অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বাতাস
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
রাজধানীর ঢাকার বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। সারাবছরই ছোট-বড় ভবন নির্মাণ ও রাস্তা মেরামতের কাজ চলে এই ঢাকা শহরে। গত কয়েকবছরে ধরে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বিভিন্ন বড় প্রকল্পের পাশাপাশি ছোট ছোট প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রয়েছে। রাস্তা ও ভবন নির্মাণ বা মেরামতের সময় ধুলাবালি বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। অনেক সময় দেখা যায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় রেখেই কাজ করা হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ করা হলে সেই পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে না। একারণেও বাড়ছে বায়ূ দূষণের পরিমাণ।
ঢাকার আশেপাশের এক হাজারের বেশি ইটভাটা, এইসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা, কাঠ ব্যবহার করা হয়। ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা রয়েছে ঢাকার ভিতর ও আশপাশ এলাকায়। যেগুলো দূষণের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন নগরবাসী। রাজধানীতে এখনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে। এসব গাড়ি প্রতিনিয়তই ছাড়ছে কালো ধোয়া। একারণেও দূষিত হচ্ছে বাতাস। বাতাসে ধূলিকণা ও বর্জ্য পোড়ানোর কারণেও বাড়ছে দূষণ। এছাড়াও একস্থানে স্তুপ আকারে রাখা ময়লা আবর্জনা পোড়ানো হয় আগুন দিয়ে তাতে দূষণ বাড়ে বাতাসের।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) এ সময় ঢাকার স্কোর ছিল ২২৯। বাতাসের এ মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত শুক্রবার ঢাকার বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় প্রথম স্থানে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। ওই শহরের স্কোর ২৫১। দ্বিতীয় স্থানে আছে চীনের উহান, স্কোর ২৭২। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা, স্কোর ২৩৬। বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার।
বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এ লাইভ বা তাৎক্ষণিক একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। আইকিউএয়ারের দেওয়া তালিকায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। ঢাকার বাতাসে যতটা এই বস্তুকণা আছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদ-ের চেয়ে ৩৫ গুণের বেশি। বাতাসের এ অবস্থা থাকায় সবার জন্য পরামর্শ, বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
আইকিউএয়ারের মানদ- অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে দুর্যোগপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। ঢাকায় গত জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। জানুয়ারির মোট ৯ দিন রাজধানীর বাতাসের মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বায়ুদূষণের ভয়াবহতা থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষায় সতর্কতা বা অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করতে পরিবেশ অধিদফতরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কার্যকর করতে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর এ চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২২ মিলিয়নের অধিক লোকের আবাসনদাতা রাজধানী ঢাকা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন সূচকে পরিবেশগত মানদ-ে পিছিয়ে রয়েছে।
পৃথিবীর অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান সপ্তম। ঢাকা নগরীর বাতাস প্রায়শই বিশ্বে শীর্ষ দূষিত বাতাস হিসেবে চিহ্নিত হয় যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বেলা একটি জনস্বার্থে মামলা করে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর বিধি ১৩(৫) অনুযায়ী বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাস্থ্যগত বিবেচনায় অত্যন্ত ক্ষতিকর পর্যায়ে উপনীত হলে পরিবেশ অধিদফতর উপযুক্ত মাধ্যমে জনগণকে সতর্কীকরণ বার্তা প্রদান করবে এবং জনগণকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করবে। একই বিধিমালার বিধি ১৫ অনুযায়ী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এ কমিটির অন্যতম কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে কোনো শহর, অঞ্চল বা নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে উপনীত হলে উক্ত শহর, অঞ্চল বা স্থানে জনসাধারণের চলাচলের ওপর সতর্কতা আরোপের বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা ও বায়ুদূষণ সৃষ্টিকারী যেকোনো উৎসের চলাচল ও কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার নির্দেশনা প্রদান করা।
বুয়েটের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ঢাকা শহরে যে পরিমাণ বাস চলে তার সত্তর শতাংশেরই আয়ুষ্কাল শেষ। লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো চলছে, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মনযোগ নাই। ঢাকায় এখন কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার বাস চলছে কিন্তু সেসবের সত্তর শতাংশেরই কোনো অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নেই। অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল না থাকার অর্থ হলো যখন কোনও যানবাহন ভারী মেরামত না করার কারণে সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেলে সেগুলো ঠিকভাবে জ্বালানি পোড়াতে পারে না এবং তখন সেগুলোর ধোঁয়ার সাথে ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে