ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
দলীয় কতিপয় এমপির প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের দলের যারা ক্ষমতার দাপট দেখায়, মুখ বন্ধ করতে হবে

সংসদীয় এলাকা কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি নাকি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

আওয়ামী লীগের এখনো যারা ক্ষমতার দাপট দেখায় তাদের মুখ বন্ধ করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সংসদীয় এলাকা কারও বাপ দাদার সম্পত্তি কীনা সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, কিছু কিছু সহিংসতাও বেড়েছে।

একটা বিষয় দুঃখজনক ও নিন্দনীয় যে, দায়িত্বশীল নেতারা দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলেন। এমপি ছিল, মন্ত্রী ছিল, এমন লোকেরা এখনো ধমকের সুরে কথা বলে। এখনও ক্ষমতার দাপট যারা দেখায়, তাদের মুখ বন্ধ করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী পর্বে এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের কেউ যাতে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট না করে সে দিকে খেয়াল রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। তবে নির্বাচন হলে দেশে টুকটাক ঘটনা ঘটে বলেও মত তাঁর। কিছু লোকের কথাবার্তা শুনলে অবাক লাগার কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এরা কিসের জনপ্রতিনিধি? যারা বাজে কথা বলে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। যারা নষ্ট করবেন তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিলে আমরা অকুণ্ঠ সমর্থন জানাবো। এখানে কোনও প্রকার আপস করবো না।
দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের উদ্দেশ্যকে আমরা ব্যহত হতে দিতে পারি না। পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। অসুস্থ পরিবেশ যারাই সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে কোনও হেলাফেলা চলবে না। রোজ পত্রিকা খুললেই দেখি, ধমক দিচ্ছে। সংসদীয় এলাকা কারও বাপ দাদার সম্পত্তি নাকি? এলাকা জনগণের, জনগণকে ভোট দিতে হবে, ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে যারা বাধা দেবে তাদের প্রতিহত করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনও বিকল্প নেই। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুস্থ ও সুষ্ঠু করবে।

বিরোধী দল নির্বাচনের বাইরে থাকুক, আওয়ামী লীগ কখনোই তা চায়নি বলে এ সময় উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, অনেকেই (নির্বাচনে) এসেছেন। কিন্তু বিএনপিসহ যারা আসেননি, তারা আসলে নির্বাচনটা আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো, সেটা আমরা জানি। তারা নেই, তারপরও কিন্তু সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করেছিল, তারা না থাকলে সারা দেশে লোকজন থাকবে না এবং নির্বাচন উৎসবমুখর হবে না, ভোটার উপস্থিতি শূন্যের কোটায় যাবে। এরকম দুঃস্বপ্ন নিয়ে তারা আন্দোলন করে ব্যর্থ। এখন তারা সরকার কীভাবে ব্যর্থ হবে, ভোটার টার্নওভার কীভাবে কম হবে এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে না বলে নানান গল্প বলে যাচ্ছে।

দলীয় পোলিং এজেন্টদের দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এজেন্টরা অনেক সময় অকাজের হোতা হয়ে যায়। ভেতরে বসে দলের অতি দরদ দেখাতে গিয়ে নির্বাচনের শৃঙ্খলা নষ্ট করে। এমন এজেন্টের দরকার নেই। দলের সুনাম যেন থাকে, এমন এজেন্ট আমাদের দরকার।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্বপাদক বলেন, এবারের নির্বাচনটা আমরা খুব ভালোভাবে করতে চাই। নির্বাচন নিয়ে বদনাম নিতে চাই না। শেখ হাসিনা সত্যিকার অর্থে একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চান। তার ইচ্ছেকে সার্থক করতে হবে। সে ব্যাপারে পোলিং এজেন্টদের নিষ্ঠার সঙ্গে করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা খুবই কঠিন সময় অতিক্রম করছি। সারা বিশ্বই সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্ব সংকটের প্রভব-প্রতিক্রিয়া থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন আছে।

ইউক্রেন, সুদান ও মাধ্যপ্রাচ্য সংকটের কথা তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমরাও সংকটে আছি। দোষটা বড় বড় দেশগুলোর, কিন্তু দায় পড়ছে আমাদের উপর, শাস্তি পাচ্ছি আমরা। দেশে আমাদের গরীব মানুষরা সাফার করছে, প্রান্তিক মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বাজারে জিনিসপত্রের যে ঊর্ধ্বগতি, সেটা নিয়েও মানুষের দুঃখ-কষ্টের আবহ তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আমরা এই দায় এড়াতে পারি না। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে, ডলারে সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহনে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে।

সংকটেও সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা থাকায় নির্বাচন করতে হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, কেউ কেউ বলতে পারেন এ সংকট পার করে নির্বাচন করা উচিত। অবশ্যই উচিত নয়, কারণ আমাদের সংবিধান আছে, সাংবিধানিক নিয়ম আছে। নির্বাচন দিয়েই সংবিধান রক্ষা করতে হবে। নির্বাচন করতে হবে, এর কোনও বিকল্প নেই। নির্বাচন করতে হচ্ছে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন বানচাল করতে চায় মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ করে নয়, বানচাল করতে চায় সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে। এ সন্ত্রাস-সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

পৃথিবীর অনেক দেশের রাজনৈতিক দল নির্বাচন থেকে সরে যায় উল্লেখ করে কাদের বলেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য সহিংসতার প্রস্তুতি বিরল ঘটনা। বাংলাদেশে এটা হচ্ছে। নেতা নেই, রিমোট কন্ট্রোলে লিডারশিপ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি এখন রাজনীতি করছেন না, রাজনীতিটাকে ধ্বংস করছেন। দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। তার বাবা জিয়াউর রহমান এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আমরা হরতাল করেছি। কিন্তু বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস, বিকৃতি ও ব্যবস্থার উপর আঘাত করেছে। সে কারণে এটা আমরা চাই না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আমরা বাতিল করিনি, এটা করেছে বিচার বিভাগ। কাজেই এ ব্যবস্থা মরে গেছে, জীবিত করার প্রয়োজন নেই।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শপথ নিলেন অতিশী, মমতার পর দ্বিতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেল ভারত

শপথ নিলেন অতিশী, মমতার পর দ্বিতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেল ভারত

মালয়েশিয়ায় নাইট ক্লাবে স্ফূর্তি করতে গিয়ে আটক ৫ বাংলাদেশি

মালয়েশিয়ায় নাইট ক্লাবে স্ফূর্তি করতে গিয়ে আটক ৫ বাংলাদেশি

নতুন রেকর্ড সোনার দামে, ভরি ১৩৩০৫১ টাকা

নতুন রেকর্ড সোনার দামে, ভরি ১৩৩০৫১ টাকা

সিলেটে একদিনে বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু

সিলেটে একদিনে বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু

কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হক

কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হক

শেখ হাসিনা সকল দপ্তরের টাকা লুট করে আমানত খেয়ানত করেছে : নোয়াখালীতে শিবির সভাপতি

শেখ হাসিনা সকল দপ্তরের টাকা লুট করে আমানত খেয়ানত করেছে : নোয়াখালীতে শিবির সভাপতি

ইসলামী ছাত্র মজলিসের নির্বাচন সম্পন্ন--রায়হান সভাপতি ও ইমরান সেক্রেটারি নির্বাচিত

ইসলামী ছাত্র মজলিসের নির্বাচন সম্পন্ন--রায়হান সভাপতি ও ইমরান সেক্রেটারি নির্বাচিত

হাজীগঞ্জে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চিকিৎসাধীন কিশোরের মৃত্যু

হাজীগঞ্জে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চিকিৎসাধীন কিশোরের মৃত্যু

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই-ধর্ম উপদেষ্টা

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই-ধর্ম উপদেষ্টা

নয়ন মিয়ার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না : যুবদল সভাপতি মুন্না

নয়ন মিয়ার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না : যুবদল সভাপতি মুন্না

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার

একই কর্মস্থলে অর্ধ যুগ কাটিয়েছেন পিআইও রেজা, করেছেন প্রকল্পের টাকা হরিলুট

একই কর্মস্থলে অর্ধ যুগ কাটিয়েছেন পিআইও রেজা, করেছেন প্রকল্পের টাকা হরিলুট

আওয়ামীলীগ শাসনামলে যশোরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কোনো হদিস নেই

আওয়ামীলীগ শাসনামলে যশোরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কোনো হদিস নেই

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে  ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে