ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

তীব্র শৈত্যপ্রবাহে দেশ

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

পৌষের শেষে চার জেলায় শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে হিম হাওয়ায় কাঁপছে দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। বিভিন্ন এলাকায় গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্তও দেখা মেলেনি সূর্যের। ঘন কুয়াশা আর ঠাণ্ডা বাতাসে জবুথবু অবস্থা রাজধানীসহ উত্তরাঞ্চল জুড়ে। এদিন সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও তা গড়াতে পারে দুপুর পর্যন্তও। বিঘ্ন ঘটতে পারে বিমান, নৌ ও সড়কে যানবাহন চলাচলে। এছাড়া সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও দিনের তাপমাত্রা কমে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি চলতে পারে। আর বর্ধিত পাঁচদিনের পূর্বাভাসে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলি ও চুয়াডাঙ্গায়, ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় গতকাল শুক্রবার সকালে সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৬ শতাংশ। যা কিনা চলতি মৌসুমে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস, পটুয়াখালীতে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ফরিদপুরে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুড়িগ্রামে ১৩ দশমিক ৪ সেলসিয়াস ও রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৮ ডিগি।
বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসেবে চার জেলায় এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
তবে এই শৈত্যপ্রবাহের ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, শৈত্যপ্রবাহ যেটা আছে, আস্তে-আস্তে কমবে। কারণ তাপমাত্রা বাড়বে, দুই-এক দিনের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ কমে আসবে। তবে দিনের কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা আরো দুই-তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে, যার কারণে শীতের অনুভূতি থাকবে।
গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শেষ পৌষের কনকনে শীতে মাঘের অনুভূত হয়েছে। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা। ঘনকুয়াশা আর হীমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পাশাপাশি গবাদিপশুরাও শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষরা। শীতের মধ্যে কাজ করতে বের হয়ে কাজ না পেয়ে ও কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও শ্রমজীবীরা। একটু উষ্ণতার খোঁজে পথের পাশে খড়কুটো কুড়িয়ে আগুন জ্বেলে ঘিরে বসে থাকছেন হত-দরিদ্র মানুষজন। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় করছেন পুরোনো শীতবস্ত্রের মার্কেটে। সামর্থ্যবানরা দৌড়াচ্ছেন অভিজাত মার্কেট ও শপিংমলে। হালে তাই শীতবস্ত্রের কেনাবেচাও জমে উঠেছে। এ ছাড়া সমাজের দুস্থ মানুষজন একটি কম্বলের জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণের লম্বা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। এরপরও একটি বড় অংশ শীতবস্ত্রের বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। এ শীতে তারা নিদারুণ কষ্টে দিন-রাত পার করছেন। এদিকে তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। প্রতিদিনই ঠাণ্ডাজনিত কারণে অনেক শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
এ ছাড়া গত কয়েকদিন ধরে ঘনকুয়াশা আর তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। সূর্যের আলো ঠিক মত না পাওয়ায় বোরোর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও বীজতলা হলুদ ও ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে। বীজতলা বাঁচাতে উপরে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, বরিশাল, কুড়িগ্রাম, ফরিদপুর, শেরপুর, চাঁদপুর, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ ও গাইবান্ধা থেকে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদন-
আমাদের চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় গত ক’দিন দুপুরের পর সূর্যের দেখা মিলছে। দিনের বেলায় বাতি জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টি সীমা কমে যাওয়ায়, আবহাওয়া কার্যালয় থেকে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ। এ সময় দৃষ্টি সীমা ছিল ৯০০ মিটার। এদিন সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। দৃষ্টি সীমা ছিল ৫০০ মিটার। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নিকলী (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় জানুয়ারির মাঝামাঝি এসে এ সময়ে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। উপজেলায় বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল শুক্রবার শীতের তাপমাত্রা নেমে আসে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল নিকলী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাযায়, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নিকলীতে। হাওর খ্যাত নিকলীতে এখন বোর ধান আবাদের মৌসুম। এ অঞ্চলের কৃষকেরা হাওরে হাল চাষ, ধানের চারাগাছ উত্তলন, পানি সেচ এ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করে কৃষক পরিবারগুলোর। কিন্তু তীব্র শীতে জমিতে শ্রমিকরা ধানের চারাগাছ রোপন করতে পারছেনা। প্রচণ্ড শীতে হাওরের লোকজন অনেকটা বন্দী দশার মতো।
মোহরকোনা গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, হাওরের জমিতে বোর ধান রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করে রেখেছি কিন্তু শীত এবং বাতাসের কারণে জমিতে শ্রমিক যেতে চায়না।
ডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কদ্দুসের সাথে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্কুল হাওরের দুর্গম অঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা অতি শীতের কারণে স্কুলে আসতে পারছেনা। শিক্ষার্থীদের দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগব্যাধি। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বেড় হচ্ছেনা। নিকলী আবহাওয়া অফিস বলছে, শীতের তীব্রতা আগামীকাল শনিবার থেকেই এ উপজেলায় কমতে পারে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে রাজশাহী অঞ্চল। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ কমছে। গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে শৈত্যপ্রবাহের।
শীতের তীব্রতা বাড়ায় প্রভাব পড়েছে মানুষ, পশুপাখি, প্রকৃতি ও ফসলের ক্ষেতে। মানুষের জীবনমানে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। কয়েকদিন ধরে ঘনকুয়াশা আর তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। সূর্যের আলো ঠিক মত না পাওয়ায় বোরোর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও বীজতলা হলুদ ও ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে। বীজতলা বাঁচাতে উপরে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে এ অঞ্চলের বীজতলা উঁচুজমিতে হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মত পরিবেশ হয়নি। প্রতিদিনই তারা মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর রাখছেন এবং কৃষকদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ছিল গত বৃহস্পতিবার ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ৩ জানুয়ারি রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন তাপমাত্রার পারদ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে অবস্থান করলেও বাতাসের কারণে ঠাণ্ডা নামছে। এতে ঘরের বাইরে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারির এ সময়ে শীতের প্রকোপ বাড়ে। এখন শীতের প্রকোপ বেশি। আকাশে মেঘ ছিল। সেটা কেটে গেছে। এখন আর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায় সূর্যের দেখা মিলেছে দুপুর সোয়া ৩টার পরে। আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে চলতি জানুয়ারী মাসে বরিশালে সর্বনিম্ন স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ১১.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু পৌষের প্রায় শেষে এসে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় বরিশালে তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় ১১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। যা মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই ছিল ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মাত্র একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিকের নিচে নেমে মৌসুমের সর্বনিম্ন স্তরে পৌছেছে।
ফলে গতকাল সকাল থেকে অনেককেই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। জুমার নামাজের জামাতেও মুসুল্লীদের উপস্থিতি কিছুটা কম লক্ষ্যণীয় ছিল।
গতকাল সকালে বরিশাল বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে ১১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী দু’দিন দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধির কথা জানিয়ে ১৪ জানুয়ারীর পরবর্তী ৫ দিনে বৃষ্টি ও বজ্র বৃষ্টির সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা গত দুইদিনের চেয়ে তুলনামূলক কম।
ঠাণ্ডার প্রকোপে কুড়িগ্রামে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানান রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। শীতের রোগীর কারণে বাড়তি চাপ সামলাতে দেখা যায় হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের। শয্যা সঙ্কটে হাসপাতালের মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৭ জনসহ শিশু বিভাগে মোট ৬২ জন ও ডায়রিয়া বিভাগে নতুন ৩১ জনসহ মোট ৫৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতালের নার্স মোছা. জুলেখা বেগম বলেন, গত তিনদিনে হাসপাতালের শিশুবিভাগে আর ডায়রিয়া ওর্য়াডে নতুন অনেক রোগীর ভর্তি আছে। ঠাণ্ডার কারণে রোগ বাড়ায় আমাদের প্রতিদিন রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীনুর রহমান সরদার বলেন, এ জেলাটি হিমালয়ের কাছে অবস্থান হওয়ায় এখানে ঠাণ্ডার প্রকোপটা একটু বেশি। হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন অধিকাংশই চরাঞ্চলের মানুষ।
জেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ঘন কুয়াশার এ দাপট আরো ২-৩ দিন অব্যাহত থাকবে। যার ফলে সূর্যের দেখা পাওয়া কষ্টকর হবে। আগামী সপ্তাহে একটি মৃদু শৈত্য প্রবাহ দেখা দিতে পারে। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, ইতিমধ্যে জেলার ৯ উপজেলায় ৪২ হাজারের বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আপাতত আমাদের কাছে কোনো মজুত নেই, আমরা ৩০ হাজার কম্বল চাহিদা পাঠিয়েছি।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত শীতে কাবু ফরিদপুরবাসীও। শীত থেকে বাঁচতে গতকাল সকাল থেকে ভারী শীতবস্ত্র পরে বাড়ির বাহিরে যাচ্ছেন মানুষজন। তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে না নামলেও আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘন কুয়াশা ও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিক থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে হঠাৎ করে ফরিদপুরে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। গতকাল ফরিদপুরে জেলার তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফরিদপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন এ শীতের তীব্রতা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত বুধবার ভোর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত রাত ও সকালে ঘন কুয়াশায় এই জনপদের সামান্য দূরের জিনিসও ঝাঁপসা দেখাচ্ছিল। দিন বড়ার সাথে সাথে কুয়াশা কমলেও সন্ধা থেকে আবারো কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে গোটা শেরপুর ও গারো পাহাড়ি জনপদ। শেরপুর জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, শীত মোকাবেলায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা- উপজেলা প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পৌষের শুরুর শীত কাটিয়ে শেষের দিকে এসে তীব্রতা বেড়েছে, সাথে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশা। আর শীত বাড়ার সাথে সাথে ফুটপাতে চলছে শীতবস্ত্রের জমজমাট বেচাকেনা। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষসহ প্রায় সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ফুটপাত বাজারগুলো থেকে শীতের কাপড় কিনছে। ফলে ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতের পোশাক বিক্রির ধুম পড়েছে।
শীতের পোশাকের মধ্যে ক্রেতাদের পছন্দের মধ্যে রয়েছে, সামনের দিকে চেইন বা বোতাম দেয়া সোয়েটার বা জ্যাকেট, গোল গলা, ভি গলা, চিকন কলারের সোয়েটার, টি-শার্ট, কাপড়ের জুতা, জ্যাকেট, ব্লেজার ইত্যাদি। আরো ছিল কাটুন চরিত্রের বাচ্চাদের বিভিন্ন টুপি। বাহারী কাজ ও ডিজাইনের শালের কালেকশন ও লক্ষণীয়। এছাড়া বিভিন্ন রকমের কম্বল ও কাথাও বিক্রি করতে দেখা যায়। উপজেলা সদরে প্রেসক্লাব চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, নয়ারহাট বাজার, রূপসা বাজার, গৃদকালিন্দিয়া বাজার, ধানুয়া বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত ও মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে শীতবস্ত্র বেচাকেনা জমজমাট।
হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দিনাজপুর জেলা ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের প্রকোপকে। তারপরেও প্রয়োজনের তাগিদে বাড়ি থেকে বের হতে যাচ্ছে মানুষকে। ট্রেনসহ যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। কুয়াশার কারণে জ¦ালাতে হচ্ছে হেডলাইট। শীত উপেক্ষা করে মানুষ ছুটছে তাদের গন্তব্যে। ভির করছে ট্রেন ও স্টেশনসহ বাস স্টান্ডে। ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসে থাকলেও মিলছে না কাঙ্খিত ক্রেতা। বেশি দুর্ভোগে পড়েছে বয়স্ক মানুষেরা।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কনকনে ঠাণ্ডার সঙ্গে বেড়েছে হিম বাতাস। সকাল গড়িয়ে বেলা বাড়লেও ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে গ্রামীন জনপদ। আজ সকাল নয়টায় জেলায় সর্বনিম্ন ১১.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপামাত্রা রেকর্ড করেছে খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিস।
স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর থেকে জানান, মাদারীপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, গত এক বছরের মধ্যে আজ শুক্রবার সবচেয়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে, গত শুক্রবার তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আরো কমতে পারে বলে তিনি মনে করেন তিনি।
গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গফরগাঁও উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে গত কয়েকদিনে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শুরুতেই এই তীব্রতা অনেক বেশী বলে বয়স্ক লোকেরা মন্তব্য করেন। গত ৪-৫দিন যাবত ঘন কুয়াশার আচ্ছন্নে প্রকৃতি ঢাকা পড়ে। সূর্য হয়ে পড়ে অদৃশ্য। প্রায়ই সারাদিনেই এই অবস্থা চলতে থাকে। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলে দেখা দিয়েছে মহাসমস্যা ও সেই সাথে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো শীতের হিমেল হাওয়ার কনকনে ঠাণ্ডায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। সূর্যের দেখা মিলেনি সপ্তাহ জুড়ে। শীত বস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানে উপচে পড়া ভীর পরিলক্ষিত হচ্ছে।
উপজেলার তারাপুর বেলকা, হরিপুর, শ্রীপুর, চন্ডিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার চরাঞ্চলের অসহায় পরিবারগুলো নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। শীতের কারণে নানাবিধ রোগব্যধির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো চাহিদা পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ পেলে বিতরণ করা হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান