আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির নেতা জহিরুল আলম রুবেল (লাঙ্গল প্রতীক) -এর পক্ষে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাড়া না পাওয়ায় প্রচার-প্রচারণায় বেকাদায় পড়েছেন। ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।

ফলে ফুরফুরে অবস্থানে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন মাহমুদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় এবং নির্বাচনের মাঠে সরাসরি নৌকা না থাকায় স্থানীয় নেতারা তার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এখন মাঠে ময়দানে শুধু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে প্রচার প্রচারণায় তেমন কোনো ছাড়া ফেলতে পারেনি মহাজোটের প্রার্থী।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্র বাদে অন্যান্য প্রার্থীদেরকে তেমন দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রচার-প্রচারণা, পাড়া-মহল্লায় নেই কোনো নির্বাচনী আমেজ। মানিকগঞ্জ-১ আসনে শুধুমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বহর নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন এলাকায় এলাকায়। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

জানা গেছে, এ আসন থেকে দুইবারের সংসদ সদস্য এ. এম নাঈমুর রহমান দূর্জয়কে বাদ দিয়ে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার পর বেশ জমে উঠেছিল নির্বাচনী মাঠ। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পাড়া-মহল্লায়। এরমধ্যে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগিতে মানিকগঞ্জ-১ আসন জাতীয় পার্টির ভাগে পড়লে নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামকে এ আসন থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। জাতীয় পার্টির মোহা. জহিরুল আলম রুবেলকে এ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। এ আসনের জন্য একেবারেই নতুন মুখ তিনি। কোনো কোনো এলাকার ভোটাররা এখনো তাকে দেখেনি। একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ ছাড়া বাকী যে তিনজন রয়েছেন তারা সকলেই এ এলাকার জন্য অপরিচিত। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তেমন দেখা যাচ্ছে না তাদেরকে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, মানিকগঞ্জ-১ আসনে প্রধানমন্ত্রী নৌকার পরিবর্তে লাঙ্গল দিয়েছেন। তাই আমাদের নৌকার পক্ষেই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচনীয় এলাকায় ওয়ার্ড কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটির নেতাকর্মীদের কাজে লাগাতে পারলে এ আসন থেকে লাঙ্গল বিপুল ভোটে বিজয় হবে।

জাতীয় পাটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান সাঈদ বলেন, আমদের লাঙ্গলের প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনী এলাকার গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। এলাকাটি নতুন যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে নির্বাচনের যে কয়েকদিন বাকি আছে তা আমরা পুশিয়ে নিতে পারবো। আওয়ামী লীগের জেলা সেক্রেটারী এ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণার কাজ করছি। অন্যান্য উপজেলা নেতাদের সাথেও আমাদের আলাপ হয়েছে তারা সবাই লাঙ্গলের কাজ করবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়ে প্রচার-প্রচারণা করলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব।
ঘিওর উপজেলার বাঠইমুড়ি গ্রামের ভোটার বলেন, আমরা এতো দিন নৌকার কাজ করেছি এখন হঠাৎ করে লাঙ্গনের কথা শুনতেছি। কিন্তু আমরা কোনো দিন লাঙ্গলের প্রার্থীকে দেখিনি। এছাড়া আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীকেও ভোট চাইতে এলাকায় দেখছি না।

শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামের সুমন মিয়া বলেন, ঈগলের প্রার্থীও আওয়ামী লীগ দাবি করছেন। অপরদিকে লাঙ্গলের প্রার্থীও আওয়ামী লীগের মনোনীত মহাজোটের প্রার্থী দাবি করছেন। এখন আমরা কেনো দিকে যাবো।
বানিয়াজুরি গ্রামের নতুন ভোটার পাপ্পু বলেন, মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়ার পর নির্বাচনী আমেজ। একমাত্র স্বতন্ত্রী প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের পরেও জোটের প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীদেরকে মাঠে দেখা যাচ্ছেনা বলে তিনি জানান।

শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর এই তিন উপজেলা নিয়ে মানিকগঞ্জ-১ আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩৭ হাজার। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহারের পর এবারের নির্বাচনে এ আসনে যে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তারা হলেন, মোনায়েম খান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম (নোঙ্গর), মোহাম্মদ শাহজাহান খান গণফ্রন্ট (মাছ), মোহা. জহিরুল আলম রুবেল জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) এবং সালাউদ্দিন মাহমুদ স্বতন্ত্র (ঈগল)।