ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানিতে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান তেলআবিবের গাজায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার : আহত ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে

গণহত্যাকে ‘মিথ্যা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে’ ইসরাইল

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে পেশ করা গণহত্যার মামলাটি ইসরাইল ‘মিথ্যা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে’।
আইসিজে-তে ইসরাইলের প্রতিরক্ষার পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া রোনাল্ড লামোলা হেগে সাংবাদিকদের বলেছেন : ‘ইসরাইলের নাগরিকদের জন্য যত বড় হুমকিই হোক না কেন ফিলিস্তিন এবং গাজার গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু ব্যক্তি যা করেছে তা বিবেচ্য নয়। হতে পারে, গোটা গাজায় গণহত্যার আক্রমণ ... তাদের ধ্বংস করার অভিপ্রায় কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না’।

‘আমরা বিশ্বাস করি এবং অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী রয়েছি যে, এসব তথ্য এখনও (জেনোসাইড কনভেনশন) লঙ্ঘন করছে’, তিনি যোগ করেছেন। ইসরাইল বৃহস্পতিবার গাজায় তার যুদ্ধের জন্য একটি বিরল জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, বোমাবর্ষণ এবং ছিটমহল অবরোধসহ ইসরাইলের ক্রিয়াকলাপ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিপ্রায় দেখিয়েছে। ইসরাইল দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি’ বলে গতকাল তার খণ্ডন উপস্থাপন করেছে। ইসরাইলি প্রতিনিধি দল তিন ঘণ্টা স্থায়ী বৃহস্পতিবারের শুনানিতে অংশ নিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা আবেদনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলেন যেন আদালত মামলা চলাকালীন গাজায় আরো সহিংসতা প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এদিকে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলা অবস্থাতেও গাজার ওপর ইসরাইলি বর্বরতা থামেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৫১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৪৮ জন আহত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২৩ হাজার ৭০৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬০ হাজার ৫ জন আহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। প্রায় ৭ হাজার জন ধ্বংসস্তূপের নীচে নিখোঁজ এবং মৃত বলে অনুমান করা হয়েছে, তবে সরকারি মৃতের সংখ্যার অংশ হিসাবে গণনা করা হয়নি।

গাজায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু এবং বাস্তুচ্যুতি, ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা, বিপর্যয়কর মানবিক সংকট এবং ইসরাইলি কর্মকর্তাদের আহ্বানের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা দেশটির উপস্থাপনার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীদের একজন আদিলা হাসিম বলেন, ‘এ আদালতের আদেশ ছাড়া কোনো কিছুই দুর্ভোগ থামাতে পারবে না।
ইসরাইলের সহিংসতা বন্ধ করার বিশ্বব্যাপী আহ্বান জাতিসংঘে স্থবির হয়ে পড়েছে। ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির দাবি বন্ধ করে দিয়েছে এ যুক্তিতে যে, এটি হামাসকে শক্তিশালী করবে। বাইডেন প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যা ফাইলিংকে ‘যোগ্যতাহীন’ বলেও খারিজ করেছে।
শুনানির প্রাক্কালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইংরেজিতে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগকে খণ্ডন করার লক্ষ্যে উপস্থিত হয়। তাতে বলা হয়, ইসরাইলের ‘স্থায়ীভাবে গাজা দখল করার কোনো ইচ্ছা নেই’ এবং দেশটি ‘হামাস সন্ত্রাসীদের সাথে লড়াই করছে, ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা নয়’।

আইনি পণ্ডিতরা বলেছেন, কিন্তু বৃহস্পতিবারের যুগান্তকারী মামলাটি গাজা যুদ্ধের আলোচনাকে একটি নতুন আন্তর্জাতিক ফোরামে ঠেলে দিয়েছে, যেটি ইসরাইলকে নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে উপস্থাপন করে। যদিও ইসরাইলের ক্রিয়াকলাপ গণহত্যার সমান কিনা সে বিষয়ে যে কোনো রায় দিতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে, আদালত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা’ নিয়ে রায় দিতে পারে এবং ইসরাইলকে তার যুদ্ধের আচরণ পরিবর্তন করার আদেশ দিতে পারে, তারা বলেছেন।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ দ্য ফ্রেজার ভ্যালির সহকারী অধ্যাপক মার্ক কার্স্টেন, যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধের তদন্ত এবং বিচারের বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের উপর একটি বই লিখেছেন, বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার অস্থায়ী পদক্ষেপের আহ্বান আপাতত প্রতিরোধের দিকে মনোযোগ দেয়।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমি মনে করি, গণহত্যা প্রতিরোধ করা এই দায়িত্ব, যেখানে এটি ঘটার একটি গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে, এমনকি যখন গণহত্যা হয়েছে এমন কোনো সংকল্প নেই’। ‘যদি ঝুঁকি বিদ্যমান থাকে, তাহলে এটি প্রতিরোধ করার বাধ্যবাধকতা বিদ্যমান’।

১৯৪৮ সালের একটি কনভেনশন, হলোকাস্টের পরে অনুসমর্থিত, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গণহত্যাকে একটি অপরাধ করে এবং আইসিজে-কে রাষ্ট্রগুলো এটি করেছে কিনা তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছে। আদালতের রায় আইনত বাধ্যতামূলক, কিন্তু উপেক্ষা করা যেতে পারে। রাশিয়া, উদাহরণস্বরূপ, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ২০২২ সালের আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বৃহস্পতিবার আদালতের বাইরে, কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিপন্থী এবং মুষ্টিমেয় ইসরাইলপন্থী বিক্ষোভকারী কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পতাকা নেড়ে সেøাগান দেন। ২৯ বছর বয়সী দাগমার বোসমা প্যালেস্টাইনপন্থী দলগুলোর জোট নিয়ে আদালতে আসেন।

তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’। ‘যা ঘটছে তা চিনতে একজন নিপীড়িত মানুষের প্রয়োজন, আমি মনে করি, তাই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞ’।
কাছাকাছি, ইসরাইলপন্থী বিক্ষোভকারীদের একটি ছোট দল হামাসের হাতে জিম্মিদের ছবি ধারণ করে ইসরাইলি পতাকা নেড়েছে। ৫৮ বছর বয়সী জুডিথ ডি জঙ্গে বলেন, ‘আমি এখানে ইসরাইলকে সমর্থন করতে এসেছি’। ‘আমি মনে করি, এটা লজ্জাজনক যে, দক্ষিণ আফ্রিকা এ মামলা শুরু করেছে’।

দক্ষিণ আফ্রিকা, যার বর্ণবাদ-পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের উগ্র মিত্র, গত মাসে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তারপর থেকে, ২২-সদস্যের আরব লীগ এবং ৫৭-সদস্যের অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনসহ কমপক্ষে ১৩টি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার জেরুজালেমে কেনাকাটা করা ২৮ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি হেবা কারাইন বলেছেন যে, তিনি সন্দিহান যে, আদালতের মামলা কোনো ফলাফল দেবে। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট ও আল-জাজিরা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান