমদানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। সার্বিকভাবে চার মাসে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৯৫৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছর একই সময়ে ছিল শূন্য দশমিক ৫৭৬৭ বিলিয়ন ডলার।

খাদ্যশস্যের পাশাপাশি অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানিও কমেছে চলতি অর্থবছরের চার মাসে। যদিও এ সময় চিনি আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছর জুলাই-অক্টোবর সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল এক দশমিক ৮৬২১ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৪৮৮৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানি কমেছে ৪৪ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে চিনি আমদানি বেড়েছে ১৭৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর আমদানি বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। চার মাসে এটি আমদানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৪০৩৪ বিলিয়ন ডলার, গত অর্থবছর যা ছিল শূন্য দশমিক ২৯২৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। তবে তুলা আমদানি কমেছে ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, সুতা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং অন্যান্য মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এর বাইরে চলতি অর্থবছর মূলধনী পণ্য আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত অর্থবছর চার মাসে এ ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছিল চার দশমিক ৭৯৯৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক ৭৫৫৪ বিলিয়ন ডলার। মূলধনী পণ্যের মধ্যে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং অন্যান্য মূলধনী পণ্য আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। উল্লিখিত খাতগুলোর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানি কমেছে আট দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরও এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছর জুলাই-নভেম্বর সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ২৭ দশমিক ৫৩২২ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩২ দশমিক ০৩৫৫ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছর পাঁচ মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫৮৫ বিলিয়ন ডলার; গত অর্থবছর যার পরিমাণ ছিল ৩৮ দশমিক ৪৬৭৪ বিলিয়ন ডলার।

যদিও মন্দার মধ্যেও পেঁয়াজ, মসলা, বি.পি. শিট ও চিনি আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। পেঁয়াজের এলসি খোলা বেড়েছে ১১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ১০৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মসলার এলসি খোলা বেড়েছে ৯২ দশমিক ৮২ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৮৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বি.পি শিটের এলসি খোলা বেড়েছে ৪৮ দশমিক ২৯ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ। চিনি আমদানিতে এলসি খোলা বেড়েছে ২৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য আয়রন ও স্টিল পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে ৭০ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ।
এর বাইরে টিন প্লেট, পেপার ও পেপার বোর্ড, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ওষুধশিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে। তবে এগুলোয় প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক কম। আর গার্মেন্টস খাতের যন্ত্রপাতি এবং কৃত্রিম ফাইবার ও তুলা আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি নামমাত্র বেড়েছে। এছাড়া আয়রন ও স্টিল স্ক্রেপ, বীজ, মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার আমদানিতে এলসি খোলা বেড়েছে; তবে কমেছে এলসি নিষ্পত্তি। আর কয়লা, স্ক্র্যাপ জাহাজ ও ওষুধশিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। তবে কমেছে এলসি খোলা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে- ঢাকা জেলা প্রশাসক
শুল্ক বৃদ্ধিতে জনগণের ওপর চরম চাপ বাড়বে: মির্জা ফখরুল
জাতীয় কবির নাতি দগ্ধ, আইসিইউতে ভর্তি
দুষ্ট লোকেরা বলে, আ’লীগকে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে দেখতে চায় বিএনপি: শহীদুজ্জামান
এবার বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার
আরও

আরও পড়ুন

গুপ্ত হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার ছিলো শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়: রিজভী

গুপ্ত হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার ছিলো শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়: রিজভী

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে- ঢাকা জেলা প্রশাসক

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে- ঢাকা জেলা প্রশাসক

শুল্ক বৃদ্ধিতে জনগণের ওপর চরম চাপ বাড়বে: মির্জা ফখরুল

শুল্ক বৃদ্ধিতে জনগণের ওপর চরম চাপ বাড়বে: মির্জা ফখরুল

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরোয়

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরোয়

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

জাতীয় কবির নাতি দগ্ধ, আইসিইউতে ভর্তি

জাতীয় কবির নাতি দগ্ধ, আইসিইউতে ভর্তি

উখিয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ জনকে ১০ দিনের সাজা, ট্রাক ও এক্সেভেটর মেশিন জব্দ

উখিয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ জনকে ১০ দিনের সাজা, ট্রাক ও এক্সেভেটর মেশিন জব্দ

নগরকান্দায় ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিক নারীসহ আহত অর্ধশত

নগরকান্দায় ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিক নারীসহ আহত অর্ধশত

দুষ্ট লোকেরা বলে, আ’লীগকে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে দেখতে চায় বিএনপি: শহীদুজ্জামান

দুষ্ট লোকেরা বলে, আ’লীগকে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে দেখতে চায় বিএনপি: শহীদুজ্জামান

কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত

কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত

রুপির দাম তলানিতে, নিয়ন্ত্রণে যে সিদ্ধান্ত নিলো ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রুপির দাম তলানিতে, নিয়ন্ত্রণে যে সিদ্ধান্ত নিলো ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অবিবেচকভাবে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে: ড. দেবপ্রিয়

অবিবেচকভাবে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে: ড. দেবপ্রিয়

‘উন্নয়নের অংশীদার, প্রবাসীরাও দাবিদার’ শ্লোগানে রিয়াদে প্রবাস মেলা’র ১১ বর্ষে পদার্পণ ‍উদযাপন

‘উন্নয়নের অংশীদার, প্রবাসীরাও দাবিদার’ শ্লোগানে রিয়াদে প্রবাস মেলা’র ১১ বর্ষে পদার্পণ ‍উদযাপন

এবার বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

এবার বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

হিলিতে ব্যাডমিন্টন ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে

হিলিতে ব্যাডমিন্টন ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএফডির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান না

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএফডির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান না

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি: দোয়া চাইলেন তারেক রহমান

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি: দোয়া চাইলেন তারেক রহমান

মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ

মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ

আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ

আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ

আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে

আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে