মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চল ধানে ধানে ভরে উঠেছে মাঠ। একই সাথে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে এখন সোনালি স্বপ্নের ছড়াছড়ি। নতুন ধানের উপস্থিতিতেই কৃষক পরিবারে লেগেছে আনন্দের ঢেউ। বাতাসে ভেসে আসছে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ।
সমতল ভূমির মাঠে মাঠে কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই মৃদু বাতাসে দুলছে সোনালী ধান। পাকা ধানের সুমিষ্ট ঘ্রাণে মুখরিত হয় ওঠে কৃষকের মাঠ। সোনালী ধান বার্তা দেয় আবহমান বাংলার নবান্ন দোড়গোড়ায়। তখন থেকেই কৃষকরা মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন চিরায়ত হেমন্ত উৎসবে। অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ থেকেই জেলার কিছু কিছু এলাকায় শুরু হয় ধান কাটা। তখন থেকেই মাঠে মাঠে চলছে উৎসবের আমেজ।
চলতি বছরে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌলভীবাজারে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া অধিক ফলনের আনন্দের আভা কৃষকদের চোখে-মুখে। মাঠে কেউ ধান কাটছেন, কেউ আটি বাধছেন, কেউ কাধে করে বা যাদের বাড়ি ফসলের মাঠ থেকে দূরে তারা বিভিন্ন যানবাহনে ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে, কেউ ধান মাড়াই করছেন, আবার কৃষাণীরা মাড়াইকৃত ধান সেদ্ধ করে সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারো যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই। এ যেন অপরূপ বাংলার এক অসাধারণ দৃশ্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানা যায়, চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চল ও সমতল ভূমিতে হাইব্রিড বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করা হয়। কিছু কিছু স্থানে বিরুইন, বালাম, কালিজিরা ও চিনিগুড়া জাতের ধানও করা হয়। চলতি বছরে মৌলভীবাজার জেলায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৬৫ হেক্টর। তবে অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ১৮০ হেক্টর। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ২.৭৯ মেট্রিক টন চাল। সাম্ভাব্য ফলন প্রত্যাশা ৩ লাখ ১ হাজার ৯১৮ মেট্রিক টন। প্রত্যাশার চেয়ে অধিক জমিতে ধান চাষ এবং বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের হিল্লোল। অসময়ে বৃষ্টিপাতে দেশের সর্বত্র শীতকালীন সবজি ও আমন ধানের ক্ষতি হলেও মৌলভীবাজারে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
হাইল হাওরাঞ্চলের কৃষক মো. সুমন মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চলতি বছরে আমি ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছি। গত কয়েক বছর ফলন খুব একটা ভালো হয়নি। তবে এ বছর আলহামদুলিল্লাহ বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ২৬ মন ধান পেয়েছি। আমি খুবই খুশি। জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওর পাড়ের কৃষক ইলিয়াস মিয়া বলেন, গত বছর আমার জমিতে আমন ধানের প্রায় অর্ধেকই চোছা (নষ্ট) হয়ে যায়। এবারও আশঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু আমার ৩০ বিঘা জমিতে আশাতীত ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে আমার জমির ধান কাটা শেষ পর্যায়ে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের টিকরিয়া কপালীপাড়ার কৃষক সুবিনয় কপালী, বাবুল কপালী, ধনঞ্জন কপালী বলেন, আমরা আমাদের জমিতে গত বছরের চেয়ে এ বছর অনেক বেশি ধান পেয়েছি। আমরা খুবই খুশি। তবে এবার ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একজন শ্রমিককে ৭০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। তবে তাতেও আমরা এবার লাভবান হবো প্রত্যাশা করছি।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবং সময়মতো বীজ ও সার পাওয়ায় মৌলভীবাজারে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাামন্য কিছু কাটা বাকি আছে। এবার মৌলভীবাজার জেলায় রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক অর্থাৎ অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ১৮০ হেক্টর। এ বছর গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ২.৭৯ মেট্রিক টন চাল। সাম্ভাব্য ফলন প্রত্যাশা করছি ৩ লাখ ১ হাজার ৯১৮ মেট্রিক টন। বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক পরিবারে বইছে আনন্দের জোয়ার বইছে।