আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির এক দফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করেছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। শেষ দিকে এসে অসহযোগ আন্দোলন ও ভোট বর্জনের ডাকও দিয়েছিল দলগুলো। তাদের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বলে মনে করছেন এসব দলের নেতারা। তাদের চলমান আন্দোলনে এটিকেই বড় অর্জন হিসেবে দেখছে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো। যেহেতু জনগণ নির্বাচন বর্জন করেছে এবং জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়নি তাই এখন নতুন করে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকারবিরোধী দলগুলো। ইতোমধ্যে নির্বাচনের পর দুইদিন ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে। এদিকে আন্দোলনরত দলগুলোকে চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় ধন্যবাদ জানাতে এবং নতুন কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বৈঠকে জোটের নেতারা প্রাথমিকভাবে সরকার গঠনের দিনে এবং প্রথম সংসদ অধিবেশনের দিনে সচিবালয় ঘেরাও এবং সংসদ ভবন ঘেরাও কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এই মুর্হূতে কঠোর কোন কর্মসূচি দেওয়ার আগে গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনে আমরা ৯৫ শতাংশ সফল হয়েছি। জনগণ সচেতন হয়েছে, দেশের ভালমন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিলো, কোন কোন কেন্দ্রে কেউ ভোট দিতে যায়নি। শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরবে সময় কাটাচ্ছিল, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। কোন কোন কেন্দ্রে শুধু কুকুর ও বানর খেলাধুলা করছে এবং ছোট ছোট শিশুরা ভোট কস্টিং করেছে। হঠাৎ নির্বাচন সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে সিইসি বললেন ২৭ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে, পাশ থেকে সচিব বললো না স্যার ৪০ শতাংশ হয়েছে। ভোট শেষ হওয়ার পূর্বে এবং গণনা শেষ হওয়ার পূর্বে তিনি ও তার প্রিয় সচিব এই ধরনের ভবিষ্যবাণী কিভাবে করলেন। এখানে সরকারের একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকার অবৈধ। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। ৭ জানুয়ারি আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা কিভাবে ভোটারবিহীন একটা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করছে। এই নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখান করেছে, তারা বর্জন করেছে। তিনি বলেন, ভোটাররা যে কাজটি করেছেন তারা বিদ্যমান আওয়ামী লীগের এই একদলীয় বাকশাল সরকারকে বয়কট করেছে। দেশের মানুষ ভোট দিতে যায়নি। ভোট বর্জন করে জনগণ গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলগুলোর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই।
বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো সূত্রে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি দল ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হামলা, মামলা, গ্রেফতারের কারণে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘরছাড়া। এছাড়া হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিতে সরকারের মদদে গাড়ী-ট্রেনে আগুন দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হয়েছে। ফলে বিএনপিও কঠোর কোন আন্দোলনে যায়নি। তবে অসহযোগ ও ভোট বর্জনের কর্মসূচিতে দেশের মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে বলে মনে করেন এসব দলের নেতারা। তাদের মূল্যায়ণে বলা হয়, ৭ জানুয়ারির ভোটে ৯৭ শতাংশ ভোটার বর্জন করেছে। যদিও নির্বাচন কমিশন ৪০ শতাংশের বেশি ভোট কাস্ট দেখিয়েছে। কিন্তু ভোটের দিনে সারাদেশের কেন্দ্রগুলো বলছে ভিন্ন চিত্র।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শত ভয়-ভীতি, জেল-জুলুম নির্যাতন-প্রলোভন ও সরকারের সাড়াশি চাপ উপেক্ষা করে ভোট প্রদান না করার মাধ্যমে জনগণ এই নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৮ কোটি মানুষের দাবী এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের আহ্বান পরোয়া না করে পূর্ব নির্ধারিত ফলাফলের একদলীয় একতরফা ভোটার বর্জিত ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে মূলতঃ বিজয় হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত ভোট বর্জনকারী গণতন্ত্রকামী বীর জনতার। আর চরম কলংকিত অপদস্তমূলক লজ্জার পরাজয় ঘটেছে গণবিচ্ছিন্ন বেপরোয়া একনায়ক শেখ হাসিনা গংদের। তিনি বলেন, এই দিনটি অনন্তকাল একটি জঘন্য কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিনে ভোট বর্জন করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ আওয়ামী লীগকে লাল কার্ড দেখিয়েছে। ৭ জানুয়ারি গভীর রাত থেকে চুরি-ডাকাতি, জালভোট, শিশু কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরেফিরে বার বার জাল ভোট দিয়েও বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ % ভোটের ঘোষণা দিয়ে গণভবনের চাপে আবার এক ঘন্টা পরেই ৪০% এবং পরবর্তীতে আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানোর এই ভূয়া হাস্যকর নির্বাচন ভোটের ইতিহাসে কলংক তিলক উৎকীর্ণ করলো ‘ডামি’ সরকার।
রিজভী বলেন, ‘পাতানো ডামি’ নির্বাচনের ফাঁদে পা দেয়নি দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ। সারা দেশের ভোট কেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য।
এদিকে নির্বাচনের পর বিএনপির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনকে অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরাতো আন্দোলনে আছি। ধারাবাহিকভাবে আমরা গত ২৮ অক্টোবর থেকে প্রতিটি কর্মসূচি পালন করছি। আর আমরা ঘোষণা করছি, লাগাতারভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এই আন্দোলন যুগপৎ ধারায় আছে। আমরা মনে করি, যুগপৎ যদি কার্যকরভাবে পথে নামে তাহলে যেভাবে আপনারা চাচ্ছেন, সেভাবে সবাইকে একসঙ্গে ডাকা যাবে। আর আমরা যুগপৎ আন্দোলন করছি, আছি এবং কন্টিনিউ করতে চাই। পারলে এটাকে আরো সম্প্রসারিত করবো। তবে তার ধরন কেমন হবে, সেটা সবার সঙ্গে কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে আমরা ঠিক করবো।
এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জোট ও দলের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল বিকেলে গুলশানে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসময় তিনি আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় ধন্যবাদ জানান এবং আগামী দিনের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকের বিষয়ে ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, আমরা যারা লোভে পরিনি, টাকার কাছে বিক্রি হয়নি এবং ন্যায়ের পথে, জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি তাদেরকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমাদের ভোট বর্জনের আন্দোলন সফল হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমরা একসঙ্গে সরকার পতন আন্দোলন করতে চাই। এছাড়া সকলে মিলে এক প্লাটফর্মে আন্দোলন করা যায় কিনা সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, আমরা যে ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলাম সেটিতে সাড়া দিয়ে ৭ জানুয়ারি ৯৭ শতাংশ ভোটার ভোট বর্জন করেছে। এটি আমাদের একটি বিজয়। এজন্য আমাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে ডাকা হয়েছিল। কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, এই মুর্হূতে কঠোর কোন কর্মসূচি নিয়ে ভাবা হচ্ছে না, তবে গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই ভোট নিয়ে কি প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটি দেখার পর সকলের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঠিক করবে বিএনপি। ###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে
ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না
নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা